ঈদুল ফিতরের পর থেকেই চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে আসছে একের পর এক গরু চুরির খবর। সপ্তাহ দুই আগে মিরসরাই থেকে যাত্রীবাহী বাসে করে গরু চুরির ঘটনা আলোড়ন তোলে দেশব্যাপী। ইতোমধ্যেই গরু চুরি নিয়ে হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন খোদ জেলা প্রশাসক। তবুও চোর শুনছে না আইনের বাণী।
Advertisement
গত এক মাসে জেলার বোয়ালখালী, হাটহাজারী, মিরসরাই ও সাতকানিয়াসহ বিভিন্ন উপজেলায় প্রায় অর্ধশত গরু চুরির ঘটনা ঘটেছে। গরু চুরি বেড়ে যাওয়ায় খামারি ও কৃষকেরা উদ্বেগের মধ্যে রয়েছেন। চুরি ঠেকাতে অনেক এলাকায় রাত জেগে খামার ও গোয়ালঘর পাহারা দেয়া হচ্ছে।
খামারিরা জানান, গ্রাম মহল্লায় কিছুদিন ধরে ব্যাপক হারে গরু চুরি হচ্ছে। কোরবানি ঈদ সামনে রেখে চোরেরা প্রায় রাতেই কোনো না কোনো বাড়িতে হানা দিচ্ছে। গরু চুরি করতে এসে এলাকাবাসীর হাতে গণপিটুনির শিকারও হয়েছে এক গরুচোর।
আরও পড়ুন>> চুরি করা গরু বিক্রি করতে এসে ধরা ১০ চোর
Advertisement
সর্বশেষ গত ৩০ জুন লোহাগাড়া উপজেলার বড়হাতিয়া ইউনিয়নের হরিদাঘোনা এলাকা থেকে গরু চুরি করে বাজারে বিক্রি করতে নিয়ে যাওয়ার পথে, দুই চোরকে আটক করে গণপিটুনি দেয়া হয়। পরে তাদেরকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়া হয়।
শুধু লোহাগাড়া নয়, গত ২০ দিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলা থেকে অন্তত ১৫টি গরু চুরির ঘটনার কথা জানতে পেরেছে জাগো নিউজের এ প্রতিবেদক। এসব ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন জনপ্রতিনিধিরাও।
লোহাগাড়ায় গরু চুরি করে বাজারে নিয়ে যাওয়ার পথে আটক চোর।
গত ২৪ জুন গভীর রাতে সীতাকুণ্ড উপজেলার ছোট দারোগারহাট গ্রামে ডা. আনোয়ার হোসেনের গোয়ালঘর থেকে চারটি বড় গরু ও একটি বাছুর চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার কয়েকদিন আগে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যানের বাড়ি থেকেও দুটি গরু চুরির ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় থানায় সাধারণ গায়েরিও (জিডি) হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে উপজেলার মাসিক আইনশৃঙ্খলা সভায়ও উদ্বেগ প্রকাশ করেন জনপ্রতিনিধিরা।
Advertisement
আরও পড়ুন>> গরু চুরি করতে গিয়ে ইউপি সদস্য ধরা
উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান মো. আলাউদ্দিন ছাবেরী বলেন, আমার বাড়ি থেকেও গরু চুরি হয়েছে। চোরেরা দুটি বড় গাভী নিয়ে গেছে। গাভীগুলো দৈনিক ৩০ লিটারের বেশি দুধ দিতো। আনুমানিক ৪ লাখ টাকা মূল্যের এই গরু চুরির ঘটনায় থানায় জিডিও করেছি।
সীতাকুণ্ড থানার ওসি (ইন্টেলিজেন্স) সুমন বণিক বলেন, গরু চুরির বিষয়টি অনেকে আইনশৃঙ্খলা সভায় তুলেছেন। গরু চোর ধরার ব্যাপারে আমাদের একটি বিশেষ দল কাজ করছে। আশা করছি এখন থেকে গরু চুরির ঘটনা কমবে।
এদিকে গত ১১ জুন দিবাগত রাতে লোহাগাড়া উপজেলার উত্তর কলাউজান ধোপিপাড়া রতন মহাজনের বাড়ি থেকে দুই পরিবারের চারটি গরু চুরি হয়। ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সদস্যরা জানান, চুরি হওয়া চারটি গরুর মূল্য প্রায় দুই লাখ টাকা।
আরও পড়ুন>> পাহারাদারকে বেঁধে রেখে মন্ত্রীর খামারের ১০ গরু চুরি
এরপর ১৭ জুন বোয়ালখালী উপজেলার সারোয়াতলী কঞ্জুরী গ্রামের এক গোয়ালঘর থেকে চুরি হয় ৫টি গরু। গরুর মালিক সৌম্যজিৎ মজুমদার জানান, রাতে গোয়ালঘর থেকে ৪টি উন্নত জাতের গাভী ও ১টি ষাঁড় নিয়ে যায় চোরের দল, যার আনুমানিক বাজার মূল্য সাড়ে ৩ লাখ টাকা।
এ ব্যাপারে চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ ইলিয়াস হোসেন বলেন, চট্টগ্রামের পটিয়াসহ বেশ কয়েকটি জায়গায় গরু চুরির ঘটনা ঘটছে। আমি গতবছরও একই কথাগুলো শুনেছিলাম। কিন্তু গরু চুরির বিষয়ে কোনো সুরহা হয়নি।গরু চোরদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। অনেকে আছেন শুধুমাত্র একটি গরু দিয়ে সংসার চালান। তাদের গরু যদি চুরি হয়ে যায় তাহলে তাদের সংসার চলবে কী করে? এসব গরু চোরদের কয়েকটি চক্র থাকে। এসব চক্রের মধ্যে যদি কয়েকটি চক্রকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা যায় তাহলে বাকিরা আর চুরি করার সাহস পাবে না।
আবু আজাদ/এমএসএইচ/পিআর