দুই দশকের ব্যবধানটা তৈরি হয়েছিল ৩১ মে, ২০১৯ তারিখে। সেই দিন থেকে আরও একমাস ৪দিন বেশি সময় পেরিয়ে গেছে। অবশেষে বিশ্বকাপে আবারও মুখোমুখি হচ্ছে এশিয়ার দুটি দেশ- বাংলাদেশ এবং পাকিস্তান। ২০ বছর আগে নর্দাম্পটনের কাউন্টি গ্রাউন্ডে যে ইতিহাস রচনা করেছিল বাংলাদেশ, দুই দশক পর আবারও সেই ইতিহাসের দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে টাইগাররা, সেই ইংল্যান্ডের মাটিতেই। তবে এবার লর্ডসে।
Advertisement
২০ বছর আগের বাংলাদেশ আর এখনকার বাংলাদেশের মধ্যে অনেক তফাৎ। এমনকি দুই দশকে পাকিস্তানের দুই দলের মধ্যেও ব্যাপক পার্থক্য। শুধু কারও সুচক উদ্ধমুখি আবার কারও সুচক নিম্নমুখি।
সেবার গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে বাংলাদেশের মুখোমুখি হওয়ার আগেই তখনকার প্রবল প্রতাপশালী পাকিস্তান দলটি সুপার সিক্স নিশ্চিত করে ফেলেছিল। যারা শেষ পর্যন্ত ফাইনালও খেলেছিল সেবার। কিন্তু এবারের পাকিস্তান দলটির অবস্থা তথৈবচ। আনপ্রেডিক্টেবল ট্যাগ নিয়ে কয়েকটা ম্যাচ জিতে ফেলেছে।
তবে, সেমির যোগ্যতাও তারা অর্জন করতে পারছে না। এমনকি এই দলটি নিয়ে ঘরে বাইরে চলছে ব্যাপক সমালোচনা। পাকিস্তানি সমর্থকরা তো এই দলটিকে নিষিদ্ধ করার জন্য আদালতের দ্বারস্থ পর্যন্ত হয়েছে।
Advertisement
দুই দশক আগে বিশ্বকাপে বাংলাদেশ খেলতে গিয়েছল প্রথমবার। ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি জয় করে বিশ্বকাপে প্রথম খেলার যোগ্যতা অর্জন করে টাইগাররা। সেবার গ্রুপ পর্বে বাংলাদেশকে মুখোমুখি হতে হয়েছিল অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, পাকিস্তান এবং স্কটল্যান্ডের।
গ্রুপ পর্বে ৫ ম্যাচ খেলে দুটিতেই জয় পেয়েছিল টাইগাররা। একটিতে জয় ছিল প্রত্যাশিত। স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে। অন্যটি ছিল অপ্রত্যাশিত। আগেই গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন হয়ে বসেছিল পাকিস্তান। শেষ ম্যাচটিকে তাই তারা খুব একটা গুরুত্বও যে দিয়েছিল তা নয় নয়।
কিন্তু তাই বলে যে তারা দুর্বল দল বাংলাদেশের বিপক্ষে মাঠে নামিয়েছিল সেটাও কিন্তু নয়। ওয়াসিম আকরামের নেতৃত্বে পূর্ণ শক্তির পাকিস্তান সেদিন মাঠে নেমেছিল এবং টস জিতে বাংলাদেশকে পাঠিয়েছিল ব্যাটিংয়ে। ওয়াসিম আকরামের লক্ষ্য ছিল অল্প রানের মধ্যে বাংলাদেশকে বেধে ফেলা।
টস হেরে ব্যাট করতে নেমে শুরুতেই দুই ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুৎ আর মেহরাব হোসেন অপি মিলে গড়ে ফেলেন ৬৯ রানের জুটি। এ সময় ৪২ বল খেলা মেহরাব হোসেন অপি ফিরে যান মাত্র ৯ রান করে। ওয়ান ডাউনে নামা আকরাম খানের সঙ্গে জুটি বাধা হয়নি অপর ওপেনার শাহরিয়ার হোসেন বিদ্যুতেরও। কারণ, ৭০ রানের মাথায় আউট হয়ে যান তিনি।
Advertisement
এরপর আকরাম খান এবং আমিনুল ইসলাম বুলবুল গড়েন ৫০ রানের জুটি। বুলবুল ১৫ রান করে আফ্রিদির বলে বোল্ড হয়ে যান। ৬৬ বলে ৪২ রান করে আউট হন আকরাম খান। তার উইকেট নেন ওয়াকার ইউনুস। নাঈমুর রহমান দুর্জয় করেন ১৩ রান। মিনহাজুল আবেদিন নান্নুও বেশি কিছু করতে পারেননি। তার ব্যাট থেকে এলো কেবল ১৪ রান।
শেষ দিকে মাঠে নেমে দারুণ দৃঢ়তা দেখান খালেদ মাহমুদ সুজন। ৩৪ বল খেলে তিনি করেন ২৭ রান। খালেদ মাসুদ পাইলট অপরাহিত থেকে যান ১৫ রানে। শেষ পর্যন্ত নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৯ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশের সংগ্রহ দাঁড়ায় ২২৩ রান।
মামুলি সংগ্রহ। অথচ সেই সংগ্রহ তাড়া করতে নেমে শুরু থেকেই বিপর্যয়ের মুখে পাকিস্তান। সাঈদ আনোয়ার ৯, শহিদ আফ্রিদি ২, ইজাজ আহমেদ শূন্য, ইনজামাম-উল হক ৭ এবং সেলিম মালিক আউট হয়ে যান ৫ রান করে। ৪২ রানে ৫ উইকেট হারিয়ে দারুণভাবে ধুঁকতে শুরু করে ওয়াসিম আকরামের দল।
শেষে আজহার মেহমুদ, ওয়াসিম আকরাম মিলে কিছুক্ষণ ধরে রাখার চেষ্টা করেছিলেন। দু’জনই করেন ২৯ রান করে। শেষ পর্যন্ত ৪৪.৩ ওভারেই ১৬১ রানে অলআউট পাকিস্তান। দুর্দান্ত বোলিং করে সেদিন খালেদ মাহমুদ সুজন পেয়েছিলেন ৩ উইকেট। ২৭ রানের সঙ্গে ৩ উইকেট, ম্যাচ সেরার পুরস্কারটাও উঠলো সুজনের হাতে।
নর্দাম্পটনে সেদিন বাংলাদেশ ক্রিকেটের মূল বিজয়ের সূচনা হয়েছিল। এরপরই বাংলাদেশ অর্জন করে ওয়ানডে মর্যাদা এবং পরের বছর অর্জন করে টেস্ট খেলার মর্যাদা। ২০০০ সালের নভেম্বরে টেস্টের সূচনাও করে ফেলে টাইগাররা। এরপর কেবলই এগিয়ে যাওয়া।
২০১৫ বিশ্বকাপ পর্যন্ত মাঝে-মধ্যে সাফল্য ধরা দিত বাংলাদেশের ক্রিকেটারদের হাতে। কিন্তু ২০১৫ বিশ্বকাপের পর থেকে এখন ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশ পরিণত হয়েছে বড় দলে। নিয়মিতই সাফল্যের দেখা মিলছে।
সেই ধারাবাহিকতায় এবং ১৯৯৯ বিশ্বকাপের অনুপ্রেরণায় এবারও লর্ডসে পাকিস্তান বধ করতে চায় বাংলাদেশ। কাকতালীয় বিষয় হচ্ছে, ১৯৯৯ সালেও ছিল গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ। এবারও বাংলাদেশ-পাকিস্তান খেলছে গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচ। দেখা যাক, ২০ বছরে আগে বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে গড়া রেকর্ডটা এবারও অটুট রাখতে পারে কি না বাংলাদেশ।
আইএইচএস/এমএস