সুমেরুর খেঁকশিয়াল (আর্কটিক ফক্স)। নরওয়ে থেকে ২,০০০ মাইল (৩,৫০০ কিলোমিটার) পথ পাড়ি দিয়ে পৌঁছেছে কানাডায়।
Advertisement
প্রাণী বিজ্ঞানীদের একাংশের দাবি, খেঁকশিয়ালটি দীর্ঘতম পথ পরিক্রমায় স্তন্যপায়ী প্রাণীদের মধ্যে নতুন রেকর্ড গড়ল। সাড়ে ৩ হাজার কিলোমিটার পথ পেরোতে তার লেগেছে ৭৬ দিন।
গত মাসেই সুমেরু অঞ্চল থেকে কয়েকশো কিলোমিটার পথ উজিয়ে রাশিয়ার শিল্পশহর নরিলক্সে হাজির হয়েছিল একটি স্ত্রী পোলার বিয়ার। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে সুমেরু অঞ্চলে খাদ্যের টান পড়াতেই সেখানকার প্রাণীরা পরিযায়ী হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে বলে প্রাণী বিজ্ঞানীরা মনে করছেন।
সুমেরু খেঁকশিয়ালের উপকূলীয় উপ-প্রজাতির ওই স্ত্রী খেঁকশিয়ালটির দেহে ২০১৭ সালের জুলাই মাসে ‘স্যাটেলাইট ট্র্যাকিং চিপস’ বসিয়েছিলেন ‘নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের গবেষকরা।
Advertisement
উপগ্রহ চিত্রে দেখা যাচ্ছে, গত ২৬ মার্চ নরওয়ের স্ভ্যালবার্ড দ্বীপপুঞ্জের স্পিটবার্জেন শহর থেকে যাত্রা শুরু করেছিল খেঁকশিয়ালটি। বাহক ছিল সমুদ্র জমাট বাঁধা একটি বিশাল হিমশৈল। ২১ দিনে ১,৫১২ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিয়ে গ্রিনল্যান্ডের উপকূলে পৌঁছায় প্রাণীটি। ১৬ এপ্রিল থেকে শুরু হয় পদব্রজে যাত্রা।
‘নরওয়েজিয়ান পোলার ইনস্টিটিউটের গবেষক ইভা ফুগলেই বলেন, ‘১ জুলাই কানাডার এলিসমেয়ার দ্বীপের কাছে ওই খেঁকশিয়ালটির উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়।’
তাঁর দাবি, তুষারক্ষেত্র, হিমবাহের উপর দিয়ে এমন দীর্ঘ পরিযাণের রেকর্ড নেই কোনও স্তন্যপায়ী প্রাণীর।
উপগ্রহচিত্র থেকে পাওয়া তথ্য বলছে, প্রতিদিন গড়ে ৪৬.৩ কিলোমিটার পথ হেঁটেছে ওই স্ত্রী খেঁকশিয়ালটি।
Advertisement
তবে জিপিএস ট্র্যাকার জানাচ্ছে, উত্তর গ্রিনল্যান্ডের চরম প্রতিকূল আবহাওয়ার কবলে পড়ে একদিনে প্রায় ১৫৫ কিলোমিটার হেঁটেছিল খেঁকশিয়ালটি।
ইভার দাবি, গড়ে মাত্র সাড়ে ৭ কিলোগ্রাম ওজন হলেও মেরুর খেঁকশিয়ালরা হিমাঙ্কের ৫০ ডিগ্রি সেলসিয়াস নিচের তাপমাত্রাতেও খাপ খাইয়ে নিতে পারে। তাই বিস্তীর্ণ তুষারক্ষেত্র পাড়ি দিয়েও এখনও বেশ সুস্থ-সবল রয়েছে প্রাণীটি।
ইভা এবং তার সহ-বিজ্ঞানীদের গবেষণাপত্রে দাবি করা হয়, সুমেরীয় খেঁকশিয়ালদের ক্ষেত্রে এটি দ্রুততম পরিযাণের রেকর্ড। তবে শুধু খাদ্য বা আশ্রয়ের সন্ধান নয়, প্রজননের সঙ্গী খোঁজার জন্যও সুমেরুর খেঁকশিয়ালরা পরিযায়ী হয় বলে তাদের দাবি।
নরওয়ের পরিবেশ ও জলবায়ুবিষয়ক মন্ত্রী ওলা এলভেস্টল পোলার ইনস্টিটিউটের গবেষকদের স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেন, ‘সমুদ্রে জমা বরফ যে প্রাণীদের যাতাযাতের জন্য কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা ফের প্রমাণিত হলো।’
জেডএ/এমএস