জাগো নিউজের পাঠকরা নিশ্চয়ই আগেই জেনে গেছেন আজ লর্ডসে প্র্যাকটিস করেননি মাশরাফি বিন মর্তুজা। বোলিং, ব্যাটিং, ফিল্ডিং আর ক্যাচিং- কোনো প্র্যাকটিস কার্যক্রমেই তার দেখা মেলেনি। তবে তিনি টিমবাসে করে হোটেল থেকে দলের সঙ্গে এসে ড্রেসিং রুমেই বসেছিলেন। সেটাই শেষ নয়। আরও খবরও নিশ্চয়ই এতক্ষণে চাউর হয়ে গেছে- বাংলাদেশ ক্যাপ্টেন ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে ম্যাচের আগে আনুষ্ঠানিক সংবাদ সম্মেলনেও আসেননি।
Advertisement
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের শেষ ম্যাচ; তাও পুরনো প্রতিদ্বন্দ্বী পাকিস্তানের বিপক্ষে, সবচেয়ে বড় কথা, বিশ্বকাপে মাশরাফিরও এটাই শেষবার মাঠে নামা। টস করা, বল হাতে নেয়া সবই হয়ত শেষ। এমন এক ঐতিহাসিক ম্যাচের আগে সবাই অপেক্ষায় ছিলেন মাশরাফি আসবেন। অনেক আবেগতাড়িত সংলাপ হবে। একটা অন্যরকম প্রেস মিট হবে। যার পরতে পরতে থাকবে আবেগ জড়ানো।
১৮ বছর আগে যার ক্যারিয়ার শুরু, ২০০৩ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ আফ্রিকার ডারবানের কিংসমিডে যিনি বিশ্বকাপে লাল-সবুজ জার্সি গায়ে মাঠে নেমে প্রথম বল হাতে আগুন ঝরিয়ে কানাডার বিপক্ষে হারা ম্যাচেও প্রাথমিক ব্রেক থ্রু উপহার দেয়ার পাশাপাশি দুই উইকেট দখল করে নজর কেড়েছিলেন- সেই মাশরাফি তার বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে নেই মাশরাফি। ভাবা যায়!
প্রশ্ন ওঠারই কথাই। প্রশ্ন উঠলোও। সংবাদ সম্মেলনে মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের কাছে জানতে চাওয়া হলো, ‘আচ্ছা ধরেই নেয়া যায় এবং মাশরাফি নিজেও এমন আভাস দিয়েছেন যে, কাল পাকিস্তানের সঙ্গে খেলাটিই তার বিশ্বকাপে শেষ ম্যাচ। সেই এক ঐতিহাসিক ম্যাচের আগে মাশরাফি কেন আজকের সংবাদ সম্মেলনে আসলেন না?’
Advertisement
বাংলাদেশ ক্রিকেটের মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের খানিক ইতস্তত জবাব দিলেন, ‘নাহ, মানে খুব ভালো বোধ করেননি তিনি, তাই আসেননি।’
সঙ্গে সঙ্গেই বাংলাদেশের সাংবাদিকদের মধ্যে চাপা গুঞ্জন! প্রশ্ন, পাল্টা প্রশ্ন, ‘মনে করতে পারেন, মাশরাফি শেষ কবে কোন ওয়ানডে ম্যাচের আগের দিন প্রেস কনফারেন্সে আসেননি?’ প্রেসবক্সে প্রশ্ন, গুঞ্জন, ফিসফাস। ‘কী বলেন?’ এইতো সেদিন, আফগানিস্তানের বিপক্ষে খেলার ২৪ ঘণ্টা আগে (২৩ জুন) সাউদাম্পটনের রোজ বোলের প্রেস মিটেও তো আসেননি।
কিন্তু কই তখন তো একটি কথাও ওঠেনি! বরং বলা হলো, ঠিকই আছে। মাশরাফি তো সবসময়ই খেলার আগে ও পরে মিডিয়ার সামনে আসেন এবং প্রাণ খুলে কথাও বলেন। একটা প্রশ্নের যত রকম এঙ্গেলে জবাব দেয়া যায়, বিস্তারিতভাবে তাই বলেন ও ব্যাখ্যা করেন।
এক ম্যাচে না হয় তার বদলে কোচ স্টিভ রোডসই কথা বললেন! কিন্তু আজ এমনটা বললেন না কেউ। বলার কথাও না। কারণ, এটা নিশ্চিত যে, তার পক্ষে কোনোভাবেই পরের বিশ্বকাপ খেলা সম্ভব না। চার বছর পরের বিশ্বকাপ ২০২৩ সালে। তখন তার বয়স দাঁড়াবে প্রায় ৪০। ওই বয়সে একজন ফাস্ট বোলারের পক্ষে খেলা খুব কঠিন। নজিরও খুব কম।
Advertisement
আর থাকলেও সাত-আটটা অপারেশন নিয়ে অতদিন ক্রিকেট খেলা আসলে সম্ভবও নয়। এখনই তাকে অনেক কষ্টে ওজন নিয়ন্ত্রণে রেখে, তেল, ঝাল, চর্বি ছাড়া খাবার খেয়ে চলতে হয়। আর পায়ের হাঁটুর গাঁথুনি ঠিক রাখার জন্য অনেক ব্যান্ডেজ-পট্টিও ভেতরে বাঁধা থাকে। কাজেই ধরে নেয়া যেতে পারে মাশরাফি ২০২৩ সালে ভারতে অনুষ্ঠিতব্য পরের বিশ্বকাপ খেলতে পারবেন না। মাশরাফি নিজেই বিশ্বকাপে খেলতে যাওয়ার আগে মিরপুরে বসে বলে দিয়েছিলেন, এটাই তার শেষ বিশ্বকাপ।
তার আগে বিদায়ী বিশ্বকাপের শেষ ম্যাচ খেলতে নামার আগে ২০০৩, ২০০৭ আর ২০১৫ বিশ্বকাপের অনেক স্মৃতি নিয়ে কথা বলবেন। ফিরে যাবেন তার অতীতে। অনেক আবেগতাড়িত বক্তব্যও বেরিয়ে আসবে তার মুখ থেকে। কিছু না জানা-অজানা তথ্যও হয়তো জানা যাবে।
সবমিলে একটা অন্যরকম সংবাদ সম্মেলনের প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিলেন অনেকে। কিন্তু হায়! সে আশায় গুড়েবালি। মাশরাফি না এসে উল্টো অনেক প্রশ্নের জন্ম দিলেন। উল্টো প্রশ্ন উঠলো সে কী কথা! আজ বিশ্বকাপে নিজের শেষ ম্যাচের আগে সংবাদ সম্মেলনে আসলেন না মাশরাফি। সে প্রশ্নে শুধু যে কৌতূহল মাখা ছিল, তা নয়। বেশ বড় ধরনের বিস্ময়ও ছিল।
আবার কেউ কেউ এ প্রেসমিটে না আসার অন্য গন্ধও খুঁজে পেলেন। কারও কারও মত, মাশরাফির আজ সংবাদ সম্মেলনে না আসাটা রীতিমতো রহস্যজনক! সে রহস্যর জট খোলা মুশকিল। একমাত্র মাশরাফিই পারেন সে রহস্য ভেদ করতে।
অনেক কাঠখড় পুড়িয়ে তাকে পাওয়া গেল মুঠোফোনে। প্র্যাকটিস শেষে টিমবাসে করে হোটেল রুমে যাওয়ার পর এ প্রতিবেদকের ফোন ধরে কথা বললেন মাশরাফি। তবে পুরোটাই অনানুষ্ঠানিক। ‘অফ দ্য রেকর্ড। না লেখার শর্তে।’
না না, অফ দ্য রেকর্ড শুনে আবার অন্যরকম রহস্যের গন্ধ খুঁজে বেরিয়েন না? টিমবাসে করে প্র্যাকটিসে এসেও অনুশীলন না করা আর প্রেস কনফারেন্সে অংশ না নেয়ার কারণ, জানতে চাইলে ছোট্ট জবাব, ‘নাহ বিশেষ কিছু না। তেমন ভালো লাগেনি তাই প্র্যাকটিস করিনি। মিডিয় সেশনেও যাইনি সে কারণেই।’
এআরবি/আইএইচএস