দেশজুড়ে

একবেলা খেয়ে দিন কাটছে এতিম শিশুদের

খাবার কেনার অর্থ না থাকায় একবেলা খেয়ে দিন কাটছে বরিশাল নগরীর পলাশপুরের গুচ্ছ গ্রামের রহমানিয়া কিরাতুল কুরআন হাফেজিয়া মাদরাসা ও এতিমখানার শিশুদের। যে দিন কেউ অর্থ দিয়ে সহায়তা করেন সেদিন কোনো রকমে দুই বেলার খাবার জোটে ওই এতিম শিশুদের। সাহায্য না পেলে সেদিন চিড়া-মুড়ি খেয়ে দিন পার করতে হয় তাদের। এ অবস্থা চলছে প্রায় এক সপ্তাহ ধরে।

Advertisement

বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের পলাশপুর গুচ্ছ গ্রামের ৭ নম্বর গলির ওই এতিম খানায় গেলে শিক্ষার্থী ও পরিচালকের মুখে এমন উদ্বেগের কথা শোনা যায়। আবাসিক ৫২ জন শিশুকে নিয়মিত খাবার সরবরাহ করা নিয়ে দুশ্চিন্তায় আছেন পরিচালক ও শিক্ষকরা।

মাদরাসা ও এতিমখানার পরিচালক ফিরোজ হাওলাদার জানান, ২০১৪ সালে তার উদ্যোগে পলাশপুর গুচ্ছ গ্রামে এতিমখানা ও মাদরাসাটা চালু করা হয়। তখন ছাত্র সংখ্যা ছিল কম। বর্তমানে ছাত্র সংখ্যা ১০৮ জন। এর মধ্যে আবাসিক ছাত্র সংখ্যা ৫২ জন। এতিম শিশু রয়েছে ২০ জন। আবাসিক ৫২ জন ছাত্রকে প্রতিদিন ৩ বেলা খাবার সরবারহ করা হয়। তাদের খাবার সরবারহের অর্থ জোগাড় করতে বর্তমানে হিমশিম খেতে হচ্ছে।

ফিরোজ হাওলাদার বলেন, এতিমখানা ও মাদরাসা চালুর পর কয়েকটি কক্ষ নিয়ে একটি ভাড়া বাসায় তা পরিচালনা করা হতো। এতিমখানা ও মাদরাসার দৈন্যদশার খবর পেয়ে ৯ মাস আগে বরিশাল জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সংসদ সদস্য আবুল হাসানাত আবদুল্লাহ জেলা পরিষদের মাধ্যমে ১৫ লাখ টাকা অনুদান প্রদান করেন। ওই টাকা তুলতে গিয়ে প্রায় দেড় লাখ টাকা ভ্যাট দিতে হয়েছে। বাকি সাড়ে ১৩ লাখ টাকার মধ্যে ৬ লাখ টাকা দিয়ে জমি কেনা হয়। এরপর বাকি টাকা দিয়ে ভবন নির্মাণের কাজ চলছে। এরই মধ্যে ৪ তলা ফাউন্ডেশনের ওই বিল্ডিংয়ের ১ তলার নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এরপর টাকার অভাবে নির্মাণ কাজ বন্ধ হয়ে গেছে। এখন টাকার অভাবে আবাসিক ও এতিম ছাত্রদের খাবার সরবরাহ করা সম্ভব হচ্ছে না। বিষয়টি নিয়ে উদ্বেগ ও দুশ্চিন্তায় রয়েছি। টাকার জন্য এলাকার বিত্তবানদের দুয়ারে দুয়ারে হাত পেতে বেড়াচ্ছি।

Advertisement

মাদরাসার শিক্ষক হাফেজ মো. জহিরুল ইসলাম জানান, পেটে ক্ষুধা থাকায় ছাত্রদের পড়া শোনায় মন বসে না। অপেক্ষায় থাকা লাগে কে কোন সময় সহায়তা নিয়ে আসে। গতকাল বুধবার স্থানীয় এক বাসিন্দার টাকায় দুপুরে দেয়া হয়েছে আলু ভর্তা-ডাল ও ভাত। রাতে চিড়া-মুড়ি। আজ বৃহস্পতিবার দুপুরে এদিক-ওদিক থেকে টাকা নিয়ে চাল-ডাল কিনে কোনো মতে দুপুরের খাবার দেয়া হয়েছে। কিন্তু রাতে কী হবে? এক সপ্তাহ ধরে এ অবস্থা চলছে । সরকারি সহায়তা কিংবা সামাজের বিত্তবানদের সহযোগিতা পেলে আর্থিক দৈন্যতা অনেকটা দূর হতো।

নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর কেফায়েত হোসেন রনি জানান, আজ সন্ধ্যায় ফোন দিয়ে মাদরাসার পরিচালক ফিরোজ হাওলাদার বিষয়টি আমাকে জানিয়েছেন। ব্যক্তিগতভাবে আমি সাহায্যের কথা বলেছি। কোনো অবস্থাতেই যাতে এতিমখানার শিক্ষার্থীদের খাবার সরবরাহে ব্যাঘাত না ঘটে সে ব্যাপারে যথাসাধ্য চেস্টা করা হবে বলেও তিনি জানান।

সাইফ আমীন/আরএআর/এমকেএইচ

Advertisement