সৌরভ গাঙ্গুলি, বিরেন্দর শেবাগ, শচিন টেন্ডুলকার, রাহুল দ্রাবিড়, মহেন্দ্র সিং ধোনি- এ ছিল ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের ব্যাটিং লাইনআপ। নিঃসন্দেহে প্রতিপক্ষ দলের বোলারদের জন্য ছিল আতঙ্ক। শক্তিশালী এই ব্যাটিং লাইনআপ সমৃদ্ধ ভারতকে কিন্তু ওই বিশ্বকাপে ধ্বসিয়ে দিয়েছিল বাংলাদেশ। আরেকটু মোটা দাগে লিখলে, একাই ধ্বসিয়ে দিয়েছিলেন বাংলাদেশের মিডিয়াম ফাস্ট বোলার মাশরাফি বিন মর্তুজা।
Advertisement
তার আগুন ঝরানো বোলিংয়েই ভারতের ইনিংস থেমেছিল ২০০ এর নিচে (১৯১ রান)। মাশরাফি ৯.৩ ওভার বল করে ৩৮ রান দিয়ে নিয়েছিলেন ৪ উইকেট। রাহুল দ্রাবিড়দের করা ১৯১ রান টপকে বিজয়ীবেসে মাঠ ছেড়েছিল টাইগাররা। মাশরাফিকে ব্যাট হাতে নামতে হয়নি। ৯ বল আর ৫ উইকেট হাতে রেখে ভারতবধ করেছিল লাল-সবুজ জার্সিধারীরা। বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে বাংলাদেশের একমাত্র জয় ওটাই। ম্যাচ শেষে সেরা খেলোয়াড়ের পুরস্কারও উঠেছিল মাশরাফির হাতে।
ওই বিশ্বকাপে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ ছিল সেটি। ‘বি’ গ্রুপে ভারত ছাড়াও প্রতিপক্ষ ছিল শ্রীলংকা এবং বারমুডা। বাংলাদেশ ৩ ম্যাচের দুটি জিতে উঠেছিল সুপার এইটে। বাংলাদেশের কাছে হারায় প্রথম পর্ব থেকেই বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। গ্রুপ পর্বে কেবলমাত্র একটি ম্যাচ হেরেছিল বাংলাদেশ, শ্রীলংকার কাছে।
ভারতের অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় টস জিতে সেদিন বল তুলে দিয়েছিলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক হাবিবুল বাশার সুমনের হাতে। লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের সামনে বড় একটা রানের পাহাড় দাঁড় করানো। শচিন, সৌরভ, শেবাগদের মতো ব্যাটসম্যান থাকায় সে ভরসাই ছিল অধিনায়কের; কিন্তু মাশরাফি ভারতের সে স্বপ্ন পূরণ হতে দেননি।
Advertisement
ভারতের ইনিংসে মাশরাফি প্রথম আঘাত হেনেছিলেন নিজের দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলেই। বিরেন্দর শেবাগের উইকেট উপড়ে ফেলেছিলেন মাত্র ২ রান যোগ করার পরই। ভারতের স্কোর তখন ২.১ ওভারে ৬। ওয়ান ডাউনে খেলতে নামা রবিন উথাপ্পাকেও বেশি দূর এগুতে দেননি মাশরাফি। ভারতের স্কোর ২১ আর নিজের ৬ হতেই মাশরাফির বলে পয়েন্টে আফতাব আহমেদের হাতে ধরা পড়েন উথাপ্পা।
২১ রানে ২ উইকেট তুলে নিয়ে ভারতীয়দের শুরুতেই কোমর ভেঙ্গে দিয়েছিলেন মাশরাফি। সে কোমর আর সোজা করতে পারেনি ব্যাটিং সমৃদ্ধ দলটি। ওপেনার সৌরভ গাঙ্গুলি একাই লড়াই করেছিলেন, ৬৬ রানের মাটি কামড়ানো ইনিংস খেলে। টেন্ডুলকার (৭) ও অধিনায়ক রাহুল দ্রাবিড় (১৪) মিলে করেছিলন ২১ রান। মিডল-লোয়ার অর্ডারে যুবরাজ সিং ৫৮ বলে ৪৭ রানের ইনিংস খেলতে না পারলে ভারতকে আরো কম রানেই অলআউট হতে হতো সেদিন।
মাশরাফি প্রথম স্পেলে ২ উইকেট নেয়ার পর বাকি দুই উইকেট নিয়েছেন ইনিংসের শেষ ৫ ওভারে। অজিত আগারকারকে রানের খাতা গোলার আগেই ধরিয়ে দিয়েছিলেন উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহীমের হাতে এবং শেষ উইকেট হিসেবে মুনাফ প্যাটেলকে ১৫ রান করার পর আবদুর রাজ্জাকের হাতে ধরিয়েছেন।
লক্ষ্য ১৯২ রান। শুরুটা ভালো ছিল না বাংলাদেশের। দলীয় ২৪ রানেই শাহরিয়ার নাফীসে সাজঘরে ফিরে যাওয়ায় চাপের মধ্যে পড়েছিল হাবিবুল বাশার সুমনরা; কিন্তু বাংলাদেশের স্মরণীয় ওই জয়টিতে বড় ভূমিকা রেখেছিলেন তিন নবীন ব্যাটসম্যান তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহীম ও সাকিব আল হাসান। তিনজনই করেছিলেন হাফ সেঞ্চুরি।
Advertisement
তামিম ৫১ ও সাকিব ৫৩ রানে আউট হলেও দলকে জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছিলেন মুশফিক। ৫৬ রানের হার না মানা ইনিংস ছিল তার। মুশফিককে সময়োপযোগি সঙ্গ দিয়েছিলেন মোহাম্মদ আশরাফুল। তিনি ছিলেন ৮ রানে অপরাজিত। বাংলাদেশ ১.৩ ওভার বাকি থাকতেই ম্যাচ জিতেছিল ৫ উইকেটে। মাশরাফির নৈপূণ্যে ওই জয়টি ছাড়া বিশ্বকাপে আর কখনো ভারতকে হারাতে পারেনি বাংলাদেশ।
বাংলাদেশ এবার ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ খেলছে মাশরাফির অধিনায়কত্বে। শুক্রবার পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে শেষ হবে বাংলাদেশিদের বিশ্বকাপ। এটাই মাশরাফির শেষ বিশ্বকাপ। শেষ ম্যাচে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে না খেললে ভারতের বিরুদ্ধে খেলাটিই হয়ে থাকবে বাংলাদেশের ক্রিকেটের অনন্য দলপতির শেষ বিশ্বকাপম্যাচ।
আরআই/আইএইচএস/পিআর