নারী ও শিশু

বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে প্রতিষ্ঠানগুলো কি প্রস্তুত?

বয়ঃসন্ধি এমন একটা পর্যায় যখন একটি শিশু প্রাপ্তবয়স্ক হয়ে ওঠে। এ সময়ই তার মধ্যে প্রজনন ক্ষমতা তৈরি হয়। ছেলে-মেয়ের মধ্যে বড় ধরনের শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন আসে। যে কারণে তাদের প্রতি বিশেষ মনোযোগ দিতে হয়।

Advertisement

গবেষণায় দেখা গেছে, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতের পাশাপাশি তাদের সক্ষমতা বিকাশের সুযোগ করে দেয়ার মতো নীতি গ্রহণ করা গেলে এসব ছেলে-মেয়ে দারিদ্র্য, বৈষম্য ও সহিংসতার চক্র ভেঙে ফেলতে পারে।

বাংলাদেশে তিন কোটি ৬০ লাখ কিশোর-কিশোরী রয়েছে, যারা এ দেশের মোট জনসংখ্যার ২২ শতাংশ। তারপরও তাদের উপযোগী করে সেবার ব্যবস্থা করার চিন্তা এখনও ততটা গুরুত্ব পায় না। এ বিষয়ে জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তা দিন দিন বাড়ছে।

বাল্যবিয়ের উচ্চ হারের কারণে বাংলাদেশে বয়ঃসন্ধিকালেই অনেক মেয়ে গর্ভধারণ, সহিংসতা ও অপুষ্টির ঝুঁকিতে থাকে। বর্তমানে ২০-২৪ বছর বয়সী নারীদের মধ্যে ৫৯ শতাংশেরই বিয়ে হয়েছে ১৮ বছর বয়সের আগে।

Advertisement

বৈশ্বিকভাবে দেখা গেছে, পরিণত বয়সের মায়ের গর্ভে সন্তানের মৃত্যুর ঘটনার দ্বিগুণ ঘটে ২০ বছরের কম বয়সীদের ক্ষেত্রে। বাংলাদেশে ২০ বছরের কম বয়সী মায়েদের প্রতি ১ হাজার সন্তান জন্মদানে ৩১ জনের মৃত্যু হয়।

২০ বছরের বেশি বয়সী নারীদের গর্ভধারণ বা সন্তান প্রসবের সময় মৃত্যুর ঘটনা দ্বিগুণ ঘটে ১৫-১৯ বছর বয়সীদের ক্ষেত্রে, এ হার পাঁচগুণ হয় ১৫ বছরের কম বয়সী মেয়েদের ক্ষেত্রে।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাসহ জাতিসংঘের বিভিন্ন অঙ্গ সংস্থা, বিশ্বব্যাংক, দাতা সংস্থা, দেশি-বিদেশি বিশ্ববিদ্যালয়, গবেষকদের কাছে স্বাস্থ্য খাতে তুলনামূলকভাবে সবচেয়ে নির্ভরযোগ্য তথ্যসূত্র বাংলাদেশ জনমিতি ও স্বাস্থ্য জরিপ (বিডিএইচএস)। বিডিএইচএস এর তথ্য অনুযায়ী ২০১৭-১৮ অনুযায়ী নবজাতকের মৃত্যুহার বাড়ছে। মোট প্রজনন হারও স্থিতাবস্থায় আছে আট বছর ধরে। অর্থাৎ জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহারের হার বাড়ছে না।

জরিপের প্রাথমিক ফলাফলে দেখা যায়, দেশে নবজাতক (০-২৮ দিন বয়সী) মৃত্যুহার ৩০। এক হাজার সন্তান জন্ম নিলে ২৮ দিন বয়স হওয়ার আগেই ৩০ শিশু মারা যাচ্ছে। ২০১৪ সালে এ হার ছিল ২৮। অর্থাৎ গত তিন বছরে নবজাতকের মৃত্যুর প্রবণতা বেড়েছে।

Advertisement

তবে এক বছর বয়সী শিশুমৃত্যুর হার অপরিবর্তিত আছে। ২০১৪ সালে এই হার ছিল ৩৮, সর্বশেষ জরিপেও তা একই রয়েছে। যদিও ২০১৪ সালের আগের প্রতিটি জরিপে শিশুমৃত্যুর হার ক্রমাগত কমতে দেখা গিয়েছিল।

মাতৃস্বাস্থ্য, শিশুস্বাস্থ্য সেবাসহ বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা দেওয়ার ক্ষেত্রে হাসপাতাল ও ক্লিনিকের প্রস্তুত থাকার বিষয়ে তথ্য পাওয়া যায় বাংলাদেশ স্বাস্থ্য প্রতিষ্ঠান জরিপ প্রতিবেদনে। এ জরিপ প্রথম হয় ২০০৯ সালে।

২০১৭ সালে ১ হাজার ৬০০ প্রতিষ্ঠানের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। জরিপের ফলাফলে দেখা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা সেবা, প্রসব-পূর্ব সেবা ও প্রসবসেবা দেওয়ার ক্ষেত্রে সরকারি জেলা হাসপাতালগুলোর প্রস্তুতির মান গত তিন বছরে কমেছে। এনজিওর প্রতিষ্ঠানে একমাত্র পরিবার পরিকল্পনা সেবা ছাড়া অন্যগুলোর মান কমেছে। ব্যক্তি মালিকানাধীন হাসপাতাল বা ক্লিনিকে পরিবার পরিকল্পনা ও স্বাভাবিক প্রসবের ক্ষেত্রে প্রস্তুতি শূন্য। সব ধরনের সেবার ক্ষেত্রে সমন্বিত প্রস্তুতির মান নিম্ন পর্যায়ের এবং গত তিন বছরে তার উন্নতি হয়নি বলে খসড়া প্রতিবেদনে মন্তব্য করা হয়েছে।

মাতৃমৃত্যুর অন্যতম প্রধান কারণ রক্তক্ষরণ ও খিঁচুনি। এসব প্রতিকারে হাসপাতালে অক্সিটসিন ও ম্যাগনেশিয়াম সালফেট রাখতে হয়। কিন্তু জরিপের সময় ৬৯ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে অক্সিটসিন ও ৮৬ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে ম্যাগনেশিয়াম সালফেট পাননি জরিপকারীরা।

জরিপকারীরা ১০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে থার্মোমিটারও পাননি! জেলা ও উপজেলা পর্যায়ের মাত্র ২২ শতাংশ হাসপাতালে এক্স-রে যন্ত্র পেয়েছিলেন। ৪৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে শিশুর যত্নে কোনো প্রশিক্ষিত জনবল পাওয়া যায়নি। গর্ভধারণ, প্রস্রাবে শর্করা, প্রস্রাবে প্রোটিন, রক্তে শর্করা ও হিমোগ্লোবিন পরিমাপের পাঁচটি যন্ত্র একসঙ্গে পাওয়া গিয়েছিল মাত্র ৪ শতাংশ প্রতিষ্ঠানে।

এ বিষয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব, আইইএম ইউনিটের পরিচালক, লাইন ডাইরেক্টর আইইসি আশরাফুন্নেসা বলেন, বয়ঃসন্ধিকালীন স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিতে আমাদের প্রতিষ্ঠানগুলো প্রস্তুত নয়। বিভিন্ন বিদ্যালয়ে কিশোর-কিশোরীদের এ বিষয়ে সচেতনতামূলক প্রশিক্ষণ দেওয়া হচ্ছে। ৩০৯টি মা ও শিশু কল্যাণ কেন্দ্র স্থাপন করেছি। ভবিষ্যতে আরো কেন্দ্র স্থাপনের জন্য পরিকল্পনা চলছে।

জেএ/এসএইচএস/এমকেএইচ