উত্তরাঞ্চলের নওগাঁ জেলা ধান ও সবজির এলাকা হিসেবে খ্যাত। স্থানীয় চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ বিভিন্ন জেলায় সরবরাহ করা হয়ে থাকে। ধান ও সবজির পাশপাশি পাটেরও আবাদ হয় এ জেলায়। তবে উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম বেশি এবং জাগ (ভিজানো/পঁচানো) দেয়ার জায়গা না থাকায় প্রতি বছর কমছে এর আবাদ। চাষিরা এখন পাট ছেড়ে সবজির দিকে ঝুঁকছেন।
Advertisement
এদিকে সচেতন মহলের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে কৃষকরা পাটের ন্যায্য দাম পেলে এবং পাটজাত দ্রব্যের ব্যবহার বাড়ানো সম্ভব হলে আগামীতে এর আবাদও বৃদ্ধি পাবে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা গেছে, ২০১৯-২০ অর্থবছরে জেলায় পাটের আবাদ করা হয়েছে ৬ হাজার ১৫০ হেক্টরে উচ্চ ফলনশীল এবং ৪, ৭২, ৯৭ ও ৯৮ জাতসহ কিছু দেশি, মেছতা ও ভারতীয় জাত। উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৭০ হাজার ২৩৫ বেল (১ বেল সমান ৫ মণ) পাট। এছাড়া ২০১৮-১৯ অর্থবছরে ৬ হাজার ৯৩০ হেক্টর এবং ২০১৭-১৮ অর্থবছরে ৮ হাজার ২৫ হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ করা হয়েছিল।
এক সময় পাটকে সোনালী আঁশ বলা হতো। তবে সেই প্রবাদ এখন বিলিন হওয়ার পথে। উৎপাদনে খরচ ও পরিশ্রম বেশি এবং জাগ দেয়ার জায়গা না থাকায় পাট চাষে আগ্রহ কমেছে চাষীদের। ফলে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। আগাম বৃষ্টি ও বৈরী আবহাওয়ায় ফলন যেমন কম হয়েছে, পাটের মানও হতাশাজনক। ন্যায্য মূল্য না পওয়ায় পাটের আবাদ ছেড়ে সবজির দিকে ঝুঁকছেন কৃষকরা।
Advertisement
তারা বলছেন, প্রতি বিঘায় পাটের আবাদ করতে হাল চাষে ৬শ টাকা, বীজে ২শ টাকা, সার, ওষুধ, নিড়ানি ও সেচে ৪ হাজার টাকা, শ্রমিকের খাবার ২ হাজার টাকা, কাটা ও ধোয়ায় ৮ হাজার টাকাসহ প্রায় ১৪-১৫ হাজার টাকা খরচ হয়। বিঘা প্রতি পাট উৎপাদন হয়ে থাকে ১০-১৪ মণ।
বদলগাছী উপজেলার বালুভরা গ্রামের কৃষক জব্বার প্রামাণিক বলেন, পাটের আবাদে সবচেয়ে বড় সমস্যা জাগ দেয়ার জায়গা না থাকা এবং পানি। পাট কাটার পর জাগ দেয়ার জন্য ঠিকমত পানি ও জায়গা পাওয়া যায় না। গত বছর এক বিঘায় পাট আবাদ করেছিলাম, এ সমস্যার কারণে এ বছর করিনি। সে জমিতে এখন পটল করেছি। প্রতিদিন পটল তুলে বাজারে বিক্রি করছি। ভাল দাম পাচ্ছি। পাটের মতো ঝামেলা পোহাতে হয় না।
নাজিরপুর গ্রামের কৃষক শফিকুল ইসলাম বলেন, গতবছর দুই বিঘাতে পাটের আবাদ করেছিলাম। এ বছর ১ বিঘায় পাটের বীজ লাগিয়েছি। আলু আবাদের পর জমি ফেলে না রেখে ওই জমিতে পাট লাগানো হয়। পাট লাগানো থেকে শুরু করে ঘরে ওঠানো পর্যন্ত প্রচুর কষ্ট করতে হয়। কিন্তু সে তুলনায় আমরা মূল্য পাই না।
তিনি বলেন, একদিকে পাটের দাম না পাওয়া, অপরদিকে পাট জাগ দেয়ার জায়গা এবং পানি না থাকায় বিপাকে পড়তে হয়। তাই পাট চাষে কৃষকদের আগ্রহ কমছে। অনেকে জ্বালানির কাজে পাটকাঠী ব্যবহার করতে স্বল্প পরিমাণে পাটের আবাদ করছেন।
Advertisement
মান্দা উপজেলা জাতীয় পার্টির সভাপতি আলতাফ হোসেন বলেন, পাটকে সোনালী আঁশ বলা হয়। কিন্তু সেই সোনালী আঁশের আবাদ কমে যাচ্ছে। পাট পচনশীল ও জমির উর্বরতা বৃদ্ধি করে। এছাড়া পাটের পাতাকে শাক হিসেবেও খাওয়া হয়। পলিথিনের ব্যবহারে দিন দিন পরিবেশ হুমকির মুখে পড়ছে। অপরদিকে পাটজাত দ্রব্য পরিবেশ বান্ধব। এর ব্যবহার এবং প্রচারণা বাড়াতে হবে। এছাড়া কৃষকরা যদি পাটের ন্যায্য দাম পায় তাহলে আগামীতে এর আবাদও বাড়বে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের অতিরিক্ত উপ-পরিচালক (শস্য) আ. জা. মু. আহসান শহীদ সরকার বলেন, শস্য ভাণ্ডার হিসেবে খ্যাত নওগাঁ। এক সময় এখানে পাটের প্রচুর আবাদ হতো। বৈরী আবহাওয়ার কারণে প্রতি বছর কমছে পাটের আবাদ। কৃষকরা এখন পাট ছেড়ে সবজি আবাদে ঝুঁকছেন। আঁশ ছাড়ানোর (পঁচানো) সময় পানি না পাওয়ায় পাট নিয়ে বিপাকে পড়তে কৃষকদের। ফলে ভূগর্ভস্থ পানির চাপ কমাতে এবং স্বল্প পানিতে আবাদে উৎসাহিত করার ফলে পাটের আবাদ ছেড়ে কৃষকদের এখন সবজি চাষে আগ্রহ বাড়ানো হচ্ছে। এছাড়া আউশ ধান চাষেও তাদের পরামর্শ দেয়া হয়েছে।
আব্বাস আলী/এমএমজেড/জেআইএম