খেলাধুলা

ভারতের কাছে হারের পর কেমন ছিল টাইগারদের ড্রেসিং রুম!

স্বপ্ন ভঙ্গের বেদনায় খেলা শেষে বাংলাদেশ ভক্তদের চোখের পানিতে বুক ভেসে গেছে। কেউ কেউ ভেবেছিলেন ক্রিকেটাররাও বুঝি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন! কারো কারো ধারনা ছিল ২ জুলাই ভারতের সাথে হেরে সেমিতে খেলার স্বপ্ন ভঙ্গের সময় টাইগাররা বুঝি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছিলেন।

Advertisement

কিন্তু আসলে এসবের কিছুই হয়নি। খেলা শেষে ড্রেসিংরুমে কান্নার রোল পড়েনি। তবে ক্রিকেটারদের মন খারাপ ছিল। তাদেরও আশা ছিল, সেমিতে খেলার। সে আশা না মেটায় বিফল মনোরথ মাশরাফি, সাকিব, তামিম, মুশফিকরা মনের দুঃখেই মাঠ ছেড়ে হোটেলে ফিরে গেছেন।

বাংলাদেশ দলের ক্রিকেটাররা যখন টিম বাসে চড়ে হোটেলে ফিরছিলেন বাংলাদেশে তখন গভীর রাত। ভক্ত-সমর্থকদের কারো কারো নির্ঘুম রাত কাটলেও ক্রিকেটাররা ক্লান্ত হয়ে হোটেলে ফিরে যে যার রুমে গিয়ে ঘুমিয়ে পড়েন। তবে হোটেলে ফেরার আগে ক্রিকেটাররা মন ভাল করার একটা ভালো উপলক্ষ পেয়েছেন।

কোচ স্টিভ রোডস খেলা শেষে তাৎক্ষণিকভাবে একটা টিম ব্রিফিং ডাকেন। সেখানে তিনি নিজেই কথা বলেন। পরাজয়ের কারণ খোঁজা বা পোস্ট মর্টেম হয়নি। শুধু ক্রিকেটারতের সান্ত্বনার পরশ বুলিয়ে দেয়া- পাশাপাশি তাতের প্রশংসাই করেছেন স্টিভ রোডস।

Advertisement

বিশ্বকাপে বিদায় নিয়েছে বাংলাদেশ। পাকিস্তানের সাথে শেষ ম্যাচটি এখন হতে পারে সান্ত্বনার ম্যাচ। জিতলে বলা যাবে, ‘সব ভাল তার শেষ ভালো যার।’

৫ জুলাই সেই ম্যাচ জিতলে হয়ত পাঁচ নম্বর হবার একটা সম্ভাবনা থাকবে। সেটাও কিন্তু কম নয়। বিশ্বকাপে আগে দুবার ২০০৭ আর ২০১৫ সালে সেরা আটে থাকা বাংলাদেশ যদি শেষ পর্যন্ত পঞ্চম হয় সেটাও একদম কম নয়। গর্ব করে বলা যাবে, র্যাঙ্কিং-ফ্যাঙ্কিং যাই থাকুক বাংলাদেশ এখন বিশ্বর পাঁচ নম্বর ক্রিকেট শক্তি।

এদিকে বাংলাদেশ বিশ্বকাপ থেকে বিদায় নিতে না নিতে একটি প্রশ্ন উঠেছে জোরে সোরে। আচ্ছা কোচ স্টিভ রোডসের কি বিদায় ঘন্টা বাজবে এবার? জবাব হচ্ছে, তার বিদায় ঘণ্টা বাজবে না। শ্রীলঙ্কা সফরটা নিশ্চিত করেই দলের হেড কোচ থাকবেন স্টিভ রোডস। তবে এরপর তার কপালে কি আছে?

তিনি আদৌ আর বাংলাদেশের কোচ থাকবেন কি না, তা নিয়ে সংশয় আছে যথেষ্ঠই। মাঝে একটা কথা শোনা যাচ্ছিলো, বাংলাদেশ সেমিফাইনালে উঠতে পারলে হয়তো তার থাকা না থাকার বিষয়টি নিয়ে বোর্ডের ওপর মহলে আবার রিভিউ হবে। আলোচনা-পর্যালোচনার পর একটা সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

Advertisement

কিন্তু এখন আর বোধ হয় স্টিভ রোডসের খুব বেশি দিন টিম বাংলাদেশের কোচ থাকা হচ্ছে না। ভেতরের খবর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের উচ্চ পর্যায় থেকে হাই প্রোফাইল এবং নামি-দামি কোচ খোঁজা হচ্ছে। যার সুনাম-সুখাতি আছে প্রচুর। যিনি ক্রিকেট বিশ্বে পরিচিত এবং প্রবল ব্যক্তিত্বসম্পন্ন।

মাঝে কেউ কেউ হাথুরুসিংহে এবং জেমি সিডন্সের কথা বলছিলেন। কিন্তু ভেতরের খবর, বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড আর পিছন ফিরে তাকাতে রাজি নয়। তারা নতুন এবং আরও নামী এবং হাই প্রোফাইল কাউকে খুঁজছে। আরও একটি খবর আছে, তাহলো নতুন কোচ না নিয়ে কারো সাথে চুক্তি না করে সহসাই স্টিভ রোডসকে না করে দেয়া হবে না।

হাথুরুসিংহে হুট করে চলে যাবার পর যে অচলাবস্থা হয়েছিল, এবার আর তার পুনরাবৃত্তি চায় না বোর্ড। তাই নতুন কোচ নিয়ে তার সাথে কথা বার্তা চূড়ান্ত করে চুক্তিনামা স্বাক্ষর করার পর স্টিভ রোডসে অব্যাহতি দেয়ার কথা ভাবা হচ্ছে।

এ ইংলিশ কোচের ওপর টিম ম্যানেজমেন্ট, বোর্ড শীর্ষ কর্তারা খুশি না- তা আগেই জানা ছিল। ভারতের সাথে ম্যাচ শেষে তিনি যা করেছেন, তাতে বোর্ড কর্তাদের অসন্তুষ্ট হবার আরও কারণ আছে। ‘কানার ভাই অন্ধও’ বলবেন, ভারতের বিপক্ষে ম্যাচে ব্যাটসম্যানদের দায়িত্ব সচেতনতায় কমতি আর জয়ের তীব্র বাসনা-আকাঙ্খা এবং সংকল্পে ঘাটতির কারণেই বাংলাদেশ নিশ্চিতপ্রায় জয় হাতছাড়া করেছে।

কিন্তু জানা গেছে খেলা শেষে তাৎক্ষণিকভাবে কোচ স্টিভ রোডস ক্রিকেটারদের বা ব্যাটসম্যানদের একটি কটু কথাও বলেননি। তিনি পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠানের পর ড্রেসিং রুমে ক্রিকেটারদের উদ্দেশ্যে একটা ছোট-খাট ব্রিফ করেছেন। তার প্রায় পরতে পরতে ছিল প্রশংসা।

সন্দেহ নেই ক্রিকেটাররা মাঠে ভাল করতে, দেশ মাতৃকার সুনাম সুখ্যাতির জন্য এবং বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলার জন্য প্রাণপন চেষ্টা করেছেন। এর মধ্যে সাকিব আল হাসান ব্যাট ও বল হাতে প্রায় অসম্ভবকে সম্ভব করে প্রতিনিয়ত পারফর্ম করে যাচ্ছেন। এবং মঙ্গলবারের ম্যাচেও বল হাতে সবচেয়ে কম রান দেয়া (১০ ওভারে ১/৪১) সাকিব ব্যাট হাতেও দলের টপ স্কোরার।

কিন্তু পেসার মোস্তাফিজ ছাড়া ম্যাচে আর কারো পারফরমেন্স সন্তোষজনক ছিল না। অন্তত ভারতের মত কঠিন শক্তিকে হারানোর জন্য যথেষ্ঠ অবদান ছিল না বাকিদের; কিন্তু কোচ খেলা শেষে কাউকে একটি কটু কথাও বলেননি। উল্টো বলেছেন, ‘তোমরা অসাধারণ খেলেছো। আমরা তিনটি বড় দলকে হারিয়েছি। সেমিফাইনাল খেলার দৌড়ে টিকে ছিলাম প্রায় শেষ পর্যন্ত। হয়ত ভাগ্য আরও একটু সহায় থাকলে আমরা সেমিফাইনাল খেলতাম। তা না পারলেও আমি তোমাদের পারফরমেন্সে সন্তুষ্ট। তোমাদের জন্য অনেক শুভ কামনা।’

এটুকু বলে শেষ করা স্টিভ রোডস পরে অফিসিয়াল মিডিয়া সেশনেও দলের উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেছেন এবং বলেছেন, ‘আমি ছেলেদের পারফরমেন্সে গর্বিত।’

সব ঠিক আছে। বাংলাদেশের ক্রিকেটাররা এবারের বিশ্বকাপে অতীতের সব পারফরমেন্সকে ছাড়িয়ে অনেক বেশি ভাল খেলেছেন। দক্ষিণ আফ্রিকা আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের মত বড় দলকে হারানোর পাশাপাশি নিউজিল্যান্ডের সাথেও জয়ের সম্ভাবনা তৈরি করেছিল। অল্পের জন্য পারেনি। এমনকি অস্ট্রেলিয়ার করা ৩৮১ রানের পাহাড় সমান স্কোরের জবাবেও ৩৩৩ রান করে সবার প্রশংসা কুড়িয়েছে। সে জন্য ক্রিকেটাররা অবশ্যই প্রশংসার দাবিদার। এটাও সত্য, কালকের ম্যাচে জিততে না পারাও ছিল ব্যর্থতা।

কিন্তু কোচ একটি তীর্যক কথাও বলেননি ক্রিকেটারদের। কার কোথায় ভুল- তা ধরিয়ে দিয়ে কোনো ধমকও দিলেন না। অথচ সমর্থক-ভক্তদের মন খারাপ। ভেতরে না পারার আক্ষেপের আগুন জ্বলছে। সে আগুন যেন কিছুতেই নিভছে না। ভাবছেন, ভক্তদের সবটাই আবেগ। তাই তারা বুঝি আবেগ দিয়ে চিন্তা করে সেমিফাইনালে উঠতে না পারার দুঃকে কাতর।

আসলে তা নয়। সমর্থক-ভক্তদের আবেগ বেশি থাকলেও তাদের ভাবনা ও অনুভব যথার্থ। তাদের আক্ষেপ-অনুশোচনাও একদম ঠিক। বোদ্ধা, বিশেষজ্ঞরাও মনে করেন বাংলাদেশ মঙ্গলবার এজবাস্টনে ভারতকে হারানোর দারুণ এক সুযোগ হাতছাড়া করেছে। বিশ্ব ক্রিকেটের অনেক বড় তারকা, যারা এই বিশ্বকাপে নানা বিশেষজ্ঞ মতামত দিচ্ছেন, তাদের অনেকেরই ধারনা ২ জুলাই বাংলাদেশের ভারতকে হারানোর যথেষ্ঠ সম্ভাবনা ছিল। এমনকি ভারতীয় মিডিয়ারও একটা বড় অংশের ধারনা, বাংলাদেশ এজবাস্টনে অনেক বড় সুযোগ হাতছাড়া করেছে।

এআরবি/আইএইচএস/পিআর