দেশে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। ফলে কমছে বৃষ্টি, বাড়ছে তাপমাত্রা। দীর্ঘমেয়াদি তীব্র হচ্ছে গরমও।
Advertisement
আবহাওয়া অধিদফতরের জুন মাসের দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে দেখা যায়, সারাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৭ দশমিক ৭ শতাংশ বৃষ্টিপাত কম হয়েছে। সেই সঙ্গে জুনে সর্বোচ্চ, সর্বনিম্ন ও গড় তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে যথাক্রমে ১ দশমিক ৮, ০ দশমিক ৬ এবং ১ দশমিক ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বেশি ছিল।
অধিদফতরের ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্র সূত্র জানায়, দীর্ঘমেয়াদি পূর্বাভাস প্রদানের জন্য বিশেষজ্ঞ কমিটির নিয়মিত বৈঠক ১ জুলাই সকালে ঝড় সতর্কীকরণ কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে জুনের আবহাওয়ার বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত পর্যালোচনা করা হয়। সেই পর্যালোচনার ভিত্তিতে জুনের তথ্য জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
দীর্ঘমেয়াদি প্রতিবেদনে বলা হয়, দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) বাংলাদেশে স্বাভাবিকের চেয়ে দেরিতে বিস্তার লাভ এবং কম সক্রিয় থাকায় দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে কম বৃষ্টিপাত হয়। সে কারণে দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলসহ অনেক জায়গায় মৃদু থেকে মাঝারি ধরনের তাপপ্রবাহ বয়ে যায়।
Advertisement
এতে বলা হয়েছে, দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) এক সপ্তাহের বেশি সময় পরে ৯ জুন টেকনাফ উপকূল পর্যন্ত অগ্রসর হয়। ১০ জুন চট্টগ্রাম এবং ১৪ জুন বরিশাল, সিলেট, ঢাকা ও ময়মনসিংহ বিভাগসহ দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল পর্যন্ত বিস্তার লাভ করে। এরপর এটি দুর্বল হয়ে স্থির থাকে। আবার ২০ জুন দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ু (বর্ষা) দুর্বলভাবে সারাদেশে বিস্তার লাভ করে। উত্তর বঙ্গোপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় ৯ জুন একটি লঘুচাপ এবং ২০ জুন অপর একটি লঘুচাপ সৃষ্টি হয়। তবে এর একটিও নিম্নচাপে পরিণত হয়নি।
বৃষ্টিপাতের পরিমাণ ছাড়া লঘুচাপ, কৃষি আবহাওয়া এবং দেশের নদ-নদীর অবস্থা জুনের পূর্বাভাসের সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ ছিল বলেও প্রতিবেদনে জানানো হয়।
এ বিষয়ে আবহাওয়াবিদ রুহুল কুদ্দুস জাগো নিউজকে বলেন, ‘মৌসুমি বায়ু দেরি করে এসেছে। তার কারণে বৃষ্টিপাত কম হয়েছে।’
‘তারপর কয়েকটা লঘুচাপ হয়েছে। লঘুচাপের আগে ও পরে কিছু সময় ফরমেশন থেকে শুরু করে ম্যাচিউরড স্টেজ পর্যন্ত বৃষ্টি কম হয়। এটাও একটা কারণ’- যোগ করেন রুহুল কুদ্দুস।
Advertisement
চট্টগ্রামে ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত
জুনে ঢাকায় স্বাভাবিকভাবে বৃষ্টিপাত হওয়ার কথা ছিল ৩৫৬ মিলিমিটার, কিন্তু হয়েছে ২৭২ দশমিক ৫ মিলিমিটার। অর্থাৎ ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে।
ময়মনসিংহে ৪৩২ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৩৪৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার। অর্থাৎ ২০ দশমিক ৩ শতাংশ কম বৃষ্টি হয়েছে।
চট্টগ্রামে ৫৮৯ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ২৪৭ দশমিক ৩ মিলিমিটার। অর্থাৎ ৫৮ শতাংশ কম বৃষ্টিপাত হয়েছে চট্টগ্রামে।
সিলেটে ৬৩৪ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ৬২২ দশমিক ৫ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১ দশমিক ৮ শতাংশ কম।
রাজশাহীতে ৩০৫ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ২৪৬ দশমিক ৮ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৯ দশমিক ১ শতাংশ কম।
রংপুরে ৩৮৯ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও হয়েছে ২৯৭ দশমিক ৭ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ২৩ দশমিক ৫ শতাংশ কম।
খুলনায় ২৯৬ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও ১৯১ দশমিক ৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৩৫ দশমিক ২ শতাংশ কম।
বরিশালে ৪৮৩ মিলিমিটার হওয়ার কথা থাকলেও ২৬৭ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে, যা স্বাভাবিকের চেয়ে ৪৪ দশমিক ৭ মিলিমিটার কম।
পিডি/এএইচ/এমএস