রাজবাড়ী সদর, পাংশা, বালিয়াকান্দি, গোয়ালন্দ ও কালুখালী উপজেলার সড়ক ও জনপথ বিভাগ (সওজ), এলজিইডি, জেলা পরিষদ এবং বন বিভাগের আওতাধীন বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কের পাশে দাঁড়িয়ে আছে নানা প্রজাতির হাজার হাজার মৃত গাছ। এর মধ্যে শিশু, রেইনট্রি ও কড়ই গাছের সংখ্যাই বেশি। দীর্ঘদিন এভাবে পড়ে থেকে শুকিয়ে নষ্ট হয়ে যাচ্ছে এসব মূল্যবান গাছ, কিন্তু অপসারণের কোনো উদ্যোগ নেই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের।
Advertisement
অথচ এসব সড়ক দিয়ে প্রতিনিয়ত ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করছেন হাজার হাজার পথচারী ও যানবাহন। অনেক সময় হালকা বাতাসে মৃত শুকনো গাছের ডাল-পালা ভেঙে সড়কের ওপর পড়েছে। জানা গেছে একটি অসাধু চক্র বেআইনিভাবে রাতের রাতের অন্ধকারে বহু গাছ কেটে নিয়ে যাচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন উপকারভোগী ও সরকার।
পথচারী ও এলাকাবাসীরা জানান, জেলার বিভিন্ন রাস্তার পাশে বহু গাছ মরে শুকিয়ে দাঁড়িয়ে আছে, আবার কোথাও কোথাও ভেঙে পড়েছে। কিন্তু সরকারি গাছ হওয়ায় তা কেউ কেটে নিচ্ছেন না। তবে গাছগুলো ঝুঁকিপূর্ণভাবে দাঁড়িয়ে আছে, যে কোনো সময় পথচারীদের ওপর ওই গাছ বা তার ডালপালা ভেঙে পরে ঘটতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। তাই এখনই গাছগুলো চিহ্নিত করে অপসারণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
এদিকে জেলা প্রশাসন বলছে ইতোমধ্যে সড়ক ও জনপথ বিভাগসহ অন্যান্য দফতরকে ঝুঁকিপূর্ণ মৃত গাছগুলো কেটে অপনারণের নির্দেশ দেয়া হয়েছে।
Advertisement
সরেজমিনে ঘুরে দেখা গেছে সওজের দৌলতদিয়া-খুলনা মহাসড়কের খানাখানাপুর এলাকা, গোয়ালন্দের জামতলা থেকে পাংশা পর্যন্ত বাঁধের রাস্তা ও এলজিইডির সদর উপজেলার সুলতানপুর ইউনিয়নের খেয়াঘাট বাজার থেকে বসন্তপুর ইউনিয়নের রাস্তাসহ বিভিন্ন গ্রামীণ রাস্তার পাশে বন বিভাগের হাজার হাজার মোটা ও চিকন বিভিন্ন জাতের মৃত গাছ ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে।
এসব সড়কে চলাচলকারী যানবাহনের চালকরা বলেন, মরা গাছগুলো হালকা বাতাস বা এমনিতেই ভেঙে রাস্তার ওপর পড়ে। এ কারণে গাড়ি চালানোর সময় তারা দুশ্চিন্তায় থাকেন। চলন্ত অবস্থায় তাদের যানবাহনের ওপর পড়লে বড় ধরনের ক্ষতি বা প্রাণহানির মতো ঘটনাও ঘটতে পারে। এ কারণে তারা রাস্তার পাশ থেকে মরা গাছগুলো দ্রুত অপসারণে যথাযথ কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
জেলার ভারপ্রাপ্ত বন কর্মকর্তা নির্ম্মল কুমার দত্ত বলেন, স্ব-স্ব এলাকার জনগণকে নিয়ে রাস্তার পাশে সামাজিক বনায়ন করা হয়। এর মধ্যে কিছু গাছ অজ্ঞাত রোগে মারা গেছে। যা এখন বিভিন্ন রাস্তার পাশে ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু ইচ্ছে করলেই সেগুলো অপসারণ করতে পারেন না। তবে সুবিধাভোগীর সংখ্যা বেশি বলে তাদের মাধ্যমে চিহ্নিত করে অনেক সময় সংরক্ষণ করা হয়। নিয়ম অনুযায়ী উপজেলা পরিবেশ ও বন উন্নয়ন কমিটির অনুমোদনের মাধ্যমে গাছ কাটা হয়। আইন অনুযায়ী বিভিন্ন সরকারি ও আধাসরকারি মালিকানাধীন কোনো গাছ কাঁটতে হলে বিভাগীয় বন বিভাগের কর্মকর্তা বরাবর সংশ্লিষ্ট জেলা কর্মকর্তার আবেদন করতে হয় এবং বিভাগীয় কর্মকর্তা তার অধীনস্থ্ কর্মকর্তাদের মাধ্যমে গাছের মুল্য নির্ধারণ ও পরিমাপ তালিকা প্রস্তুত করে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে পাঠাবে। পরে তারা স্ব-স্ব নিয়ম অনুযায়ী গাছগুলো বিক্রির ব্যবস্থা করেন। এছাড়া অন্যান্য দফতর ভিন্ন ভিন্ন কমিটির মাধ্যমে তাদের রাস্তার পাশের গাছ অপসারণের সিদ্ধান নেন।
রাজবাড়ী সওজের নির্বাহী প্রকৌশলী কেবিএম সাদ্দাম হোসেন বলেন, তাদের আওতায় রাস্তার পাশে বহু মৃত গাছ রয়েছে। তার মধ্যে বন বিভাগ ও জেলা পরিষদের গাছও আছে। তারা সওজের আওতাধীন রাস্তার পাশের ঝুঁকিপূর্ণ গাছগুলো সরানোর ব্যবস্থা নিয়েছেন। এছাড়া ইতোমধ্যে তাদের রাস্তার পাশে অন্যান্য বিভাগের মৃত গাছ অপসারণের জন্য বলেছেন।
Advertisement
রাজবাড়ী এলজিইডির নির্বাহী প্রকৌশলী খান এ শামীম বলেন, তাদের আওতাধীন রাস্তার পাশে কি পরিমাণ মরা গাছ রয়েছে, তার কোনো পরিসংখ্যান নেই। তবে ঝুঁকিপূর্ণ গাছ শনাক্ত করে স্থানীয় ইউপি চেয়রম্যানরা রেজুলেশন করে উপজেলা বরাবার পাঠালে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবেন।
অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আলমগীর হুসাইন বলেন, রাজবাড়ীতে বিভিন্ন রাস্তার পাশে কয়েকটি সংস্থার সামাজিক বনায়নের গাছ রয়েছে। এসব গাছের মধ্যে মরা গাছগুলো বিভিন্ন সময় রাস্তার ওপর ভেঙে পড়ছে বা ঝুঁকি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। বিষয়টি তাদের নজরেও এসেছে এবং মাসিক সমন্বয় সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনাও হয়েছে। ইতোমধ্যে সওজ, এলজিইডি ও বন বিভাগকে তাদের আওতাধীন মরাগাছ শনাক্ত করে দ্রুত কেটে ফেলার নির্দেশ দিয়েছেন।
রুবেলুর রহমান/এমএমজেড/জেআইএম