খেলাধুলা

চোখের পানিতে মাঠ ছাড়লেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা

খেলা শেষ, পুরষ্কার বিতরণী অনুষ্ঠান ও তাৎক্ষণিক অনুভূতি পর্বও শেষ। এজবাস্টনের কিউরেটর নিজ হাতে পানির পাইপ নিয়ে উইকেট ভেজাতে শুরু করলেন। যেটা ক্রিকেট ম্যাচ শেষে কিউরেটর আর গ্রাউন্ডসম্যানদের রুটিন ওয়ার্ক। হলুদ পাইপ ভিজিয়ে দিল এজবাস্টনের পিচকে।

Advertisement

আর ওদিকে বাংলাদেশের ভক্ত-সমর্থকদের চোখের জলে ভিজলো চোখ-মুখ। পানির ঝাপটায় হয়তো ব্যাটসম্যান ও বোলারের বুটের নীচের ময়লাগুলো ধুয়ে-মুছে গেল। ঝকঝকে তকতকে হয়ে উঠলো আবার এজবাস্টনের পিচ। যেন এই মুহূর্তে নেয়ে উঠলো আজকের ম্যাচের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ঐ ২২ গজ জায়গা।

কিন্তু কোটি টাইগার সমর্থক-ভক্তের বিশ্বকাপ স্বপ্নভঙ্গের বেদনা কী দিয়ে ঘুচবে? কোটি বাঙালির মনের ভেতরে যে অনল জ্বলছে, তা ঐ ঠুনকো পাইপের পানি কেন, বঙ্গোপসাগরের সব পানি দিয়ে ধুয়ে ফেললেই কি আর সে দুঃখের আগুন নিভবে?

আশা ভঙ্গের বেদনায় ভক্তদের ভেতরে রক্তক্ষরণ হচ্ছে। এদিকে যারা জীবন জীবিকার প্রয়োজনে দেশ আর পরিবার-পরিজন ফেলে যুক্তরাজ্য প্রবাসী, সেই বাংলাদেশিরাও মনের দুঃখে কাঁদছেন। অনেকেই গাঁটের পয়সা খরচ করে ছুটে এসেছিলেন এজবাস্টনে। ৩৫ হাজার আসন বিশিষ্ট এ মাঠে আজ কম করে হলেও সাড়ে তিন থেকে চার হাজার প্রবাসী বাঙালি ছিলেন। তারা অনেক আশা নিয়ে এসেছিলেন।

Advertisement

একটি টিকিট অনেক আগে অনলাইনে কিনলেও সর্বনিম্ন মূল্য ৬০ পাউন্ড (প্রায় ৭ হাজার টাকা)। এছাড়া সিলভার আর গোল্ড সেশনের প্রবেশ মূল্য ছিল যথাক্রমে ১০০ ও ১৫০ পাউন্ড। সেই স্ট্যান্ডের টিকিটগুলো বিক্রি হয়েছে অন্তত ১০০ পাউন্ড বেশি মূল্যে।

বলার অপেক্ষা রাখে না, আজ খেলা দেখতে আসা অন্তত ১২-১৪ হাজার ভারতীয়র ৭৫ ভাগ অর্থনৈতিকভাবে অনেক স্বচ্ছল। তাদের বড় অংশ সামাজিকভাবেও সুপ্রতিষ্ঠিত। সে তুলনায় বাংলাদেশিদের আর্থিক সঙ্গতি কম। কিছুসংখ্যক বাঙালি অবশ্য বেশ সমৃদ্ধ ও উচ্চবিত্ত। বাকিদের মানে বড় অংশের আর্থিক সঙ্গতি অত না।

তবুও তারা কাজ ফেলে, গড়পড়তা ১৫ থেকে ২০ হাজার টাকা, কেউ কেউ তারও অনেক বেশি অর্থে টিকিট কিনে এসেছিলেন অনেক আশা নিয়ে। কিন্তু ফিরে যাচ্ছেন না পাবার বেদনায়। আশা পুরণ না হবার দুঃখ-যন্ত্রণায়। সেই যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাস থেকে সপরিবারে আসা রিয়াদ, লন্ডন থেকে আসা ফয়েজ ইসলাম, তারেক, বার্মিংহামের খুকু মণি, পথিকসহ হাজারো বাংলাদেশির মন খারাপ।

ছেলেপুলেদের স্কুলে পাঠিয়ে প্রিয় জাতীয় দলের টানে রান্নাবান্না ফেলে মাঠে আসা খুকু মণি চোখের পানিতে মাঠ ছেড়েছেন। যারা সবাই সকালে খেলা শুরুর আগে প্রবল উৎসাহ-উদ্দীপনায় মাঠে ছুটে এসেছিলেন, বাংলাদেশের সাংবাদিক দেখলে যেচে এসেছেন কথা বলতে, নিজের ভাব-অনুভূতি প্রকাশে, সেই তারাই খেলা শেষে রাজ্যের হতাশায় কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করলেন অতি বিনয়ে।

Advertisement

তবুও মিললো কিছু অনুভূতি। ফয়েজ জানালেন, ‘ভাই খুব দুঃখ পেলাম। অনেক আশা নিয়ে এসেছিলাম। ভেবেছিলাম, ভারতকে হারিয়ে সেমিফাইনালের পথে এক ধাপ এগিয়ে ৫ জুলাই পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামবে মাশরাফির দল। কিন্তু তার আর হলো না। এখন বিশ্বকাপ দেখার আগ্রহই গেল কমে।’

তারপরও প্রিয় জাতীয় দল এবং ক্রিকেটারদের এক নজর দেখতে এজবাস্টনের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের বাইরে হাজারো বাঙালির উন্মুখ অপেক্ষার মিছিল। সেই মিছিলে নেই কোন উচ্ছ্বলতা, আনন্দ-উল্লাস। তার বদলে চোখের জলে মাশরাফি, সাকিব, মুশফিক, তামিম, মোস্তাফিজদের বিদায় জানালেন তারা।

যত দূর চোখ যায়, কাউকে কাউকে দেখা গেল টিম বাসের দিকে অপলক তাকিয়ে থাকতে। সত্যি দেশের বাইরে জীবন জীবিকার সন্ধানে নিরন্তর সংগ্রামী বাংলাদেশিদের এই ভালবাসা, টান আর মায়া চোখে না দেখলে বিশ্বাস করা কঠিন।

এআরবি/এসএএস