আইন-আদালত

আজহারের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শুরু

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডাদেশপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা এটিএম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর তার আইনজীবীর যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন মঙ্গলবার শেষ হয়েছে।

Advertisement

আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এদিন তাদের যুক্তিতর্ক শুরু করেন। যুক্তিতর্ক অসমাপ্ত অবস্থায় এ বিষয়ে মামলার পরবর্তী কার্যক্রম বুধবার পযর্ন্ত মুলতবি করা হয়।

মঙ্গলবার প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চে এই যুক্ততর্ক শুরু করা হয়। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি নুরুজ্জামান। সোম ও মঙ্গলবার পর পর দুই দিন আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষ তাদের যুক্তি তর্ক শুরু করলেন।

আদালতে আজহারের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন, তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। অন্যদিকে, রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাসুদ হাসান চৌধুরী পরাগ ও অমিত তালুকদার।

Advertisement

এ সময় আজহারুলের পক্ষে উপস্থিত ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন, অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন ও মো. মতিউর রহমান মল্লিক।

আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্ততর্ক উপস্থাপন শেষ করেছেন বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আজহারুল ইসলামের অপর আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির। তিনি জানান, মঙ্গলবার মামলায় আসামিপক্ষের যুক্তিতর্ক (আর্র্গুমেন্ট) শেষ করার পর রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান আইন কর্মকর্তা অ্যার্টনি জেনারেল ১০ মিনিট শুনানি করেন। তিনি আগামীকাল (বুধবার) আবারও শুনানি করবেন।

সোমবার (১ জুলাই) আসামি আজহারুল ইসলামের আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন বলেন, আজহারের বিরুদ্ধে যেসব সাক্ষী আনা হয়, তা অস্বাভাবিক। রাষ্ট্রপক্ষের প্রসিকিউশনের সেফ হোমে রেখে এসব সাক্ষীকে প্রস্তুত করা হয়।

তিনি তার যুক্তিতে বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি সেনাদের সঙ্গে আজহারুল ইসলামকে দেখেছেন। সে সময় পাক আর্মি আসার খবর পেলে লোকজন পালিয়ে যাওয়ার রাস্তা খুঁজে পেতো না, আর সাক্ষীরা পাশে থেকেই লুকিয়ে ঘটনা দেখেছেন এবং মামলায় একজন সাক্ষী বলেছেন, তিনি সাড়ে ৬ কিলোমিটার দূর থেকে ঘটনা দেখেছেন, পাক আর্মিদের সঙ্গে কারা কারা ছিল।

Advertisement

এর আগে গত ২৬ জুন পেপারবুক পড়া শেষে যুক্তিতর্ক শুনানির জন্য ১ জুলাই দিন ধার্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে গত ১০ এপ্রিল শুনানিতে আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ রোজা ও ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্য ছুটির পর ১৮ জুন আজহারুল ইসলামের আপিল দুটির শুনানি দিন ধার্য করেন।

গত ১৮ জুন আজহারের আপিলের শুনানি শুরু হয়। ২৬ জুন আপিল বিভাগ পেপারবুক পড়া শেষে ১ জুলাই যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করেন। আজহারের পক্ষে অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন পেপারবুক পড়েন।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে এক হাজার ২৫৬ জনকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো ৯ ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে ৫টি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।

ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।

এফএইচ/জেডএ/জেআইএম