মা চায়না খাতুন থানা পুলিশের হাজতে। সেই মাকে মুক্ত করতে মেয়ে তার নিজের গয়না বন্ধক রেখে ৩০ হাজার টাকা দিয়েছিলেন ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ারকে। কিন্তু পুলিশ ওই টাকা নিয়েও ১৩ মাসের দুধের শিশুকন্যাসহ চায়না খাতুনকে জেলহাজতে পাঠিয়েছে। এখন মা চায়না বেগম ও দুধের শিশু বোন কারাগারে দিন কাটাচ্ছেন।
Advertisement
চায়নার পরিবারের অভিযোগ, শত্রুতাবশত প্রতিবেশীরা চার বোতল ফেনসিডিল দিয়ে তিন সন্তানের জননী চায়না বেগমকে কালীগঞ্জ থানা পুলিশে দিয়েছে। মঙ্গলবার সকালে সাংবাদিকদের কাছে এসব অভিযোগ করে ভুক্তভোগী পরিবার।
কালীগঞ্জ শহরের ব্রিকফিল্ড এলাকার বাসিন্দা আটক চায়নার স্বামী আব্দুস ছালাম জানান, রোববার সকাল ৬টার দিকে ঘুম থেকে ওঠে বাড়ির কাজ শেষে গরু বাঁধতে যাচ্ছিলেন। এ সময় প্রতিবেশী সেলিমের ছেলে ইমনসহ ১০-১২ জন যুবক তার বাড়িতে আসে। তারা বাড়ি সংলগ্ন প্রতিবেশী শিল্পী খাতুনের চালের ওপর চার বোতল ফেনসিডিল পায়। ওই ফেনসিডিল চায়না বেগমের দাবি করে যুবকরা তার বিরুদ্ধে মাদক ব্যবসার অভিযোগ তুলে পুলিশে দেয়।
খবর পেয়ে সকালেই চায়নার মেয়ে চাপালী গ্রামের সাজুর স্ত্রী ছালমা তার মাকে দেখতে থানায় যায়। এ সময় থানার এসআই দেলোয়ার হোসেন মেয়ে ছালমাকে জানান মাকে মুক্ত করতে হলে ৫০ হাজার টাকা লাগবে। তাকে ছেড়ে দিতে শেষ পর্যন্ত ৩০ হাজার টাকার চুক্তি হয়।
Advertisement
এদিকে দিনমজুর চা-দোকানি বাবা আব্দুস ছালামের পক্ষে ওই টাকা দেয়া সম্ভব না হওয়ায় বিপাকে পড়েন মেয়ে ছালমা। বাধ্য হয়েই তার গলার দুটি স্বর্ণের চেইন ও দুটি কানের দুল বাজারের একটি জুয়েলারিতে ৩০ হাজার টাকায় বন্ধক রাখেন। বেলা সাড়ে ১১টার দিকে ছালমা থানায় গিয়ে এসআই দেলোয়ার হোসেনকে ওই টাকা দেন। টাকা নিয়ে আটক চায়নাকে দুপুরের পর ছেড়ে দেবে বলে জানায় পুলিশ।
এরপর দুপুরে না ছেড়ে রাতে ছাড়বে বলে জানায়। কিন্তু না ছেড়ে পরদিন সোমবার দুপুর আড়াইটার দিকে আটক চায়নার কোলে থাকা ১৩ মাসের দুধের শিশুসহ তাকে জেলহাজতে পাঠায় পুলিশ।
এদিকে পুলিশের কবলে পড়ে স্ত্রী, দুধের শিশুকন্যা ও মেয়ের গয়না হাতছাড়া হওয়ায় দিশেহারা বাবা আব্দুস ছালাম বিচারের আশায় এখন মানুষের দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন।
তবে আসামি ছাড়তে টাকা নেয়ার বিষয়টি অস্বীকার করে থানা পুলিশের এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, চায়না মাদক ব্যবসায়ী। জনতা তাকে মাদকসহ থানায় সোপর্দ করায় জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে।
Advertisement
কালীগঞ্জ থানা পুলিশের ওসি ইউনুচ আলী বলেন, এসআই দেলোয়ার আসামির পরিবারের কাছ থেকে টাকা নেয়ার বিষয়টি আমি জানি না। তবে ঘটনাটি সত্য হলে ওই পুলিশের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ বিষয়ে ঝিনাইদহের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মিলু মিয়া বিশ্বাস বলেন, বিষয়টি আমার নজরে আসেনি। তবে খোঁজখবর নিয়ে ব্যবস্থা নেব।
আব্দুল্লাহ আল মাসুদ/এএম/পিআর