ইরান পরমাণু চুক্তির অন্যতম শর্ত লঙ্ঘন করার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প কড়া প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছেন। জাতিসংঘের মহাসচিব চুক্তির কাঠামোর মধ্যে বিষয়টির নিষ্পত্তির ডাক দিয়েছেন।
Advertisement
ডোনাল্ড ট্রাম্প মার্কিন প্রেসিডেন্ট হওয়ার পর থেকেই ইরানের উপর চাপ বেড়ে চলেছে। প্রথমে হুমকি ও হুঁশিয়ারি, তারপর একতরফাভাবে ইরানের সঙ্গে পরমাণু চুক্তি থেকে আমেরিকার প্রত্যাহার, সবশেষে একঝাঁক কড়া নিষেধাজ্ঞা চাপিয়ে ইরানের নেতৃত্বকে কোণঠাসা করতে পেরেছিলেন ট্রাম্প। কিন্তু তা সত্ত্বেও ইরান পরমাণু চুক্তি মেনে এসেছে।
কিন্তু সোমবার ইরান তাদের ঘোষণা অনুযায়ী আনুষ্ঠানিকভাবে ২০১৫ সালের পরমাণু চুক্তির অন্যতম প্রধান শর্ত লঙ্ঘন করলো। আন্তর্জাতিক পরমাণু শক্তি সংস্থা আইএইএ জানিয়েছে, চুক্তি স্বাক্ষরের পর ইরানের হাতে এই প্রথম ৩.৬৭ শতাংশ মাত্রার সমৃদ্ধ ইউরেনিয়ামের পরিমাণ ৩০০ কিলোগ্রাম পেরিয়ে গেছে। আগামী কয়েক দিনে ইরান আরও উচ্চ মাত্রায় ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ শুরু করবে বলে জানিয়েছে।
মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে বাকি দেশগুলোও ইরানের সঙ্গে বাণিজ্যিক সম্পর্ক খর্ব করতে বাধ্য হচ্ছে। ইরানের পেট্রোলিয়াম রফতানিও কার্যত বন্ধ হয়ে গেছে। চরম অর্থনৈতিক দুর্দশার ফলে সে দেশের নেতৃত্ব মরিয়া হয়ে আন্তর্জাতিক সমাজের উপর পাল্টা চাপ সৃষ্টি করতে চাইছে। তেহরান মনে করিয়ে দিচ্ছে, যে পরমাণু চুক্তির আওতায় সে দেশের অর্থনৈতিক সুবিধা ভোগ করার যে শর্ত রয়েছে, মার্কিন নিষেধাজ্ঞার ফলে তা সম্ভব হচ্ছে না। তাই একতরফাভাবে চুক্তি মেনে চলা ইরানের পক্ষেও সম্ভব নয়।
Advertisement
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, ইরান অবশ্যই জানে সে দেশ কী করছে। তার মতে, ইরানের নেতৃত্ব আগুন নিয়ে খেলা করছে। তাই তিনি সে দেশকে কোনো বার্তা দিতে চান না।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাইক পম্পেও ২০০৬ সাল থেকে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের একাধিক প্রস্তাবের উল্লেখ করে বলেন, ইরানকে ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ সংক্রান্ত সব কার্যকলাপ বন্ধ করতে হবে। তিনি ইরানের উপর আরও অর্থনৈতিক চাপ বাড়ানোর ঘোষণা করেন।
ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেঞ্জামিন নেতানিয়াহু ইউরোপের দেশগুলোর উদ্দেশ্যে অবিলম্বে ইরানের ওপর নিষেধাজ্ঞা চাপানোর ডাক দিয়েছেন। তিনিও জাতিসংঘের শর্ত মনে করিয়ে দিয়ে বলেন, ইরান পরমাণু চুক্তি লঙ্ঘন করলেই ইউরোপ নিষেধাজ্ঞা চাপানোর অঙ্গীকার করেছিল।
সোমবার ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী জাভেদ জারিফ বলেন, আমেরিকা তার আগ্রাসী মনোভাব ও কড়া নিষেধাজ্ঞার পক্ষে আন্তর্জাতির সমর্থন আদায় করতে ব্যর্থ হয়েছে। তার মতে, ওয়াশিংটন এক ইরান-বিরোধী জোট গড়া ও জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে ইরানের নিন্দা করার চেষ্টা চালাচ্ছে। এখনো পর্যন্ত তারা দুটি লক্ষ্যই পূরণ করতে পারেনি।
Advertisement
জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্টেনিও গুতেরেস ইরানের ঘোষণা সম্পর্কে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তবে তার এক মুখপাত্র বলেছেন, কোনো বিচ্যুতি ঘটলে পরমাণু চুক্তির আওতায় থেকেই পরবর্তী পদক্ষেপ নিতে হবে। তিনি ইরানের উদ্দেশ্যে অর্থনৈতিক সুবিধা বজায় রাখতে চুক্তি মেনে চলার পরামর্শ দেন। ডিডব্লিউ।
এসআইএস/পিআর