অর্থনীতি

আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইলকে টাকা দিল অগ্রণী ব্যাংক

আদালতের নির্দেশে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত আলহাজ টেক্সটাইলকে এফডিআরের টাকা পরিশোধ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। ২০ মে কোম্পানিটি টাকা পেয়েছে বলে মঙ্গলবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে জানানো হয়েছে।

Advertisement

ডিএসই জানিয়েছে, আলহাজ টেক্সটাইলকে ১০ কোটি ৮৩ লাখ ৯১ হাজার ৪৫৭ টাকা পরিশোধ করেছে অগ্রণী ব্যাংক। এর আগে গত ১৪ জানুয়ারি হাইকোর্টের বিচারপতি মোহাম্মদ মামুনুন রহমান ও বিচারপতি আশিষ রঞ্জন দাসের দ্বৈত বেঞ্চে বস্ত্রখাতের আলহাজ টেক্সটাইল লিমিটেডের পক্ষে মামলার রায় দেন।

রায়ে আদালত ১৫ দিনের মধ্যে আলহাজ টেক্সটাইলের এফডিআর করা ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধ করতে অগ্রণী ব্যাংককে বলে। এছাড়া পাওনা টাকা পরিশোধ করে সাত দিনের মধ্যে আদালতকে অবহিত করার জন্য অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালককে নির্দেশ দেয়া হয়।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, আলহাজ টেক্সটাইল মিলস লিমিটেড ১৯৬১ সালে প্রাইভেট লিমিটেড কোম্পানি হিসেবে রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মসে নিবন্ধিত (আরজেএসসি) হয়। আর ১৯৬৭ সালে এটি পাবলিক লিমিটেড কোম্পানিতে পরিণত হয়।

Advertisement

১৯৭২ সালে সরকার কোম্পানিটিকে জাতীয়করণ করে এবং এর ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস কর্পোরেশনের (বিটিএমসি) কাছে ন্যস্ত করা হয়। পরে ১৯৮২ সালে আলহাজ টেক্সটাইলকে বেসরকারিকরণ এবং এর দায়িত্ব আগের মালিকদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

ব্যবস্থাপনা হস্তান্তরের সময় দুই কোটি ২৯ লাখ ২০ হাজার ৮০৫ টাকার দায় উদ্ভূত হয়। কিন্তু এ ঋণ উদ্ভূত হয়েছিল বিটিএমসির সময়ে। তাই এ অর্থ পরিশোধের জন্য সরকার, বিটিএমসি, বিটিএমএ ও ব্যাংকের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে কোম্পানি, বিটিএমসি ও ব্যাংকের মধ্যে একটি ত্রিপক্ষীয় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়।

চুক্তি অনুসারে ঋণ পরিশোধের জন্য একটি বিশেষ তহবিল গঠন করা হয়। এ তহবিলের ক্যাশ ক্রেডিট কোম্পানির পক্ষ থেকে এবং সুদ ব্যাংকের পক্ষ থেকে পরিশোধ করার কথা ছিল। ১৯৮৯ থেকে ১৯৯২ সাল পর্যন্ত এ তহবিলে দুই কোটি ৯ লাখ টাকা জমা হয়। পরে চুক্তি অনুসারে বিশেষ তহবিলটিকে স্থায়ী আমানতে (এফডিআর) রূপান্তর এবং লিয়েন মার্ক করে অগ্রণী ব্যাংকের অ্যাকাউন্টে রাখা হয়।

২০০৮ সালে ঋণ পরিশোধের পর অ্যাকাউন্টে ২৪ কোটি ৯৫ লাখ ৪২ হাজার ১৭৮ টাকা অবশিষ্ট থেকে যায়। এফডিআরের অবশিষ্ট অর্থ থেকে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ কোম্পানিকে পাঁচ কোটি সাত লাখ ৬৪ হাজার ৭৯১ টাকা পরিশোধে সম্মত হয়। এ কারণে কোম্পানি এফডিআরে টাকা জমা দেয়া বন্ধ এবং অগ্রণী ব্যাংকের বিরুদ্ধে ২০০৯ সালে রিট করে।

Advertisement

২০১১ সালে সুদসহ এফডিআরের অর্থ কোম্পানির অনুকূলে পরিশোধের জন্য অগ্রণী ব্যাংককে নির্দেশ দেন আদালত। এ আদেশের বিরুদ্ধে ২০১৪ সালে আপিল করে ব্যাংক কর্তৃপক্ষ। আপিলেও ব্যাংককে এক মাসের মধ্যে কোম্পানিকে এফডিআরের টাকা পরিশোধের নির্দেশ দেয়া হয়।

কিন্তু নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গেলেও টাকা না পেয়ে কোম্পানি সাপ্লিমেন্টারি রুলের জন্য আবেদন করে। এতে বলা হয়, ১৯৮৯ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত এফডিআরে অর্থের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৫২ কোটি ৫৬ লাখ টাকা। কিন্তু ব্যাংক মাত্র আট কোটি ১১ লাখ ২৫ হাজার টাকা পরিশোধ করেছে।

পরে ২০১৮ সালে আদালতের নির্দেশে আলহাজ টেক্সটাইল ও অগ্রণী ব্যাংকের যৌথ সম্মতির মাধ্যমে পাওনা টাকার পরিমাণ নির্ধারণে পিনাকী অ্যান্ড কোম্পানিকে নিরীক্ষক হিসেবে নিয়োগ করা হয়। আর এ নিরীক্ষকের প্রতিবেদনের ভিত্তিতেই অগ্রণী ব্যাংককে আলহাজ টেক্সটাইলের অনুকূলে ৫৫ কোটি ৮৩ লাখ টাকা পরিশোধের নির্দেশ দিয়ে বিষয়টির নিষ্পত্তির নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।

এমএএস/এএইচ/এমএস