দেশজুড়ে

৫ বছর পর পরিবার খুঁজে পেল খুশনাহার

ময়মনসিংহের গফরগাঁও উপজেলার চৌকা গ্রামের মৃত হারুনের স্ত্রী খুশনাহার (৪৬)। দীর্ঘ পাঁচ বছর আগে মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ঘর ছাড়েন তিনি। এখানে-ওখানে ঘুরতে ঘুরতে চলে আসেন টেকনাফে। এখানে রোদ-বৃষ্টি-ঝড়ে গাছের ছায়ায়, দোকানের বারান্দায় ভবঘুরে বছর দেড়েক ধরে কেটেছে জীবন। কিন্তু 'মানসিক রোগীদের জন্য তহবিল' (মারোত) সংগঠনের বদান্যতায় গতকাল রোববার পরিবার ফিরে পেয়েছে ‘পাগলী’ খুশনাহার।

Advertisement

টেকনাফের সীমান্ত শহরে কয়েক যুবকের প্রয়াস 'মারোত'র কারণে তার ঘরে ফিরতে পারাকে মানবতার জয় বলে আখ্যা দিয়েছেন টেকনাফের উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. রবিউল হাসান।

স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন মারোতের সভাপতি আবু সুফিয়ান বলেন, খুশনাহার বছর দেড়েক ধরে টেকনাফ শহরের এখানে ওখানে থেকেছেন। যখন যার কাছে যা পেয়েছে খেয়েছেন। গত ১৮ জুন রাতে হঠাৎ বৃষ্টি হয়। এসময় বাড়ি ফেরার পথে মারোত'র উপদেষ্টা সাইফুল বৃষ্টির তোড়ে একটি দোকানের বারান্দায় গিয়ে দাঁড়ান। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সেখানে দৌঁড়ে আসেন খুশনাহারও। কৌতূহলে তার নাম জানতে চাওয়া হলে খতিজা নাম বলে, জানায় তার বাড়ি ময়মনসিংহ। তার কয়েকটা ছবি তোলে, তার দেয়া তথ্যগুলো লিখে পরিচয় জানতে চেয়ে সংগঠনের ফেসবুকে পরেরদিন আপলোড দেয়া হয়। এরপর ময়মনসিংহ থেকে ফোনে যোগাযোগ করে তার এক বোন। তিনি জানান তার নাম খতিজা নয়, খুশনাহার। পাঁচ বছর আগে অপ্রকৃতস্থ হয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যান। তখন থেকে পুরো ময়মনসিংহ জেলায় খোঁজা হয় তাকে। না পেয়ে আশা ছেড়ে দেয় তারা।

তিনি আরও জানান, সংগঠনের কর্মকর্তা ঝুন্টু বড়ুয়ার তত্ত্বাবধানে যোগাযোগ রেখে কাগজপত্রসহ আসতে বললে তার এক দুলাভাই ও ভাতিজা খুশনাহারের (পাগলীর) এনআইডি কার্ড ও অন্যদের পরিচয়পত্রসহ টেকনাফ আসেন। তা পর্যালোচনা করে সত্যতা নিশ্চিত হওয়ায় উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে খুশনাহারকে স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়।

Advertisement

ইউএনও রবিউল হাসান বলেন, সীমান্ত শহর টেকনাফে ইয়াবার আগ্রাসনের কারণে সর্বত্র দুর্নাম ছড়ানো। কিন্তু সেই শহরে কিছু পেশাজীবী নিজস্ব অর্থ দিয়ে মানসিক ভারসাম্যহীন মানুষগুলোকে স্বাভাবিক জীবন দানে সচেষ্ট ভূমিকা রাখছে। খুশনাহারসহ ১৭ মানসিক ভারসাম্যহীনকে স্বজনদের কাছে ফিরিয়ে দেয়া চাট্টিখানি কথা নয়। এটি মানবিকতার জয়, মানবতার জয়। এসময় উপস্থিত ছিলেন উপজেলা পরিষদ ভাইস চেয়ারম্যান মৌলানা মোহাম্মদ ফেরদৌস আহমেদ জমিরি, বাহারছড়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মৌলানা আজিজ উদ্দিন, টেকনাফ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলম, যুবলীগ নেতা নুরুল আমিন, মারোত জয়েন্ট সেক্রেটারি মোবারক হোসাইন, আইটি সেক্রেটারি মোহাম্মদ হোসাইন, আরিফুল হক রোহান ও উপজেলা পরিষদের বিভিন্ন বিভাগের কর্মকর্তা এবং স্থানীয় ও জাতীয় গণমাধ্যমের সংবাদকর্মীবৃন্দ।

অনুষ্ঠান শেষে রোববার রাতে মারোত এবং উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার পক্ষ থেকে ভিকটিম এবং পরিবারের সদস্যদের টেকনাফ থেকে ঢাকা বাসের টিকেট, নতুন কাপড় ও শুভেচ্ছা উপহার তুলে দেয়া হয়।

সায়ীদ আলমগীর/এমএএস/এমএস

Advertisement