খেলাধুলা

ভারত ম্যাচের আগে অনুশীলনে বাড়তি উদ্যমী টাইগাররা

রাত পোহালে ভারতের সঙ্গে মহারণ। শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতিটা ভাল মত করে নেয়া খুব জরুরী। সেই বোধ-উপলব্ধি আর তাগিদ থেকেই আজ সকাল-সকাল এজবাস্টনে এসে হাজির টাইগাররা।

Advertisement

স্থানীয় সময় সকাল ১০টা থেকে প্র্যাকটিস শুরুর কথা থাকলেও মাশরাফি বাহিনীর টিম বাস মাঠে এসে পৌঁছলো সকাল সাড়ে নয়টার অল্প কয়েক মিনিট পরই। ঠিক ৯টা ৪০ মিনিটের দিকে শুরু হলো অনুশীলন।

প্রথমেই ড্রেসিংরুমের ঠিক সামনে গোল জটলা করে গা গরমের ফুটবল খেলা। তখনো ঠিক বোঝা যাচ্ছিলো না কে আছেন আর কে নেই। কেউ কেউ ধীরে সুস্থ্যে বেরিয়ে আসলেন। যথারীতি অধিনায়ক মাশরাফি সবার পরে যোগ দিলেন।

তারপর একা একা ঠিক মাঠের মাঝখানে গিয়ে মিনিট তিনেক খুব কাছে দাঁড়িয়ে উইকেট দেখলেন। তখন মাঠকর্মীরা পিচে শেষ মুহূর্তে ‘তুলির আঁচড়’ দিচ্ছিলেন। তাদের পাশে দাঁড়িয়ে আনমনে বেশ খুটিয়ে এক দৃষ্টিতে উইকেটের দিকে তাকিয়ে থাকলেন। তারপরও এক সময় আস্তে করে চলে গেলেন নিজের প্র্যাকটিস কর্মকান্ডে।

Advertisement

এটা ঐচ্ছিক অনুশীলন নয়, তাই খুব সমস্যা না থাকলে প্র্যাকটিসে অনুপস্থিত থাকার কথাও না। তারপরও দেখা মিললো না তামিম ইকবালের। প্রায় আধঘন্টা পর মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমাম জানালেন, তেমন কিছু নয়। বড় কোন ইনজুরি বা শারীরিক সমস্যা নয়। তামিমের খুব ভাল লাগছিল না, তাই আজকের অনুশীলনে আসেনি সে।

অনেক সময় এমনও হয় ক্রিকেটারদের কেউ প্র্যাকটিসে না আসলেও দলের সাথে টিম বাসে আসেন এবং ড্রেসিংরুমে বসে থাকেন। মিডিয়া ম্যানেজার রাবিদ ইমামের দেয়া তথ্য অনুযায়ী তামিম মাঠেই আসেননি। হোটেল রুমেই রয়ে গেছেন। তবে চিন্তার কিছু নেই। এমন অভয়বাণী মিলেছে টিম ম্যানেজমেন্ট থেকে। সংবাদ মিলেছে সেটা কোন বড় কিছু নয়। ভাল লাগেনি তাই প্র্যাকটিস করেননি তামিম।

আর যার খেলা নিয়ে সংশয়, সেই মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ শেষ পর্যন্ত টেনে গেলেন। ব্যাটিংটা ঝালিয়েও নিলেন। তবে তার আগে রিয়াদের সময় কাটলো ফিজিও চন্দ্রমোহনের সঙ্গে নানা ফিজিক্যাল ড্রিল করে। অন্তত ঘন্টাখানেক ফিজিও রিয়াদকে নিয়েই কাজ করলেন। কখনো স্ট্রেচিং আবার কখনো বা হালকা ফিজিক্যাল ট্রেনিং।

এক সময় পুরো দলকে নিয়ে অল্প কয়েক মিনিট একসঙ্গে গোল হয়ে দাঁড়িয়ে কি যেন ব্রিফ করলেন হেড কোচ স্টিভ রোডস। তারপর পরই রোডস ব্যস্ত হয়ে পড়লেন ফিল্ডিং প্র্যাকটিস করানোর কাজে। কাকে নিয়ে ফিল্ডিং অনুশীলন করালেন শুনবেন?

Advertisement

কে ছিলো না বলুন? সৌম্য, লিটন, অধিনায়ক মাশরাফি, সাকিব-মোস্তাফিজসহ আরও কজন। প্রায় মিনিট বিশেক তাদের ডানে কিংবা বাঁয়ে বল ঠেলে দিলেন। আর থ্রো'টাও ঠিক উইকেটের ওপরে বা একদম কাছে চাইলেন। সবাই প্রাণপন চেষ্টা করলেন। বেশিরভাগ এক ট্রিপে বল ধরে ফিল্ডিং কিপার রোডসের গ্লাভসে ঠিক মতই দিতে পারলেন।

এ মাঠের ভেতরে সেন্টার উইকেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিসের সুযোগ দেয়া হয়নি। শেরে বাংলার পাশে একাডেমি মাঠের মত এজবাস্টনেও ঠিক পাশেই প্র্যাকটিস গ্রাউন্ড। টাইগারদের প্র্যাকটিস হলো ঠিক সেখানেই। সেখানে টপ ও মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানদের প্রায় সবাইকে দেখা গেল পাশাপাশি তিন জন নেটে ব্যাটিং প্র্যাকটিসে।

যেহেতু তামিম নেই, তাই সৌম্য, লিটন, মোসাদ্দেক, মুশফিক, সাকিব-সাব্বির আর মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ সবাই নেটে বেশ খানিকক্ষণ ব্যাটিং প্র্যাকটিস করলেন। ভাববেন না বোলাররা নেটে বোলিং করেননি, করেছেন। মোস্তাফিজ আর রুবেল একটানা অনেকক্ষণ বোলিং করলেন। কখনও সৌম্য আবার কখনও লিটন, মুশফিক, মোসাদ্দেকের পর সাব্বির, সাকিব, রিয়াদকে।

ভারতের বিপক্ষে ম্যাচ মানে এমনিতেই অন্যরকম চাপ। তার ওপর সেমিফাইনালে খেলার সম্ভাবনা জিইয়ে রাখতে এ ম্যাচে জয় ছাড়া বিকল্প নেই। এমন এক ম্যাচে নিজেদের নার্ভ ঠিক রেখে সামর্থ্যের সেরাটা মেলে ধরাই হবে একমাত্র কাজ।

মাশরাফির দল কাল মাঠে নেমে কী করবে? তার উত্তর দেবে সময়। তবে এখনকার খবর, এমন হাই ভোল্টেজ ম্যাচে যে দৃঢ়প্রত্যয়, সংকল্প আর উদ্যম দরকার- ম্যাচের ২৪ ঘন্টা আগের অনুশীলনে টাইগারদের চোখমুখ আর শরীরী অভিব্যক্তিতে তারই দেখা মিললো। সবাই শতভাগ সিরিয়াস। তবে চোখে মুখে চিন্তার রেখা নেই কারো। ফুরফুরে মেজাজেই পুরো দল। এমন এক গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে যে সেটাই দরকার।

এআরবি/এসএএস/জেআইএম