দেশজুড়ে

নুসরাত হত্যায় সাক্ষ্য দিলেন সহপাঠী নিশাত

ফেনীর সোনাগাজী উপজেলার মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার ঘটনায় করা মামলায় তৃতীয় দিনের মতো সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে।

Advertisement

সোমবার ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক মামুনুর রশিদের আদালতে নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ শেষে আসামিপক্ষের ১৬ কৌঁসুলি তাকে জেরা করেন। পরে অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানা ফূর্তির সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে আদালত মঙ্গলবার (২ জুলাই) পরবর্তী দিন ধার্য করেন।

এর আগে গত রোববার হত্যা মামলার বাদী ও নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ ও আসামিপক্ষের কৌঁসুলিদের জেরা শেষ হয়েছে।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) পরিদর্শক মো. শাহ আলম বলেন, আদালতে মামলার বাদী ও নুসরাতের দুই সহপাঠী সাক্ষ্য দিয়েছেন। বাদীর সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলেও অপর দুজনের সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা চলছে।

Advertisement

আদালত সূত্রের বরাত দিয়ে সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) হাফেজ আহাম্মদ বলেন, আদালতে নুসরাতের ভাই ও মামলার বাদী মাহমুদুল হাসান নোমানের সাক্ষ্যগ্রহণ এবং জেরা শেষ হয় রোববার। আজ সোমবার নুসরাতের সহপাঠী নিশাত সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ ও জেরা শেষ হলেও অপর সহপাঠী নাসরিন সুলতানার সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হলে আদালত মঙ্গলবার পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। এসময় আদালতের কাঠগড়ায় ১৬ আসামির সবাই উপস্থিত ছিলেন বলে তিনি জানান।

২৯ মে ফেনীর সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. জাকির হোসাইনের আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক ও মামলার তদন্ত কর্মকর্তা মো. শাহ আলম ১৬ জনকে অভিযুক্ত করে ৮০৮ পৃষ্ঠার চার্জশিট দেন।

৩০ মে আসামিদের আদালতে হাজির করা হলে শুনানি না করে মামলাটি ফেনীর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে পাঠানোর আদেশ দিয়ে ১০ জুন শুনানির দিন ধার্য করেন আদালত।

১০ জুন আদালত চার্জশিট আমলে নিয়ে ২০ জুন চার্জ গঠন করেন। ২৭ জুন বাদীসহ তিনজনের সাক্ষ্যগ্রহণের দিন ধার্য করেন আদালত। ওই দিন সাক্ষ্য প্রদান শেষে বাদীকে জেরা করেন আইনজীবীরা।

Advertisement

নুসরাত হত্যা মামলার চার্জশিটভুক্ত আসামিরা হলেন- অধ্যক্ষ এস এম সিরাজ উদ দৌলা, কাউন্সিলর ও পৌর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাকসুদ আলম, শিক্ষক আবছার উদ্দিন, সহপাঠী আরিফুল ইসলাম, নূর হোসেন, কেফায়াত উল্যাহ জনি, মোহাম্মদ আলা উদ্দিন, শাহিদুল ইসলাম, অধ্যক্ষের ভাগনি উম্মে সুলতানা পপি, জাবেদ হোসেন, জোবায়ের আহমেদ, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, মো. শামীম, কামরুন নাহার মনি, আবদুর রহিম ওরফে শরিফ, ইফতেখার হোসেন রানা, এমরান হোসেন মামুন, মহিউদ্দিন শাকিল, হাফেজ আবদুল কাদের ও আওয়ামী লীগ সভাপতি ও নুসরাতের মাদরাসার সহ-সভাপতি রুহুল আমিন।

এ মামলায় মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলা, নুর উদ্দিন, শাহাদাত হোসেন শামীম, উম্মে সুলতানা পপি, কামরুন নাহার মনি, জাবেদ হোসেন, আবদুর রহিম ওরফে শরীফ, হাফেজ আবদুল কাদের ও জোবায়ের আহমেদ, এমরান হোসেন মামুন, ইফতেখার হোসেন রানা ও মহিউদ্দিন শাকিল আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে জবানবন্দি দিয়েছেন।

চলতি বছরের ২৭ মার্চ সোনাগাজী ইসলামিয়া ফাজিল মাদরাসার আলিম পরীক্ষার্থী নুসরাত জাহান রাফিকে যৌন নিপীড়নের দায়ে মাদরাসার অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাকে গ্রেফতার করে পুলিশ। ৬ এপ্রিল ওই মাদরাসার সাইক্লোন শেল্টারের ছাদে নিয়ে অধ্যক্ষের সহযোগীরা নুসরাতের শরীরে আগুন ধরিয়ে দেয়। টানা পাঁচদিন মৃত্যুর সঙ্গে লড়ে মারা যান নুসরাত জাহান রাফি।

এ ঘটনায় নুসরাতের বড় ভাই মাহমুদুল হাসান নোমান বাদী হয়ে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলাসহ আটজনের নাম উল্লেখ করে সোনাগাজী মডেল থানায় মামলা করেন।

এমবিআর/জেআইএম