জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জিএম কাদের বলেছেন, ওনি (এরশাদ) শঙ্কা মুক্ত নন। ওনার বয়স এবং ওনার যে সমস্যা ও জটিলতা, সব মিলিয়ে ডাক্তাররা এখনও ওনাকে নিবিড় পর্যবেক্ষণ করছেন।
Advertisement
সোমবার রাজধানীর বনানীতে জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যানের কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গাসহ কেন্দ্রীয় নেতারা।
জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদের ছোট ভাই বলেন, ওনার (এরশাদ) আজকে সকাল পর্যন্ত যে শারীরিক অবস্থা দেখেছি, ডাক্তারদের ভাষায় সেটা হচ্ছে শারীরিক অবস্থা আগের দিনের মতো স্থিতিশীল রয়েছে। অর্থাৎ অপরিবর্তিত আছে।
আরও পড়ুন>> বিদেশে চিকিৎসা নিতে চান না এরশাদ
Advertisement
তিনি বলেন, চিকিৎসকদের ভাষায়, এই অপরিবর্তিত থাকা হলো শুভ লক্ষণ। যেহেতু ওনারা শঙ্কা করছিলেন যে, অবস্থার অবনতি হতে পারে। অবনতি যখন হয় নাই, স্থিতিশীল আছে। এটা শুভ লক্ষণ।
‘ওনার গতকাল লাংয়ের ইনফেকশন যতটুকু দেখা গিয়েছিল, আজকে সকালে দেখা যাচ্ছে ইনফেকশনটা একটু কমের দিকে। গতকাল যে ওনার শ্বাসকষ্ট হচ্ছিল। অক্সিজেন আন্ডারপ্রেসার দিতে হতো। এখন ওনারা (চিকিৎসকরা) দুই ঘণ্টা আন্ডার প্রেসার অক্সিজেন দিচ্ছেন। দুই ঘণ্টা নরমাল অক্সিজেন দিচ্ছেন। ওনারা (চিকিৎসকরা) এ রকম ট্রেন্ড চালু থাকলে কিছুক্ষণ পর স্বাভাবিক অক্সিজেন দেয়া হবে। তারপর যখন ইম্প্রুভমেন্ট হবে তখন স্বাভাবিক শ্বাস-প্রশাস নেবেন’,- বলেন তিনি।
জিএম কাদের বলেন, ওনার কিডনিতে ইনফেকশনের কারণে ফ্যাংশন সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ডাক্তাররা সেদিকে দৃষ্টি রাখছেন। ডাক্তারদের কথায়, অবস্থা অপরিবর্তিত। সামনের দিকে প্রতিদিনিই ওনি ইম্প্রুভমেন্ট হবেন।
আরও পড়ুন>> এরশাদকে দেখতে হাসপাতালে কাদের
Advertisement
তিনি বলেন, আমি দলের পক্ষ থেকে, ওনার সব শুভাকাঙ্ক্ষী, আত্মীয়-স্বজন সবার পক্ষ থেকে আপনাদের মাধ্যমে দেশবাসীর কাছে দোয়া প্রার্থনা করতে চাই, যেন উনি দ্রুত সুস্থ হয়ে ওঠেন। আবার স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসেন। আবার দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে নিয়োজিত করতে পারেন।
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে যারা তার মৃত্যুর কথা বলে স্ট্যাটাস দিয়েছেন তাদের প্রতি অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, আমি অনুরোধ করবো, কোনো স্ট্যাটাস এ রকম দেবেন না। যাদের নামে এসেছে স্ট্যাটাসগুলো, তা সবসময় ওনাদের নাও হতে পারে। অনেক সময় দেখা যায়, যে আইডি ফেইক হয়। আবার অনেক সময় দেখা যায়, একজনের আইডি আরেকজন চালাচ্ছেন। যেটাই হোক, এটা যেন ভবিষ্যতে না হয়, এটার জন্য আমরা সবাইকে অনুরোধ করব।
জাপার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান বলেন, বিভিন্ন ধরনের মানুষের কাছ থেকে বিভিন্ন ধরনের কথা, এগুলো আমাদের বিব্রত করেছে। কিছু মানুষ গুজব ছড়িয়ে মানুষের মাঝে উদ্বেগ-উৎকণ্ঠা বাড়িয়ে দিচ্ছেন। যতটুকু সম্ভব সঠিক তথ্যগুলো আপনাদের মাধ্যমে পৌঁছে দেয়ার। আপনারা যেন সব সময় অবহিত থাকেন। আমি আপনাদের সবাইকে অনুরোধ করবো, আমাদের যে বক্তব্য, এর বাইরে আর কোনো বক্তব্য আপনারা নিজে থেকে প্রচার করবেন না। ফেসবুকের মাধ্যমে কেউ কোনো তথ্য দেবেন না প্লিজ। আমরা তার শারীরিক অবস্থা যতটুকু সম্ভব জানি, তা আপনাদের অবহিত করব। সিএমএইচ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলাপ করেছি, ওনারাও আইএসপিআরের মাধ্যমে সংবাদগুলো প্রচার করার চেষ্টা করবেন। যদি কোনো সংবাদ না পান, তাহলে বুঝবেন যে ওনার অবস্থা আগের মতো আছে। স্থিতিশীল আছে। আর যদি কোনো সমস্যা হয়, সংকট হয়, যত দ্রুত সম্ভব আমরা আপনাদের জানানোর চেষ্টা করব।
গোলাম মোহাম্মদ কাদের বলেন, এ মুহূর্তে ওনাকে কোথাও শিফট করাটা ডাক্তাররা সাজেস্ট করছেন না। ওনারা যেভাবে চিকিৎসা করছেন, ওনারা মনে করেন, এ মুহূর্তে ওনাকে (এরশাদ) কোথাও শিফট করাটা সঠিক কোনো সিদ্ধান্ত হবে না। অথবা ওনার এখানে যে চিকিৎসা হচ্ছে তাতে তারা (চিকিৎসকরা) যথেষ্ট সন্তুষ্ট। এই শারীরিক অবস্থায় ওনাকে শিফট করাটা সঠিক হবে না। তবে এটা আমাদের ওপর ছেড়ে দিয়েছেন। আমরা ডাক্তারদের পরামর্শ বা বিশেষজ্ঞদের পরামর্শ ছাড়া এ ধরনের সিদ্ধান্তে যাব না।
আরও পড়ুন>> এই বুঝি আসে দুঃসংবাদ, বুক কেঁপে উঠছে বিদিশার
তিনি বলেন, বিভিন্ন মেডিকেশনের কারণে উনি আধা ঘুম, আধা জাগা অবস্থায় আছেন। আমরা যাওয়ার পরে আমি কথা বললাম, ভাই আপনি কেমন আছেন? ওবায়দুল কাদের সাহেব যখন আসছেন, তখন ডাক্তাররা বললেন, স্যার আপনার জন্য মন্ত্রী এসেছেন, আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের সাহেব এসেছেন। তখন উনি চোখ মেলে দেখেছেন। উনি কোনো কথা বলতে পারেননি। যেহেতু ওনার মুখে অক্সিজেন মাক্স আছে। ওনার সেন্স এখনও আছে, ওইটা বোঝা গেল।
গত ২৬ জুন সিএমএইচ ক্রিটিক্যাল কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) নিবিড় পর্যবেক্ষণে নেয়া হয় এরশাদকে। এরপরের দিন জাপা মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা বলেন, শারীরিক অবস্থা বিবেচনা-সাপেক্ষে বৃহস্পতিবার তাকে সিঙ্গাপুরে নেয়া হতে পারে।
আরও পড়ুন>> স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে কথা বললেন এরশাদ
সর্বশেষ গত ২০ জানুয়ারি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসার জন্য যান এরশাদ। সেখান থেকে ফেরেন ৪ ফেব্রুয়ারি। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে অর্থাৎ ২০১৮ সালের ১০ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য সে দেশে যান এরশাদ। ভোটের মাত্র তিনদিন আগে ২৬ ডিসেম্বর ফেরেন তিনি।
এইউএ/জেডএ/এমকেএইচ