ভোলার চর নিজাম গ্রামে হাজার হাজার একর বন কর্মকর্তা ও প্রহরীদের সঙ্গে পাহারা দেয় রিউ নামের এক মায়াবী হরিণ। মানুষ দেখলে ভয় পায় না, কিংবা পালিয়েও যায় না। দিন-রাত প্রহরীদের সঙ্গে বন পাহারা দেয়। ব্যতিক্রমী এ হরিণটি স্থানীয়দের কাছে বেশ জনপ্রিয়।
Advertisement
রিউকে তার খাবার বনে গিয়ে সংগ্রহ করতে হয় না। চর নিজামের মানুষ ভালবেসে প্রতিদিনই তাকে খাবার দেয়। মানুষের সঙ্গে বন্ধুত্ব গড়েছে সে। এমন কাণ্ড দেখার জন্য ভোলার বিভিন্ন উপজেলাসহ অন্য জেলা থেকেও প্রতিদিন মানুষ ছুটে আসেন তাকে এক নজর দেখতে।
চর নিজাম এলাকার বাসিন্দা মো. মহিউদ্দিন জানান, ‘হরিণ রিউ’ বনরক্ষীদের সঙ্গে বন পাহারা দেয়। পাহারা শেষ হলে মানুষের ঘরের আশপাশে ঘুরে বেড়ায়। সবাই তাকে ভালবেসে খাবার দেয়। নাম ধরে ডাক দিলেই সে ছুটে আসে।
স্থানীয় ব্যবসায়ী ফারুক জানান, হরিণটির ক্ষুধা লাগলে যদি কেউ খাবার না দেয় তাহলে লোকজনের বাড়ির রান্না ঘরে ঢুকে বসে থাকে। ভাত দিলে খেয়ে আবার চলে যায়। হরিণটি মানুষের রাগ-অভিমানও বুঝতে পারে। কেউ তাকে রাগ করে কথা বললে সে চলে যায়। আবার কেউ ভালবেসে ডাকলে তার কাছে চলে আসে। সাবই হরিণটিকে অনেক ভালবাসে।
Advertisement
স্থানীয় বাসিন্দা মালেক বলেন, চর নিজামের বনে অনেক হরিণ আছে। অন্য হরিণের সঙ্গে রিউয়ের দেখা হয়, তাদের সঙ্গে পানি ও খাবারও খায়। কিন্তু ও তাদের সঙ্গে সে কখনও চলে যায়নি। এলাকার মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে হরিণটি বনে চলে না গিয়ে লোকালয়েই রয়ে গেছে।
ভোলা শহরের কালি বাড়ি রোড এলাকার মো. মোসলে উদ্দিন জানান, এক বন্ধুর কাছে হরিণের কথা শুনে সেখানে ছুটে যাই। হরিণের এমন কাণ্ড দেখে আমি মুগ্ধ।
সরেজমিনে বন বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ভোলার মনপুরা উপজেলার উত্তর সাকুচিয়া ইউনিয়নের ৯ নং ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত চর নিজাম। অনেকে কালকিনির চরও বলে। সেখানে ৫ হাজার ২৩৮.৭৩ একর বনভূমিতে ৩ শতাধিক হরিণ রয়েছে। চরের চারদিকে বঙ্গোপসাগর। জনসংখ্যা প্রায় ৬ হাজার।
চর নিজাম (কালকিনি) বিট কর্মকর্তা মো. এস এম আমির হোসেন জানান, প্রায় ২ বছর আগে পানিতে ভেঁসে আসে হরিণটি। তখন সে খুব অসুস্থ ছিল। আমরা চিকিৎসা করে সুস্থ করে বনে অবমুক্ত করি। কিন্তু সে আবার আমাদের অফিসের সামনে যেখানে চিকিৎসা করা হয়েছিল সেখানেই চলে আসে। তারপর আবারও তাকে বনে ছেড়ে দিয়ে আসলেও সে চলে আসে। সেই থেকে এখানেই রয়ে গেছে। প্রহরীদের সঙ্গে বনে যায়, আবার চলে আসে। বলা যায় সে তাদের সঙ্গে বন পাহারা দেয়।
Advertisement
তিনি আরও জানান, তারা হরিণটির রিউ নাম দিয়েছেন। ওই নাম ধরে ডাকলেই সে চলে আসে। এলাকার মানুষ হরিণটিকে অনেক ভালবাসে। ধারণা করা যাচ্ছে সে মানুষের ভালবাসায় মুগ্ধ হয়ে লোকালয়েই রয়ে গেছে।
জুয়েল সাহা বিকাশ/এমএমজেড/এমকেএইচ