জাতীয়

‘বাবা, কেন তোমাকে আল্লাহর ঘরে যেতে দেবে না?’

রাজধানীর অন্যতম এক বৃহৎ সরকারি হাসপাতালের সিনিয়র স্টাফ নার্স আব্দুল মমিন (ছদ্মনাম)। বয়স পঞ্চাশের কোটা ছুঁই ছুঁই করছে। গত মে মাসের শেষ সপ্তাহে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের এক প্রজ্ঞাপনে হজ চিকিৎসক দলের একজন সদস্য হিসেবে তার নাম আসে। আসন্ন হজ মৌসুমে সৌদি আরবের পবিত্র মক্কা শরিফে বাংলাদেশি হজযাত্রীদের সেবা করার সুযোগের পাশাপাশি হজ পালনের সুযোগ পাওয়ায় ভীষণ খুশি হন।

Advertisement

প্রজ্ঞাপনের নির্দেশানা অনুসারে হজ ভিসার জন্য জরুরি ভিত্তিতে পাসপোর্ট তৈরি, স্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে প্রয়োজনীয় স্বাস্থ্য পরীক্ষা করা, ইনফ্লুয়েঞ্জা ও ম্যানেনজাইটিসের টিকা প্রদান শেষে স্বাস্থ্যসনদ সংগ্রহ করেন। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক চিকিৎসক ও নার্সসহ হজ চিকিৎসক দলের সদস্যদের কী কী দায়িত্ব পালন করতে হবে সে সম্পর্কিত সেমিনারেও অংশগ্রহণ করেন। হাসপাতাল থেকে একদিনের ছুটি নিয়ে স্ত্রী ও পরিবারের কনিষ্ঠ সদস্য ছয় বছরের শিশু কন্যাকে সঙ্গে নিয়ে বায়তুল মোকাররমে যান। সেখান থেকে প্রয়োজনীয় ইহরামের কাপড়, জোব্বাসহ প্রয়োজনীয় পণ্যসামগ্রী কিনে নেন।

ইহরামের কাপড় কেনার সময় ছোট্ট মেয়ের প্রশ্ন, ‘বাবা সাদা এ কাপড় কেন প্রয়োজন হয়।’ আব্দুল মমিন হেসে মেয়েকে বলেন, ‘আল্লাহর ঘরে যেতে এ সাদা কাপড় পড়তে হয়।’

আগামীকাল (২ জুলাই) ফ্লাইট হবে মনে করে আত্মীয়স্বজন ও বন্ধু-বান্ধবকে বাসায় ডেকে খাওয়া-দাওয়া করিয়ে সুস্থ দেহে যেন পবিত্র হজের দায়িত্ব পালনের পাশাপাশি হজ পালন করতে পারেন- সে জন্য দোয়া কামনা করেন।

Advertisement

কিন্তু হজ ফ্লাইটের মাত্র তিনদিন আগে গত ২৯ জুন খবর পান হজ চিকিৎসক দল থেকে তার নাম বাদ গেছে। শুধু তিনি একাই নন ৭৫ জনের মধ্যে ৫৪ জন নার্সের মনোনয়ন বাতিল করে তাদের স্থলে অন্য নতুন ৫৪ জনকে মনোনয়ন দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে।

এ খবর পাওয়ার পর থেকে তার ঘুম হারাম হয়ে গেছে। পবিত্র হজ পালনের সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া হয়েছে- তা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না।

আজ (সোমবার) সকালে এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে আব্দুল মমিন কান্নায় ভেঙে পড়ে বলেন, ‘কল্পনাও করতে পারিনি আল্লাহর ঘর পবিত্র কাবা শরিফ ও মদিনা শরিফ পরিদর্শনের সুযোগ পেয়েও তা হাতছাড়া হয়ে যাবে। কী অপরাধে মনোনয়ন বাতিল করা হলো, বাতিল করা হলে আগে কেন মনোনয়ন দেয়া হলো, কারা আগে মনোনয়ন দিল, কেনই বা এখন বাতিল করা হলো?’ এসব প্রশ্নের জবাব কার কাছে খুঁজবেন তা জানেন না মমিন হোসেন।

আব্দুল মমিন বলেন, ‘এ খবরে পরিবারের সকলে মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। সবচেয়ে খারাপ লেগেছে যখন মেয়েটি জানতে চেয়ে বলেছে, বাবা, কেন তোমাকে আল্লাহর ঘরে যেতে দেবে না?’

Advertisement

শুধু আব্দুল মমিন একা নন, তার মতো সরকারি বিভিন্ন হাসপাতালের আরও ৫৩ জন নার্সের একই অবস্থা। নাম প্রকাশ না করার শর্তে একাধিক নার্স জাগো নিউজের এ প্রতিবেদকের সঙ্গে আলাপকালে বলেন, ‘কী কারণে মনোনয়ন বাতিল করা হয়েছে তা জানি না, এর জন্য দায়ী কে বা কারা, তাদের কি কোনো সাজা হবে না?’

একসঙ্গে ৫৪ নার্সের মনোনয়ন কেন বাতিল করা হলো? এ প্রসঙ্গে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের সচিব আনিছুর রহমানের কাছে সোমবার সকালে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, হজ চিকিৎসক দলে চিকিৎসক ও নার্সদের মনোনয়ন দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। তারা আগে যে তালিকা দিয়েছিল ধর্ম মন্ত্রণালয় সে তালিকা প্রকাশ করেছে।

তিনি বলেন, তালিকা প্রকাশের পর স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় থেকে সেটি বাতিল করে নতুন তালিকা প্রকাশের ব্যাপারে লিখিতভাবে অনুরোধ জানানো হয়। তাদের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে পুনর্গঠিত নার্সদের নামের তালিকা প্রকাশ করা হয়। এখানে ধর্ম মন্ত্রণালয়ের বক্তব্যের কিছু নেই। কী কারণে পুরনো তালিকা বাতিল কিংবা নতুন তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে তার ব্যাখ্যা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ই দিতে পারবে।

এমইউ/বিএ/এমকেএইচ