হার্দিক পান্ডিয়া ফেরার সময় ৪৪.৫ ওভারে ভারতের স্কোর ছিল ৫ উইকেটে ২৬৭। এরপর বাকি ৩১ বলে ভারতের ইনিংসে থাকলো সাতটি ডট বল, ২০টা সিঙ্গেলস, তিনটি বাউন্ডারি এবং একটি ছক্কা! মহেন্দ্র সিং ধোনি এমন এক সময়ে এসে ছক্কাটি মারলেন, যখন হার প্রায় নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল।
Advertisement
শেষ পর্যন্ত ৩১ রানে হার। ভারের এমন স্লো ব্যাটিংয়ের কোনো ব্যাখ্যাই খুঁজে পাচ্ছেন না সাবেক অধিনায়ক সৌরভ গাঙ্গুলি। তিনি মনে করেন, ৩০০ রানের মধ্যে ভারত যদি অলআউট হয়ে যেতো তাহলে এত প্রশ্ন তৈরি হতো না কিংবা এত আফসোসও লাগতো না।
কিন্তু ইংল্যান্ডের বিপক্ষে রোববার ভারতের হারের ধরণ এবং তাদের জিততে না চাওয়ার মানসিকতা নিয়েই এখন ‘হায় হায়’ রব উঠে গেছে খোদ ভারতীয় মিডিয়ায়ও। কলকাতার আনন্দবাজার গ্রুপের অন্যতম পত্রিকা এই সময়ে ব্যানার শিরোনাম, ‘হারের মধ্যে বহু প্রশ্ন।’ সেখানেই তারা লিখে দিয়েছে, ‘একটা করে সিঙ্গেলস নিচ্ছিলেন তিনি (ধোনি) আর গ্যালারি থেকে ভেসে আসছিল, হায় হায়!’
এই সময় লিখেছে, হার্দিক ফেরার পরে কি কারণে ৪৫ নম্বর ওভার থেকেই হঠাৎই সিঙ্গেলস নেওয়ার রাস্তায় চলে গেলেন ধোনি আর কেদার, তার ব্যাখ্যা ম্যাচ শেষ হওয়ার পরও গোটা দেশের মতো খুঁজছে এজবাস্টনের গ্যালার। হার-জিতের ব্যবধান মাত্র ৩১ রানের বলেই প্রশ্নটা কোটি টাকার। এই প্রথম একটা ৩০০ প্লাস স্কোর তাড়া করতে হল আর সেখানেই মুখ থুবড়ে পড়ল টিম ইন্ডিয়া!
Advertisement
হার্দিক ফেরার পরে পাঁচ ওভারে ভারতের প্রয়োজন ছিল ৭১ রান। ক্রিজে ধোনি, সঙ্গে আইপিএলে তার চেন্নাই সুপার কিংসে খেলা সতীর্থ কেদার যাদব। আইপিএলের যুগে পাঁচ ওভারে ৭১ খুব হয়। সেখানে রান তাড়া করে ফিনিশ দূরের কথা, বিগ শটই বেরুলো না ধোনির ব্যাট থেকে। কেদার যাদবও একইভাবে খেললেন। বিগ শট বেরুলো না। একটা ম্যাচে হারতেই পারে যে কোনো দল; কিন্তু শেষ দিকে বিগ শট মারা অনীহায় বিরক্ত গ্যালারি আওয়াজ তুলল, ‘হায় হায় ধোনি!’ ক্রমাগত সিঙ্গেলস নিয়ে ম্যাচকে মেরে ফেলার অর্থ কি? সেই প্রশ্নে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়াও।
তাহলে কি হার্দিক পান্ডিয়া ফিরতেই ধোনি-কেদার ধরে নিয়েছিলেন, আর জেতার চেষ্টা করারই দরকার নেই? এজবাস্টনের ছোট মাঠে ইংল্যান্ড ইনিংসে আছে ১৩টা ছক্কা, সেখানে ভারতের ৫০ ওভারে মাত্র একটা! সেটাও ম্যাচ একেবারে মরে যাওয়ার পরে শেষ ওভারে মেরেছেন ধোনি। পরিস্থিতি যা-ই হোক না কেন, জেতার চেষ্টাটা থাকবে না কেন? হার্দিক (৩৩ বলে ৪৫) যতক্ষণ ছিলেন, ম্যাচে ভালো ভাবেই ছিল ভারত। কিন্তু তার পরেই ধোনি-কেদার জুটির ব্যাখ্যাহীন স্লো ব্যাটিং।’
এই সময়ের সেই রিপোর্টের শেষ দিকে কিন্তু ভারতকে সতর্ক করে দেয়া বাণী, ‘কী দাঁড়াল? কাল (মঙ্গলবার) বাংলাদেশ ম্যাচ না জিতলে সেমিফাইনালের রাস্তা ফের দুর্গম দেখাবে ভারতের!’
কলকাতার আরেক বিখ্যাত পত্রিকা আনন্দবাজার শিরোনামই করেছে, ‘বিস্ময় ব্যাটিংয়ে ধিক্কার জুটলো ভারতের।’ সুমিত ঘোষ নামে আনন্দবাজারের রিপোর্টার শুরুতেই লিখলেন, ‘এক-এক সময় এমনই উদ্ভট দেখাচ্ছিল ধোনি এবং কেদারের ব্যাটিং যে, নিজের গায়েই চিমটি কেটে দেখতে ইচ্ছে করছিল, সত্যিই লাইভ ম্যাচ হচ্ছে তো? নাকি কোনও ম্যাচের শুটিং?’
Advertisement
সুমিত ঘোষ প্রশ্ন তোলেন, ‘ধরা যাক বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল। ৩০ বলে ৬০ করতে হবে। কঠিন, কিন্তু অসম্ভব নয়। ক্রিজে মহেন্দ্র সিংহ ধোনি। যাকে ক্রিকেটের সর্বকালের সেরা ‘ফিনিশার’ বলা হয়। সঙ্গী কেদার যাদব। ভারত জিতবে? রবিবাসরীয় এজবাস্টনে যা দেখা গেল, এই অন্তিম প্রশ্নেরও আগে একটা প্রশ্ন এসে গিয়েছে। অবিশ্বাস্য হলেও সত্যি- ধোনি এবং কেদার জেতার চেষ্টা করবেন তো?’
পরক্ষণেই তিনি লিখলেন, ‘প্রত্যেক ওভারে যখন দরকার ১২ বা ১৩ রান করে, তখন তারা খুচরো রান নিয়ে খেলা চালিয়ে যাচ্ছেন। বড় হিট হবে কি, চেষ্টাই তো নেই। শেষের আধ ঘণ্টা রুদ্ধশ্বাস থ্রিলারের মতো হওয়ার কথা ছিল। হয়ে দাঁড়াল ফ্লপ ছবি। হয়তো বলা হবে, নেট রানরেট ঠিক রাখতে সাবধানি ব্যাটিং করার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন ধোনিরা। কিন্তু পাঁচ উইকেট হাতে নিয়েও এমন ব্যাটিংয়ের যা ব্যাখ্যাই দেওয়া হোক, ক্রিকেট ভক্তদের কাছে গ্রহণযোগ্য হওয়া কঠিন।’
আনন্দবাজারে কলাম লেখা সম্বরণ বন্দোপাধ্যয় প্রশ্ন তুলেছেন, ‘ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ঠিক কী পরিকল্পনা ছিল, স্পষ্ট হলো না।’ ভারতের এমন ব্যাটিং দেখে বিস্ময়ে বিস্মিত হয়ে গেছেন কিংবদন্তী ইংলিশ ফুটবলার গ্যারি লিনেকার, সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসের হুসেইন থেকে শুরু করে পাকিস্তানের ওয়াকার ইউনুস এবং শোয়ব আখতাররাও।
আইএইচএস/এমকেএইচ