আমাদের প্রাণের বাংলাদেশ বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগে আক্রান্ত দেশ। জলবায়ু পরিবর্তন এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকির মধ্যে থাকা দেশগুলোর মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান প্রথম সারিতে। দুর্যোগপূর্ণ দেশ হওয়া সত্ত্বেও আবহাওয়া ও জলবায়ু নদ-নদীর পানির অবস্থা, আগাম সতর্কীকরণ সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার ক্ষেত্রে দেশ তুলনামূলকভাবে অনেক পিছিয়ে আছে। কিন্তু সময়ের প্রেক্ষিতে এ বিষয়ে কারিগরি দিক থেকে উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের মাঝে পৌঁছে দেওয়ার সুযোগ রয়েছে।
Advertisement
লাগসই টেকসই কৃষি উৎপাদনের জন্য কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য কৃষকদের কাছে তাঁদের উপযোগী ভাষায় সময় মতো সহজ সরলভাবে সরবরাহ করা একান্ত প্রয়োজন। এসব তথ্যাদি কৃষি উৎপাদনে যথাযথ পরিকল্পনা গ্রহণে কার্যকর বাস্তবায়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে এ কথা জোর দিয়ে বলা যায়। আবহাওয়া জলবায়ুর গতিবিধির কোন ঠিক ঠিকানা নেই। এ কারণে কৃষি প্রায়ই ভোগান্তিতে পড়ে। প্রকৃতির অসীম দয়ার ওপর কৃষি টিকে আছে। সে ক্ষেত্রে আগাম আবহাওয়া বার্তা কৃষিকে অনন্য সফলতার দ্বার প্রান্তে পৌঁছাবে আধুনিক স্মার্ট কৃষি।
বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়নে জলবায়ু পরিবর্তনের ভবিষ্যৎ চ্যালেঞ্জ মোকাবিলার জন্য ২০১২ সালে বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা একটি কারিগরি সেমিনার আয়োজন করে। এ সেমিনারে অংশগ্রহণকারী দেশি ও বিদেশি বিশেষজ্ঞগণ বাংলাদেশে কৃষি আবহাওয়া সেবার মান তৃণমূল পর্যায়ে কার্যকর বিস্তৃকভাবে পৌঁছানোর জন্য ৩টি ক্ষেত্র চিহ্নিত করেন-
০১. আবহাওয়াবিদ ও কৃষিবিদদের সমন্বয়ে কৃষি আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থার উন্নয়ন, মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদি মৌসুমী পূর্বাভাস (Seasonal Forecast), কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবার মান বৃদ্ধি;
Advertisement
০২. কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবা তৃণমূল পর্যায়ে নিয়মিত পরিমিত ও দ্রুত পৌঁছে দেয়ার জন্য একটি দ্রুত ও কার্যকর যোগাযোগ ও বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন;
০৩. কৃষি আবহাওয়া পূর্বাভাস ও পরামর্শ সেবা তৃণমূল পর্যায়ে কাজে লাগানোর জন্য প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ করে একটি সঠিক কার্যকর সাড়া প্রদান ব্যবস্থার প্রবর্তন।
এ লক্ষ্যে বিশ্বব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় ২০১৭ সালে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর, বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড এবং কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সমন্বয়ে Bangladesh Weather and Climate Services Regional Project বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক অনুমোদিত হয়। বর্তমানে সংস্থা তিনটি পৃথক পৃথক পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর (ডিএই) কম্পোনেন্ট-সি-“কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প Agro-Meteorological Information Systems Development Project বাস্তবায়ন করছে ড. মাজহারুল আজিজের নেতৃত্বে। এ প্রকল্পের মেয়াদ জুলাই ২০১৬ থেকে জুন ২০২১ পর্যন্ত। আশা করা যায় প্রকল্প মেয়াদ শেষে এ স্মার্ট কার্যক্রম যথাযথভাবে চলমান রেখে কৃষিকে রক্ষা করে কৃষি সমৃদ্ধি সুনিশ্চিত করবে।
কার্যক্রমের মূল উদ্দেশ্য: মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে, আবহাওয়া এবং নদ নদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত উন্নত মানের এবং নির্ভরযোগ্য তথ্য সংগ্রহ করে কৃষকের কাছে উপযোগী কৌশলে পৌঁছানো এবং এ সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত সংগ্রহের উন্নত পদ্ধতি ব্যবহারে ডিএই’র সক্ষমতা বাড়ানো। তাছাড়া-
Advertisement
০১. কৃষি উৎপাদন টেকসই করার লক্ষ্যে কৃষকের কাছে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য পৌঁছে দেওয়া এবং আবহাওয়া ও জলবায়ুর ক্ষতিকর প্রভাবসমূহের সাথে কৃষকের খাপ খাওয়ানোর সক্ষমতা বৃদ্ধি করার কৌশল বাতলানো;
০২. বৈজ্ঞানিকভাবে স্বীকৃত কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি প্রচলন করা এবং যথোপযুক্ত তথ্য এবং উপাত্ত প্রণয়ন;
০৩. কৃষি ক্ষেত্রে আবহাওয়া সংক্রান্ত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য কৃষি আবহাওয়া এবং নদনদীর সামগ্রিক অবস্থা সম্পর্কিত তথ্যাদি কৃষকের উপযোগী সহজ সরল ভাষায় বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছানো;
০৪. কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণের মাধ্যমে ডিএই’র সক্ষমতা বৃদ্ধি করে আধুনিকায়ন;
০৫. বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় প্রাথমিকভাবে শুরু হওয়া কার্যক্রম পরবর্তীতে ৪৮৭ উপজেলা এবং ৪০৫১ ইউনিয়ন পরিষদে বিস্তার লাভ;
০৬. কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির জন্য অনুকূল আবহাওয়ার সর্বোত্তম ব্যবহার এবং প্রতিকূল আবহাওয়ায় ফসলের ক্ষতি থেকে কৃষিকে রক্ষা করা। কৃষকের অর্থনৈতিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটানো। স্টেট অব আর্ট’ টেকনোলজি ব্যবহার করে প্রাথমিকভাবে জেলা পরবর্তীতে উপজেলা ও ইউনিয়ন পর্যায়ের জন্য প্রয়োজন অনুযায়ী কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ প্রস্তুত করা। এ পরামর্শ সেবা প্রায় ২৪ মিলিয়ন কৃষকের কাছে পৌঁছানো. . .
প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রম
কম্পোনেন্ট-সি এর ৩টি সাব- কম্পোনেন্ট রয়েছে;
ক. সাব-কম্পোনেন্ট সি-১:বামিস (BAMIS-Bangladesh Agro-Meteorological Information System (BAMIS) পোর্টাল স্থাপন যা ইতোমধ্যে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা করেছে;
খ. সাব-কম্পোনেন্ট সি-২: প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন চলমান;
গ. সাব-কম্পোনেন্ট সি-৩: নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত প্রস্তুতকরণ এবং তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতি কৌশলের মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া।
ক. সাব-কম্পোনেন্ট সি-১: বামিস (BAMIS)পোর্টাল স্থাপন: এর আওতায় রয়েছে-
০১. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক একটি ওয়েব পোর্টাল BAMIS এবং এর অবকাঠামো তৈরি করা- যেখানে বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তর থেকে প্রাপ্ত আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত এবং বাংলাদেশ পানি উন্নয়ন বোর্ড থেকে প্রাপ্ত নদনদীর তথ্য উপাত্ত সন্নিবেশিত হবে। তথ্য উপাত্তসমূহ একটি কারিগরি কমিটির মাধ্যমে যাচাই বাছাই এবং সহজ সরল ভাষায় অনুবাদ করে কৃষকের কাছে তাঁদের গ্রহণ উপযোগী করে সরবরাহ করা হবে।
অপটিকাল লাইন ও সফটঅয়্যারের মাধ্যমে অন্যান্য অধিদপ্তর এবং ডিএই’র সদরদপ্তর থেকে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত সংযোগ রক্ষা করা হবে; ০২. উপজেলাসমূহের কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত ডাটাবেইজ এবং রিস্ক ম্যাপ তৈরির জন্য পরামর্শক সংস্থার মাধ্যমে উপজেলাসমূহের ফসল এবং ভূমি সংক্রান্ত তথ্যাদি ডিজিটালাইজড করা যা পরবর্তীতে জিআইএস এবং রিমোট সেনসিং এর কাজে ব্যবহৃত হবে;
০৩. পরামর্শক সংস্থার মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত তৈরি এবং তা বিশ্লেষণ করে চাষাবাদ বিষয়ক ভবিষ্যতের আগাম দিকনির্দেশনা প্রস্তুত করা;
০৪. কৃষি আবহাওয়া এবং নদনদীর তথ্য উপাত্ত, পূর্বাভাসসহ কৃষকদের সমস্যাসমূহের সম্ভাব্য সমাধান কৃষকের কাছে তাঁদের গ্রহণ উপযোগী করে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর এবং কৃষি তথ্য সার্ভিসের বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে নিয়মিত সরবরাহ করা।
খ. সাব-কম্পোনেন্ট সি-২: প্রশিক্ষণ, দক্ষতা বৃদ্ধি, প্রকল্প ব্যবস্থাপনা, প্রকল্প পরিবীক্ষণ এবং মূল্যায়ন (Training, Capacity Building, Project Management, Monitoring and Evaluation):
সাব-কম্পোনেন্ট সি-২ এর মাধ্যমে ডিএই, বিএআরআই, বিআরআরআই, বিজেআরআই, বিএসআরআইএর জনবলের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ এবং অন্যান্য কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এর মধ্যে রয়েছে-
০১. আধুনিক উপায়ে আবহাওয়া এবং নদনদীর অবস্থা সংক্রান্ত তথ্য উপাত্তসমূহ বিশ্লেষণ এবং কৃষকদের প্রয়োজনীয় পরামর্শ প্রদানের জন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সংশ্লিষ্টগণ, গবেষক এবং ৩০ হাজার কৃষক প্রতিনিধিকে কৃষি আবহাওয়া বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ প্রদান।
০২. জাতীয়, আঞ্চলিক, জেলা, এবং উপজেলা পর্যায়ে কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা বিষয়ক অবহিতকরণ কর্মশালা আয়োজন;
০৩. জেলা এবং উপজেলা পর্যায়ে বিভিন্ন মৌসুমভিত্তিক সভার মাধ্যমে কৃষকদের কৃষি বিষয়ক পরামর্শ প্রদান;
০৪. বৈদেশিক স্বল্প মেয়াদি প্রশিক্ষণ এবং এক্সপোজার ভিজিটের আয়োজন;
০৫. কর্মকর্তা ও কর্মচারী এবং কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ মডিউল তৈরি করা;
০৬. প্রকল্প সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে কৃষকদের আধুনিক সেবা সুনিশ্চিতকরণ।
আধুনিক আবহাওয়াভিত্তিক তথ্যাদি পর্যাপ্ততার জন্য রয়েছেন- এ জন্য রয়েছেন যোগ্য দক্ষ অভিজ্ঞ বিভিন্ন বিষয়ের পরামর্শক কারিগরী কমিটি...।
০৭. বিএআরআই এর মাধ্যমে ধান ব্যতীত বিভিন্ন ফসল, ব্রির মাধ্যমে ধান, বিজেআরআই এর মাধ্যমে পাট এবং বিএসআরআই এর মাধ্যমে আখের শস্য সিমুলেশন (Crop Simulation) মডেল তৈরি করা।
গ. সাব-কম্পোনেন্ট সি-৩: কৃষকদের কৃষি আবহাওয়া সম্পর্কিত তথ্য অবহিতকরণের মাধ্যমে কৃষি দুর্যোগ মোকাবিলা
নির্ভরযোগ্য কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক ঝুঁকি সংক্রান্ত তথ্য উপাত্ত কৃষকের উপযোগী করে প্রস্তুত করে তা বিভিন্ন সম্প্রসারণ পদ্ধতির মাধ্যমে কৃষকের কাছে পৌঁছে দেওয়া হবে। এ সাব-কম্পোনেন্ট বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেসব কার্যক্রম গ্রহণ করা হয়েছে;
০১. পরামর্শক সংস্থার মাধ্যমে কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্যাদির বর্তমান অবস্থা, কৃষকদের তথ্য চাহিদা সর্ম্পকে বেইজ লাইন সার্ভে এবং তথ্য প্রবাহের উপযোগিতা নির্ণয় ও তা আরও উন্নত করার দিক নির্দেশনা প্রদান;
০২. ৪০৫১টি ইউনিয়ন পরিষদে হ্যান্ড হেল্ড অটোমেটিক রেইন গেজ এবং কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক এনালগ ডিসপ্লেবোর্ড স্থাপন সম্পন্ন হয়েছে। যেখান থেকে অনায়াসে বৃষ্টিপাত এবং অন্যান্য তথ্য পাবেন মুহূর্তেই;
০৩. ৪৮৭টি উপজেলায় কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক কিওস্ক (KIOSK) স্থাপন। এই কিওস্কে আছে-নিত্য দিনের চলমান আবহাওয়ার তথ্য; কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক কৃষক পরামর্শসমূহ; কৃষকগণ তার প্রয়োজনানুসারে মাঠ শস্য চাষাবাদ পদ্ধতি ও প্রযুক্তি সম্পর্কে জানবেন; আবহাওয়ার সাথে সেচ এবং রোগবালাই ব্যবস্থাপনা তথ্যাদিও পাবেন কিয়স্কে; কৃষি উপকরণ এবং বাজার পরিস্থিতি এসব। উপজেলায় অফিস চলাকালীন সময়ে যেকোন কৃষি বিষয়ক প্রয়োজনীয় তথ্য জেনে নিজে কাজে লাগাতে পারবেন অন্যকেও তথ্য প্রযুক্তিতে সহায়তা করতে পারবেন। তা কৃষি উন্নয়ন সমৃদ্ধিতে মাত্রিক অবদান রাখবে।
০৪. দেশের সবকটি কৃষি অঞ্চলের সবকটি জেলায় ১৪ টি অঞ্চল ও ৬৪ টি জেলায় কৃষি আবহাওয়া সেবা কক্ষ স্থাপন করা হচ্ছে। যেখান থেকে এলাকার কৃষকরা তাদের চাহিদা অনুযায়ী আবহাওয়া তথ্য সহজেই পেয়ে যাবেন;
০৫. এসএএওদের কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্য প্রেরণের জন্য ইন্টারনেট কানেক্টিভিটিসহ ৬৬৬৪টি ট্যাব সরবরাহ করা হচ্ছে। মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে সদর দপ্তর থেকে কৃষক পর্যায় পর্যন্ত কৃষি আবহাওয়া বিষয়ক তথ্য প্রদান করা, ফিডব্যাক মেকানিজম এর মাধ্যমে সমস্যা জানা এবং সমাধান প্রেরণ করা হবে। যেখান থেকে এসএএওগণ সহজেই তার এলাকার কৃষকদের জন্য তাদের চাহিদা মাফিক কৃষি তথ্য সরবরাহ করতে পারবেন; ০৬. কৃষি আবহাওয়া এবং জলবায়ু বিষয়ক তথ্য ব্যবহার এবং এ সংক্রান্ত বিভিন্ন ঝুঁকি মোকাবিলায় কৃষকের সক্ষমতা বৃদ্ধি করার জন্য কর্মশালার আয়োজন।
কৃষি আবহাওয়া বুলেটিনের অবজারভেটরি নেটওয়ার্ক
বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদপ্তরের ওয়েবসাইটে প্রদত্ত তথ্য সংগ্রহ করে দৈনিক, সাপ্তাহিক, পাক্ষিক, মাসিক ও মৌসুমী পরামর্শ সেবা প্রদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। ৫০টি কনভেনশনাল অবজাভেটরি; ১৭টি এগ্রোমেট স্টেশন; মোট ৬৭টি অবজারভেটরি থেকে অনলাইন ডাটা সহজে পাওয়া যাবে; বাংলাদেশের ৬টি অঞ্চলের জেলাসমূহের ফসল, রোগবালাই, মাটি, আবহাওয়া এসবের ডাটাবেজ সংরক্ষণ করা হয়। ৬টি অঞ্চলের আওতায় জেলাগুলো হলো-উত্তরপশ্চিম অঞ্চল: রাজশাহী, বগুড়া, জয়পুরহাট, নওগাঁ, নাটোর, চাপাইনবাবগঞ্জ, পাবনা, সিরাজগঞ্জ, রংপুর, দিনাজপুর, গাইবান্ধা, কুড়িগ্রাম, লালমনিরহাট, নীলফামারী, পঞ্চগড়, ঠাকুরগাঁও; উত্তরপূর্ব অঞ্চল: কিশোরগঞ্জ, নেত্রকোনা, সিলেট, হবিগঞ্জ, মৌলভীবাজার, সুনামগঞ্জ;
কেন্দ্রীয়অঞ্চল: ঢাকা, গাজীপুর, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী, টাংগাইল, ময়মনসিংহ, জামালপুর, শেরপুর, ব্রাহ্মণবাড়িয়া, চাঁদপুর, মুন্সীগঞ্জ, কুমিল্লা; দক্ষিণপূর্ব অঞ্চল: চট্টগ্রাম, বান্দরবান, কক্সবাজার, খাগড়াছড়ি, রাঙামাটি;
দক্ষিণঅঞ্চল: ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালী, খুলনা, বাগেরহাট, সাতক্ষীরা, বরিশাল, বরগুনা, ভোলা, ঝালকাঠি, পটুয়াখালী, পিরোজপুর; দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চল: ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারীপুর, রাজবাড়ি, শরিয়তপুর, চুয়াডাঙা, ঝিনাইদহ, যশোর, কুষ্টিয়া, মাগুরা, মেহেরপুর, নড়াইল।
কেমন করে লাভবান হবেন কৃষকবন্ধুরা
এ কার্যক্রম কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধির লক্ষ্যে কৃষক ও কৃষিসংশ্লিষ্ট সকলের জন্য কৃষি আবহাওয়া পরামর্শ সেবা সহজলভ্য করবে। খামার ব্যবস্থাপনায় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তার জন্য কৃষক পর্যায়ে সরাসরি পরামর্শ প্রদানের পাশাপাশি কৃষি আবহাওয়ার পূর্বাভাস ও এ সম্পর্কিত পরামর্শ গণমাধ্যমে প্রচারের ব্যবস্থা নেয়া হবে। প্রকল্পের আওতায় কৃষক পর্যায়ে নিয়মিতভাবে যথাযথ খামার ব্যবস্থাপনা তথা শস্যপর্যায়, উৎপাদন ব্যবস্থাপনা, সেচ ব্যবস্থাপনা, সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা এসবের ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা প্রদান, বীজ বপন থেকে শুরু করে ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ পর্যন্ত প্রতিটি ধাপের জন্য আদর্শ সময়ে করণীয় সম্পর্কে পরামর্শ প্রদান, প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষতিকর প্রভাব কমিয়ে আনায় আগাম সতর্কবার্তা প্রদানসহ ফসল উৎপাদনের বিভিন্ন ধাপে আন্ত:পরিচর্যা বা কৃষি উপকরণ ব্যবহারের নেতিবাচক প্রভাব থেকে রক্ষার জন্যও পরামর্শ প্রদান করা হবে। প্রকল্পের সার্বিক কার্যক্রম কৃষকের আর্থসামাজিক উন্নয়ন, কৃষির উন্নয়ন সর্বোপরি দেশের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
এদেশের সহজ সরল কৃষকগণ নিজেদের অভিজ্ঞতা, প্রকৃতি নির্ভরতা এসবের মাধ্যমে তাদের প্রচলিত কৃষিকে এগিয়ে নিয়ে গেছেন। সময় পাল্টাচ্ছে। ডিজিটাল যুগে কৃষি প্রধান বাংলাদেশের কৃষকরা ডিজিটালাইজড হবে না এটাতো হতে পারেনা। কৃষি আবহাওয়া তথ্য পদ্ধতি উন্নতকরণ প্রকল্প কৃষকদের সে সমসাময়িক চাহিদা পূরণ করতে পারছে। আশা করা যায় কৃষকগণ এখন থেকে স্মার্টলি স্মার্ট কৃষি কৌশল অনুসরণ করে নিজেরা প্রাকৃতিক দুর্যোগ, বন্যা, খরা, পোকা, রোগ, উষ্ণতা, শৈত্যপ্রবাহ, অন্যান্য সমস্যা এসবের ক্ষতি থেকে কৃষিকে রক্ষা করার লক্ষ্যে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন যাতে এগিয়ে যাবে দেশের অর্থনীতি। আর সমৃদ্ধিকে আরো বেগবান করে কাক্ষিত সীমানার উন্নতর পর্যায়ে পৌঁছাবে আামদের প্রাণের বাংলাদেশ। আমরা সে সুদিনের প্রত্যাশায় থাকলাম।
এইচআর/এমকেএইচ