আবারো গ্যাসের দাম বাড়িয়েছে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি)। আবাসিক খাতে দুই চুলার খরচ ৮০০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯৭৫ টাকা আর এক চুলার খরচ ৭৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ৯২৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। এই বৃদ্ধি স্বাভাবিকভাবেই জীবনযাত্রার ব্যয় আরো বাড়াবে। এতে যে ভুক্তভোগীদের দুর্ভোগ চরমে উঠবে সেটি বলার অপেক্ষা রাখে না।
Advertisement
গতকাল রোববার বিকালে এক সংবাদ সম্মেলনে এই ঘোষণা দিয়েছে বিইআরসি। আজ ১ জুলাই থেকে নতুন দাম কার্যকর হবে। প্রতি ঘনমিটার গ্যাসের দাম ৭ দশমিক ৩৮ টাকা থেকে ২ দশমিক ৪২ টাকা বাড়িয়ে ৯ দশমিক ৪০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। সিএনজি গ্যাসের দাম নির্ধারণ করা হয়েছে প্রতি ঘনমিটার ৪৩ টাকা এবং বিদ্যুৎ ও সারের জন্য ৪ দশমিক ৪৫ টাকা।
এ নিয়ে গত ১১ জুন থেকে ১৪ জুন পর্যন্ত রাজধানীর কারওয়ান বাজারের ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) মিলনায়তনে চলে শুনানি। শুনানি শেষে বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিইআরসি।সব শ্রেণির গ্যাসের দাম গড়ে ৬৬ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছে গ্যাস সঞ্চালন ও বিতরণ কোম্পানিগুলো। গৃহস্থালিতে ব্যবহৃত দুই চুলার গ্যাসের বিদ্যমান দাম ৮৫০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকা নির্ধারণ করতে চায় তারা। সিএনজির দাম বৃদ্ধির হার সবচেয়ে বেশি হতে পারে।
মূলত আমদানি করা তরল প্রাকৃতিক গ্যাসের (এলএনজি) কারণে এ খাতের ব্যয় বেড়েছে। গত বছর পেট্রোবাংলা-এক্সিলারেট এনার্জির এলএনজি পাইপলাইনে যুক্ত হয়েছে। এ বছরের মাঝামাঝি সময়ে সামিটের এলএনজিও পাইপলাইনে যুক্ত হবে। সব মিলিয়ে চলতি বছর ১০০ কোটি ঘনফুট গ্যাস সমতুল্য এলএনজি গ্রিডে আসবে, যা বর্তমানে দেশে উৎপাদিত গ্যাসের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ। ব্যয়বহুল এ তরলীকৃত গ্যাসের দাম সমন্বয়ের জন্যই গ্রাহক পর্যায়ে দাম বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে।
Advertisement
আমরা বরাবরাই দেখেছি ভর্তুকির কথা বলে মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট পথে সরকার এগোয়। দুর্মূল্যের বাজারে এমনিতেই জনসাধারণের নাভিশ্বাস উঠেছে। অধিকাংশ যানবাহন এবং ট্রাক, লরি এখন গ্যাসচালিত। গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ফলে যাত্রীভাড়া বাড়বে। বাড়বে পণ্য-দ্রব্য বহনের খরচও। এর ফলে নিত্যপণ্যের বাজার আরও অস্থির হবে। এই বৃদ্ধির কুফল মানুষজনকে নানাভাবে ভোগাবে।
মূল্য বৃদ্ধির জন্য ভর্তুকি কমানোর বিষয়টিও অনেক সময় সামনে নিয়ে আসা হয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন ভর্তুকি কমানোর জন্য মূল্যবৃদ্ধির শর্টকাট রাস্তায় চলে। অথচ দুর্নীতি কমানো, সিস্টেমলস বন্ধ করাসহ নানাবিধ উপায়ে আয় বাড়ানোর সুযোগ রয়েছে। সেটি করা গেলে জনসাধারণকে আর বাড়তি পয়সা গুণতে হতো না। খোঁড়া যুক্তি দেখিয়ে দাম বাড়ালে শেষ পর্যন্ত এর সুফল পাওয়া যায় না। ভোক্তা অধিকারের বিষয়টিকে গুরুত্ব দিলে মূল্যবৃদ্ধির এই অযৌক্তিক সিদ্ধান্তের দিকে যেতে হয় না। আমরা আশা করবো জনসাধারণের সার্বিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধির ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তারও আগে চলমান গ্যাস সংকট দূর করতে হবে। জনহিতকর সরকারের এটিই দায়িত্ব।
মনে রাখা প্রয়োজন গ্যাস প্রাকৃতিক সম্পদ। এর মজুত অফুরন্ত নয়। জ্বালানি বিশেষজ্ঞরা বলতে পারছেন না কতদিনের গ্যাস মজুত আছে। তাছাড়া বাসাবাড়িতে ও শিল্পকারখানায়ও চাহিদামত গ্যাস সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না। এখনো জ্বালানি নীতিও ঠিক হয়নি অমূল্য প্রাকৃতিক সম্পদের ব্যবহার নিয়ে। মূল্যবান গ্যাস প্রাইভেটকারের জ্বালানি হবে, গণপরিবহনে ব্যবহৃত হবে, চুলায় জ্বলবে, নাকি শিল্পকারখানায় ব্যবহৃত হবে। তাছাড়া গ্যাস সরবরাহের পদ্ধতিই বা কি হবে পাইপলাইনের মাধ্যমে-নাকি সিলিন্ডারে- ভবিষ্যতের জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে এই বিষয়গুলোর দিকেও নজর দিতে হবে। এখন থেকেই কাজ করতে হবে জ্বালানি নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য।
এইচআর/এমকেএইচ
Advertisement