প্যানক্রিয়াস বা অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন এক বাঙালি বিজ্ঞানী। অনিমেষ ধর নামের ওই বিজ্ঞানীর দাবি, তার আবিষ্কৃত ওষুধ ইতোমধ্যে সাদা ইঁদুর ও মানুষের কোষে প্রয়োগ করেছেন। এতে সফলও হয়েছেন তিনি।
Advertisement
হলুদের অন্যতম উপাদান কুরকুমিন, এক ধরনের ফুলের উপাদান হারমিন এবং এক ধরনের ওষুধি গাছের উপাদান আইসোভ্যানিলিনের সংমিশ্রণে তিনি এ ওষুধ তৈরি করেছেন। ১৫ বছর ধরে গবেষণা করে তিনি এ ওষুধ আবিষ্কার করতে সক্ষম হয়েছেন।
অনিমেষ ধর যুক্তরাষ্ট্রের ক্যানসাস বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল সেন্টারের ক্যান্সার বায়োলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক। তার গবেষণায় সহযোগিতা করেছেন অপর দুই বাঙালি বিজ্ঞানী চান্দ্রেয়ী ঘোষ ও শান্তনু পাল এবং অন্য তিন ভারতীয় বিজ্ঞানী প্রসাদ দণ্ডবতে, শ্রীকান্ত অনন্ত ও ধর্মলিঙ্গম সুব্রহ্মণ্যম। গবেষণায় সাহায্য করেছেন শ্রীলঙ্কার সুমেধা গুণবর্ধনে এবং যুক্তরাষ্ট্রের ক্যামেরুন ওয়েস্ট-ও। আন্তর্জাতিক জার্নাল ‘অঙ্কোটার্গেট’-এ তাদের গবেষণাপত্র প্রকাশিত হয়েছে।
অনিমেষ ধর বলেন, ‘অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার সহজে চিহ্নিত করা যায় না। সাধারণ হালকা মানের জন্ডিস এই ক্যান্সারের প্রধান উপসর্গ। কিন্তু হালকা জন্ডিস হলে কেউই অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারের পরীক্ষা করান না। ফলে তা ধরা পড়ে না। যখন ধরা পড়ে, অনেকটাই ছড়িয়ে যায় ক্যান্সার। ছড়ায় মূলত ফুসফুস আর যকৃতে।’
Advertisement
তিনি আরও বলেন, ‘এখন অনেক ক্ষেত্রে অন্য রোগ নির্ণয়ের সময় অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার ধরা পড়ে যাচ্ছে। কিন্তু তাকে নিয়ন্ত্রণ করার কোনো নির্দিষ্ট ওষুধ ছিল না।’ তার দাবি, তার তৈরি ওষুধ অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সার দমনে সাহায্য করছে।
বাঙালি এই বিজ্ঞানীর ভাষ্য, ক্যান্সার হলে এক ধরনের ‘ক্লাস্টার অব জিন’ বা জিনমণ্ডলী খুব সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওই জিনের কারণে ক্যান্সার-আক্রান্ত কোষ দ্রুত বৃদ্ধি পায়। দীর্ঘদিনের পরীক্ষায় দেখা গেছে, তাদের আবিষ্কৃত ওষুধ ক্যান্সার-আক্রান্ত কোষের বৃদ্ধি আটকাতে সমর্থ। তা যকৃৎ বা ফুসফুসে ছড়িয়ে পড়ছে না। রোগীর কষ্টও কমছে।’
ওই বিজ্ঞানীর দাবি, যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্যের মধ্যে পুষ্টি হিসেবে তার ওষুধ ব্যবহার করা হচ্ছে। তার ফর্মুলা নিয়ে ভারতীয় সংস্থাও এই ওষুধ বানাতে পারবে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক নথিপত্র ঘেঁটে দেখেছি, আমাদের প্রাচীন ইউনানি চিকিৎসায় কুরকুমিন, হারমিন এবং আইসোভ্যানিলিনের মতো উপাদান ব্যবহারের উল্লেখ রয়েছে।’
ভারতের ক্যান্সার বিশেষজ্ঞ, চিকিৎসক গৌতম মুখোপাধ্যায় বলছেন, ‘ধরা পড়তে দেরি হয় বলে অগ্ন্যাশয়ের ক্যান্সারে বেঁচে থাকার সম্ভাবনা কমে যায়। অনিমেষের আবিষ্কৃত ওষুধ অন্য প্রাণির সঙ্গে মানুষের শরীরেও প্রয়োগ করে দেখতে হবে। তা যদি সফল হয়, এই আবিষ্কারকে স্বাগত জানানো উচিত।’
Advertisement
এসআর/এমকেএইচ