আইন-আদালত

খালাস চেয়ে আজহারের আপিলে যুক্তিতর্ক উপস্থাপন আজ

মুক্তিযুদ্ধের সময় সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধে মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াতের ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি জেনারেল এ টি এম আজহারুল ইসলামের মৃত্যুদণ্ড থেকে খালাস চেয়ে করা আপিলের ওপর যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন শুরু হবে আজ সোমবার।

Advertisement

আজ প্রথম দিনে আসামিপক্ষের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট খন্দকার মাহবুব হোসেন যুক্ততর্ক উপস্থাপন শুরু করবেন বলে জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন আজহারুল ইসলামের অপর আইনজীবী শিশির মোহাম্মদ মনির।

প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বে চার সদস্যের আপিল বিভাগের বিচারপতির বেঞ্চে এই যুক্ততর্ক (আর্গুমেন্ট) শুরু হবে। বেঞ্চের অপর সদস্যরা হলেন- বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী, বিচারপতি জিনাত আরা ও বিচারপতি নুরুজ্জামান।

এর আগে গত ২৬ জুন মামলায় পেপার বুক পড়া শেষে যুক্তিতর্ক শুনানির দিন ধার্য করেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। গত ২৬ জুন বুধবার ষষ্ঠ দিনের মতো শুনানি শেষে আপিলের শুনানি সোমবার (২৬ জুন) পর্যন্ত মুলতবি করা হয়।

Advertisement

আদালতে সেদিন আজহারুলের আপিলের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন। তাকে সহযোগিতা করেন অ্যাডভোকেট শিশির মোহাম্মদ মনির। উপস্থিত ছিলেন- অ্যাডভোকেট কামাল হোসেন ও মো. মতিউর রহমান মল্লিক। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির, ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মাসদ হাসান চৌধুরী পরাগ ও অমিত তালুকদার।

গত ১০ এপ্রিল শুনানিতে আপিল বিভাগের একই বেঞ্চ রোজা ও ঈদুল ফিতরের সরকারি ছুটি এবং সুপ্রিম কোর্টের অন্য ছুটির পর ১৮ জুন আজহারুল ইসলামের আপিল দুটির শুনানি দিন ধার্য করেন। ওই দিন থেকে শুনানি শুরু হয়ে এখন পর্যন্ত মামলায় তদন্ত কর্মকর্তাসহ (আইও) ১৪ জন সাক্ষীর এবং আসামিদের ১ জন সাক্ষীর জবানবন্দি ও জেরার অংশ পাঠ করেন আজহারুল ইসলামের আইনজীবী জয়নুল আবেদীন তুহিন।

আইনজীবীরা জানান, গত ১৮ জুন পেপারবুক পড়ার মধ্য দিয়ে এটিএম আজহারের আপিলের শুনানি শুরু হয়। ৬ কার্যদিবসে পেপারবুক পড়া শেষ করেন তার আইনজীবী। প্রসিকিউশনের ১৯ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য এবং আসামি পক্ষের একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য ও জেরা পড়া হয়েছে। এখন মামলায় যুক্তিতর্ক (আর্গুমেন্ট) উপস্থাপন করা হবে আজ।

উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের ৩০ ডিসেম্বর রংপুর জেলা আলবদর বাহিনীর কমান্ডার আজহারকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের পাশাপাশি ৩০ বছরের কারাদণ্ডাদেশ দেন আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১।

Advertisement

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে রংপুর অঞ্চলে এক হাজার ২৫৬ জনকে গণহত্যা-হত্যা, ১৭ জনকে অপহরণ, একজনকে ধর্ষণ, ১৩ জনকে আটক, নির্যাতন ও গুরুতর জখম এবং শতশত বাড়ি-ঘর লুণ্ঠন ও অগ্নিসংযোগের মতো নয় ধরনের ছয়টি মানবতাবিরোধী অপরাধের মধ্যে পাঁচটি এবং পরিকল্পনা-ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে সুপিরিয়র রেসপনসিবিলিটি (ঊর্ধ্বতন নেতৃত্বের দায়) প্রমাণিত হয় তার বিরুদ্ধে।

ট্রাইব্যুনালের ওই রায়ের বিরুদ্ধে ২০১৫ সালের ২৯ জানুয়ারি খালাস চেয়ে আপিল করেন আজহারুল ইসলাম। সুপ্রিম কোর্টে আপিল করেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড জয়নুল আবেদীন তুহিন।

আপিল বিভাগের সংশ্লিষ্ট শাখায় ৯০ পৃষ্ঠার ১১৩টি গ্রাউন্ডসহ মোট দুই হাজার ৩৪০ পৃষ্ঠার আবেদন জমা দেয়া হয়। আপিলের পর তার আইনজীবী শিশির মুহাম্মদ মনির সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘আপিলে আমরা প্রত্যেকটি অভিযোগের চ্যালেঞ্জ করেছি, তিনি কোনো অপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিলেন না। ওই মামলায় সাক্ষীদের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এ টি এম আজহারুল ইসলামকে নির্দোষ প্রমাণ করে।’

তিনি আরও বলেন, ‘২৬ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি অনুযায়ী এ টি এম আজাহারের বিরুদ্ধে আনা হত্যা, গণহত্যার অভিযোগগুলো প্রমাণ করতে প্রসিকিউশনের আইনজীবীরা সম্পূর্ণ ব্যর্থ হয়েছেন। প্রসিকিউশনের ৪ ও ২৫ নম্বর সাক্ষীর জবানবন্দি অনুযায়ী ডকুমেন্ট তৈরি করে তারা (প্রসিকিউশন) নিজেদের মতো করে মামলা সাজিয়েছেন।

এফএইচ/এমএসএইচ