রেলপথে যাত্রীসেবা আরও এক ধাপ এগিয়ে নিতে বেনাপোল-ঢাকা রুটে চালু হচ্ছে এক্সপ্রেস রেল সার্ভিস। ঈদুল আজহার আগেই এই সার্ভিস চালু হতে যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের কর্মকর্তারা। ইতোমধ্যে এই রেল সার্ভিস চালুর প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে।
Advertisement
এই অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের দাবি বাস্তবায়ন হওয়ায় খুশি সবাই। স্বাধীনতার ৪৮ বছর পর আবারও বেনাপোল-ঢাকার মধ্যে রেল চালু এক অনন্য দৃষ্টান্ত হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন স্থানীয়রা। ঢাকার সঙ্গে রেল যোগাযোগ চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি ভারতে যাতায়াতকারীদের সুবিধা হবে। প্রতিদিন দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে ভারতে ছয়-সাত হাজার মানুষ ভারতে যাতায়াত করে। ঈদ, পূজা-পার্বণে এ সংখ্যা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। যাত্রীদের সিংহভাগ আসে ঢাকা থেকে। বেনাপোল থেকে পরিবহন সংকট, মালিক-শ্রমিকদের অবরোধ, দৌলতদিয়া-পাটুরিয়া ফেরিঘাটে যানজটের কারণে যাত্রীরা নানা ধরনের হয়রানির শিকার হন। রেল চালু হলে সেই হয়রানি লাঘব হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
স্থানীয়রা জানান, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার জন্য বেনাপোল দিয়ে কলকাতার সঙ্গে যোগাযোগ ব্যবস্থা সহজ হওয়ায় এই পথে দেশের সিংহভাগ মানুষ যাতায়াত করে। রেল চালু হলে যাত্রীর সংখ্যা বাড়বে। সরকারের রাজস্ব আয়ও বাড়বে।
রোববার ভারতে যাওয়ার পথে বেনাপোল চেকপোস্টে অপেক্ষারত আলমগীর হোসেন নামে এক ব্যক্তি জানান, আরিচাঘাটের যানজটের কারণে আমাদের নাজেহাল হতে হয়। শনিবার রাত ১০টায় ঢাকা থেকে বাসে উঠে বেনাপোল রোববার বেলা ২টায় নেমেছি।
Advertisement
একই বাসের যাত্রী উর্মিলা সেন বলেন, অসুস্থ বাবাকে চিকিৎসার জন্য কলকাতা নিয়ে যাচ্ছি। ঢাকা থেকে এখানে (বেনাপোল) আসতে আমাদের খুব কষ্ট হয়েছে। সারা রাত বাসের ভেতর বসে থেকে বাবা আরও অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। রেল চালু হলে পথ বেশি হলেও অন্তত যানজটের হাত থেকে রেহাই পাওয়া যাবে।
বেনাপোল সিঅ্যান্ডএফ এজেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মফিজুর রহমান সজন বলেন, ব্যবসা-বাণিজ্য ও চিকিৎসার জন্য আমরা ভারতের ওপর নির্ভরশীলতা বেশি। কিন্তু দেশটির সঙ্গে যোগাযোগের মাধ্যম শুধু বাস। ঢাকা-বেনাপোল রুটে রেল চালু হলে শুধু বেনাপোল নয়, গোটা দেশ এগিয়ে যাবে।
ভারত-বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্সের ল্যান্ডপোর্ট সাব-কমিটির চেয়ারম্যান মতিয়ার রহমান বলেন, শিগগিরই বেনাপোল-ঢাকা রুটে রেল চালু হবে। আমাদের স্বপ্ন স্বার্থক হবে। রেলসেবা চালু হলে ব্যবসা-বাণিজ্যের সম্প্রসারণ হবে।
বেনাপোল রেলস্টেশন মাস্টার সাইদুজ্জামান বলেন, ঈদুল আজহার আগে বেনাপোল-ঢাকা রেল চালু হবে। এই রেলটিতে ১০টি বগি থাকবে। এই ১০টি বগির মধ্যে দুটি কেবিন, দুটি এসি চেয়ার ও বাকিগুলো চেয়ার থাকবে। কেবিনের ভাড়া প্রাথমিকভাবে এক হাজার ২০০ টাকা, এসি চেয়ারের ভাড়া এক হাজার টাকা ও নন এসি চেয়ার ভাড়া ৫০০ টাকা প্রস্তাব করা হয়েছে। তবে এটি সামান্য কয়েকটি স্টপিজে থামানো হবে। এক কথায় ননস্টপ হিসেবে এ রেলটি চলবে। বেনাপোল-ঢাকা রেল রুটে যাত্রীসেবার ক্ষেত্রে ৫০ শতাংশ সিট অনলাইনে যাত্রীরা সংগ্রহ করতে পারবেন।
Advertisement
তবে রেলের কোনো নাম এখনও নির্ধারণ হয়নি। প্রাথমিকভাবে বেনাপোল এক্সপ্রেস, বন্দর এক্সপ্রেস ও ইছামতি এক্সপ্রেস এই তিনটি নাম পছন্দ করা হয়েছে।
বেনাপোল কাস্টম হাউসের কমিশনার মোহাম্মদ বেলাল হোসাইন চৌধুরী জানান, প্রথম পর্বে আসছে বেনাপোল-ঢাকা রুটে এক্সপ্রেস রেল। এরপর বুলেট ট্রেন। ভারতের সঙ্গে রেল কার্গো সার্ভিস। এ সেবা চালু করতে এর আগে গত ১০ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রী কার্যালয়ের যৌথ ইশতেহার এবং উন্নয়ন সহযোগিতার জন্য কাঠামোগত চুক্তির আওতায় (রেলপথ বিষয়ে) উপ আঞ্চলিক সহযোগিতা সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়।
রেলওয়ের পশ্চিমাঞ্চলের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) মোহম্মদ শাহনেওয়াজ বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা পেলেই আগামী ঈদের আগে এই সেবা চালু হবে। এর জন্য ইতোমধ্যেই সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। আমরা চেষ্টা চালাচ্ছি বেনাপোলের সঙ্গে সারাদেশের রেল যোগাযোগ দ্রুত সহজতর করার। যাতে করে ভারতের সঙ্গে যোগাযোগও সহজ হবে। পাশাপাশি বেনাপোল বন্দরে আমদানি-রফতানির কাজে নিয়োজিত ব্যবসায়ীদেরও যাতায়াত সহজতর হবে।
উল্লেখ্য, বেনাপোল-কলকাতা রুটে ভারতের সঙ্গে এর আগেও রেল সার্ভিস চালু ছিল। তবে দেশ স্বাধীনের পর পরই তা বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে বছর দশ আগে দুই দেশের সরকারের প্রচেষ্টায় আবারও চালু হয় রেল যোগাযোগ। প্রথমে পণ্য পরিবহনে কার্গো সার্ভিস চালু হয়। পরে ২০১৭ সালের ১৬ নভেম্বর খুলনা-বেনাপোল-কলকাতা রুটে যাত্রী পরিবহন চালু হয়।
মো. জামাল হোসেন/এমবিআর/এমকেএইচ