নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি করে ক্রেতা ঠকাচ্ছে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার। চীন থেকে নিম্নমানের সেট এনে কোন ধরনের গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি না দিয়ে এসব সেট বিক্রি করছে তারা। এ ধরনের নকল সেট বিক্রিতে জনগণ যেমন প্রতারিত হচ্ছে তেমনি নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে বাংলাদেশ। জাগো নিউজের অনুসন্ধান আর ভ্রাম্যমাণ আদালতের অনুসন্ধনী দল থেকে প্রাপ্ত তথ্যে উঠে এসেছে তাদের এই প্রতারণা।অনুসন্ধানে জানা যায়, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার চীনের একটি প্রতিষ্ঠান থেকে নকল হ্যান্ডসেট আমদানি করে সেগুলো বাজারে বিক্রি করছে। আমদানিকৃত এসব হ্যান্ডসেট নিম্নমানের হওয়ায় ৩-৪ মাসের মধ্যে এগুলো স্লো হয়ে যায়। সেটে নানা কারিগরি ত্রুটি দেখা যায়।অনুসন্ধান অনুযায়ী, চীন থেকে আনা নিম্নমানের এসব হ্যান্ডসেট কমদামে কিনে কমপক্ষে ৪ গুন লাভ করে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার। অতি মুনাফার লোভে বাজার থেকে কমমূল্যেও সেট বিক্রি করে তারা। দেয় না কোন গ্যারান্টি-ওয়ারেন্টি।গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার নকল হ্যান্ডসেট বিক্রি করছে এমন তথ্যের ভিত্তিতে গত ২৮ আগস্ট রাজধানীর বসুন্ধরা সিটি শপিং কমপ্লেক্সে একটি অভিযান চালায় র্যাব পরিচালিত ভ্রাম্যমাণ আদালত। অভিযানের নেতৃত্ব দেন ঢাকা মহানগরের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সরোয়ার আলম। তবে র্যাব সদস্যদের দেখে সঙ্গে সঙ্গেই নিজেদের সব শো-রুম বন্ধ করে দেয় তারা।সরোয়ার আলম জাগো নিউজকে বলেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য ছিল গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারসহ বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান নোকিয়া, সনি এক্সপেরিয়া এবং স্যামসাং ব্র্যান্ডের নকল সেট বিক্রি করছে। তারা সংশ্লিষ্ট কোম্পানি থেকে সেট না কিনে অন্য দেশ থেকে নকল সেট কিনতো। এমন তথ্যের ভিত্তিতে অভিযানে ১ হাজার পিস নকল ও অবৈধ মোবাইল হ্যান্ডসেট জব্দ করা হয়। তবে সেদিন গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার অনেক আগেই শো রুম বন্ধ করে দেয়। তাই অভিযান চালাতে পারিনি।’ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেছে, ‘গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার দীর্ঘদিন ধরে নকল সেট বিক্রি করে আসছে।’নাজিম উদ্দিন নামে এক ক্রেতা অভিযোগ করেন, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার থেকে কেনা স্যামসাংয়ের গ্যালাক্সি এস সিক্স হ্যান্ডসেটটি প্রথম কয়েক মাস স্বাভাবিকভাবে চললেও ৩-৪ মাস পর স্যামসাং লেখা লোগো ঝাপসা হয়ে যায়। টাচ স্ক্রিনেও শক্ত করে চাপ দিতে হয়, নইলে কাজ করে না। ইউটিউবে দেখেছি নকল স্যামসাং হ্যান্ডসেটগুলোতে এসব সমস্যা হয়। সমাধানের জন্য গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের কাছে গেলে তারা অভিযোগ নিতে রাজি হয়নি।ইমদাদুল হক নাঈম নামে আরেক ক্রেতা জানান, সম্প্রতি স্যামসাং গ্যালাক্সী এস ৬ কিনতে তিনি গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের শো রুমে যান। স্যামসাংয়ের অনুমোদিত শো রুমের দাম থেকে কিছু টাকা কম চাইলেও তারা সেই হ্যান্ডসেটের কোনো ওয়ারেন্টি দিতে রাজি নয়। তখন থেকেই প্রতিষ্ঠানটির সেটের মান নিয়ে আমার সন্দেহ হয়।গ্রাহকের সঙ্গে পদে পদে প্রতারণা করা গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার সেট বিক্রির পর শুধুমাত্র দুইদিন সময় দেয় চেক করার জন্যে। দুই দিন পর কোনো অভিযোগই গ্রহণ করে না তারা। অথচ প্রতিটি অনুমোদিত স্যামসাংয়ের শো রুমে ১ বছরের ওয়ারেন্টি দেয়া হয়।এদিকে সেটে ওয়ারেন্টি না দেয়ার কারণ জানতে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারা কেউ কথা বলতে রাজি হয় নি।তবে প্রতিষ্ঠানটির বনানী শাখার এক কর্মকর্তা বলেন, ‘আমাদের সেটগুলো আসল। এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা। এগুলো আমদানির সময় আমরা কোন ওয়ারেন্টি পাই না, তাই আমরা দেইও না।’একই প্রশ্নের উত্তরে গুলশানের রুপায়ন গোল্ডেন এজ শাখার কর্মকর্তা বলেন, ‘এগুলো বিদেশ থেকে আমদানি করা হয়। বিদশি সেটের কোন ওয়ারেন্টি হয় না। তবে এগুলো আসল সেট।’অনুসন্ধানে জানা গেছে, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার স্যামসাং এস সিক্স এজ (৩২ জিবি) হ্যান্ডসেটটি ৫০ হাজার টাকায় বিক্রি করছে। তবে কোন ওয়ারেন্টি দেয় না তারা। কারণ জানতে চাইলে যমুনা ফিউচার পার্ক শাখার কর্মকর্তা বলেন, ‘ওয়ারেন্টি না দেয়ার কারণ জানি না। ওয়ারেন্টি লাগলে শো রুম থেকে ৬৫ হাজার অর্থাৎ ১৫ হাজার টাকা বেশি দিয়ে কেনেন। আমরা অরিজিনাল সেট কম দামে বিক্রি করি।’রাজধানীর স্যামসাংয়ের অনুমোদিত শো রুমগুলোতে গিয়ে দেখা যায় সেটটির দাম ৬৪ হাজার ৯০০ টাকা। তারা ঠিকই ১ বছরের ওয়ারেন্টি দিচ্ছে।এদিকে নকল হ্যান্ডসেট আমদানির কারণে নিরাপত্তা ঝুঁকিতে পড়ছে বাংলাদেশ। বাড়ছে অপরাধ। অনুসন্ধানে জানা গেছে, আমদানিকৃত নকল হ্যান্ডসেটগুলোর কোন আইএমইআই নম্বর থাকে না। সেসব সেটে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার নকল আইএমইআই নম্বর বসিয়ে দেয়। ফলে সেসব সেট দিয়ে যদি কাউকে হুমকি দেয়া কিংবা কোন অপরাধ করা হয় তবে তাকে ট্র্যাক করতে পারবে না আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এই অভিযোগে ২০১৪ সালে এক অভিযানে গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার থেকে দেড় কোটি টাকার হ্যান্ডসেট জব্দ করেছিল শুল্ক গোয়েন্দা। তবে এখনো প্রতিষ্ঠানটি আইএমইআই নম্বর ছাড়া হ্যান্ডসেট আমদানি করছে।সরোয়ার আলম বলেন, আমরা পর্যায়ক্রমে এগুচ্ছি। নকল ও অবৈধ সেট নিয়ে আমাদের কাছে তথ্য রয়েছে। কাউকে ছাড় দেয়া হবে না। অভিযান চলবে।শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদফতরের মহাপরিচালক ডক্টর মইনুল খান জাগো নিউজকে জানান, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ারে অভিযান চালিয়ে আমরা আগেও বিপুল পরিমাণ চালান আটক করেছি। আইএমইআই নম্বরবিহীন সেটগুলো জব্দ করতে এবার ওয়্যারহাউজগুলোতে অভিযান চালানো হবে।ভ্রাম্যমাণ আদালত সূত্র জানিয়েছে, গ্যাজেট অ্যান্ড গিয়ার এইচটিসি এবং অ্যাপেল (আইফোন) ব্র্যান্ডের সিংহভাগ সেট অবৈধ চ্যানেলে একটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বিভিন্ন যাত্রীদের দ্বারা দেশে আনায়। রাজস্ব ফাঁকি দিয়ে শো রুমে তুলে সেগুলো বাজারে বিক্রি করে।এআর/এআরএস/আরআইপি
Advertisement