বরগুনার আলোচিত রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য মো. সাগরকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।
Advertisement
রোববার পুলিশ সদর দফতরের সহকারী মহাপরিদর্শক (এআইজি-মিডিয়া) মো. সোহেল রানা জাগো নিউজকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
পুলিশ সদর দফতর সূত্র জানায়, কোনো আবেদনকারী যদি ফৌজদারী মামলার আসামি হয় তাহলে তার নিয়োগ আপনা আপনি বাতিল হয়ে যায়। তার পুলিশে চাকরি করার সুযোগ নেই। তবে কখন কোথায় থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে তা জানানো হয়নি।
রিফাত শরীফ হত্যার পরিকল্পনাকারী গ্রুপের সদস্য মো. সাগর পুলিশের কনস্টেবল পদে পরীক্ষা দিয়ে ইতোমধ্যেই লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন। আজ তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হওয়ার কথা ছিল বরগুনা পুলিশ লাইনে।
Advertisement
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করা ফেসবুক গ্রুপের নাম ০০৭। ইতোমধ্যেই এ গ্রুপে রিফাত হত্যার পরিকল্পনার কথোপকথনের বেশ কয়েকটি স্ক্রিনশট সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে। সেই স্ক্রিনশট দিয়ে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে দেশের বেশ কিছু গণমাধ্যমে।
মো.সাগরের পুলিশ কনস্টেবল নিয়োগ পরীক্ষার রোল নম্বর ১০৮। পিরোজপুর সদরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার কাজী শাহনেয়াজ, ভোলার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (লালমোহন সার্কেল) মো.রাসেলুর রহমান এবং বরগুনার পুলিশ সুপার মো.মারুফ হোসেন স্বাক্ষরিত বরগুনায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ প্রার্থীদের নামের মেধা তালিকায় ৪০ নম্বর পেয়ে ১৮তম স্থান অধিকার করেছেন সাগর। রোববার তার স্বাস্থ্য পরীক্ষা হবে বরগুনা পুলিশ লাইনে।
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা করা ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭-এ যুক্ত থাকার কথা জাগো নিউজের কাছে স্বীকার করেছেন মো. সাগর। তবে রিফাতের ওপর হামলার সময় তিনি ঘটনাস্থলে ছিলেন না বলে জানান। সাগর বরগুনা সদর উপজেলার এম বালিয়াতলী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক আবদুল লতিফ মাস্টারের ছেলে। বর্তমানে তারা বরগুনা পৌরসভার পশ্চিম আমতলা পাড় সড়কের বাসিন্দা।
রিফাত হত্যার পরিকল্পনা নিয়ে ম্যাসেঞ্জার গ্রুপ ০০৭-এর কথোপকথনের ভাইরাল ও গণমাধ্যমে প্রকাশিত একটি স্ক্রিনশটে দেখা যায়, রিফাত শরীফ হত্যাকাণ্ডের দিন বুধবার সকাল ৮টা ৬ মিনিটে রিফাত হত্যা মামলার দুই নম্বর আসামি রিফাত ফরাজী গ্রুপে লেখেন, ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই।’ এর উত্তরে মোহাম্মাদ নামে একজন লেখেন, ‘কয়টায়।’ নয়ন ফরাজির লেখা ‘০০৭ এর সবাইরে কলেজে দেখতে চাই’- এর উত্তরে বরগুনায় পুলিশের কনেস্টবল পদে চাকরি পরীক্ষায় চূড়ান্তভাবে উত্তীর্ণ মো. সাগর সম্মতিজ্ঞাপনসূচক এবং বিজয়ের প্রতীক ভি (v) সিম্বল দিয়ে উত্তর দেন। এরপর মোহাম্মাদ আবার রিফাত ফরাজীকে ম্যানশন করে লেখেন ‘কয়টায় ভাই।’ এরপর রিফাত ফরাজী উত্তর দেন ‘৯টার দিকে।
Advertisement
এ বিষয়ে মো. সাগর মোবাইল ফোনে জাগো নিউজকে জানান, আমি ঢাকায় একটি কোম্পানিতে চাকরি করি। আমি বরগুনা এসেছি ২২ তারিখ পুলিশে চাকরি পেতে বাছাই পর্বে লাইনে দাঁড়ানোর জন্য। রিফাত শরীফের ওপর হামলার আগের দিন বরগুনা জেনালের হাসপাতালে ভুয়া চিকিৎসায় আবদুল্লাহ নামে একজন মারা যাওয়ার প্রতিবাদে আমরা সবাই মানববন্ধন করেছিলাম। এরপর রিফাত শরীফের ওপর হামলার দিন সকালে আমি ঘুম থেকে জেগে দেখি ওই ম্যাসেজটি। আমি বুঝিনি যে ৯টায় কলেজে থাকতে হবে। আমি ভেবেছি ওই মানববন্ধনেরই কিছু। পরে আমি একটি লাইক দিছি। এরপর আমি বের হয়ে গেছি। পরে আর কি হয়েছে তা আমি দেখিনি। পরে আমি রেজাল্ট আনতে গেছি।
তিনি আরও বলেন, রিফাত শরীফের ওপর হামলার সময় আমি কলেজে ছিলাম না। ওই সময় আমি আমার ভাইভা পরীক্ষার রেজাল্ট আনতে গিয়েছিলাম। পরে আমি সাড়ে ১১টা নাগাদ সেখান থেকে আসি।
নয়ন এবং রিফাত ফরাজীর সঙ্গে পরিচয় সম্পর্কে সাগর বলেন, দুই বছর আগে আমি বরগুনা এসেছি। এর মধ্যে আমি দুই মাস বরগুনা থেকেছি এবং বাকি সময় ঢাকায় থেকেছি। একদিন রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় এলাকার তানভীর আমাকে ডেকে নিয়ে বলে- ‘আপনার বাসা কই?।’ তখন আমি বলি, আমি এখানে নতুন। তখন সে রিফাত ফরাজীর কথা উল্লেখ করে বলে- ‘এলাকায় নতুন আসছেন। এই ভাইরে চিন্না রাখেন। ভাইয়ের কথা মতো চলতে হবে এলাকায় থাকতে হলে।’
এআর/জেএইচ/জেআইএম