মতামত

ঐতিহ্য হারাতে চাই না

ঐতিহ্য হারাতে বসেছে সুন্দরবন। এটি খুবই উদ্বেগের বিষয়। আজারবাইজানের রাজধানী বাকুতে এ সপ্তাহে একটি কমিটি ১১ দিনের আলোচনা কার্যক্রম শুরু করেছে। আগামী ১০ জুলাই পর্যন্ত এই প্রক্রিয়া চলবে। এ সময়ের মধ্যে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় থাকা যেসব জায়গা বিপদাপন্ন সেগুলোর সংরক্ষণের চিত্র ঘেঁটে দেখা হবে। সুন্দরবনকে এখন বন্যপ্রাণীদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ বলে বিবেচনা করা হচ্ছে। এছাড়া এর কাছে বিদ্যুৎকেন্দ্র স্থাপনের প্রক্রিয়া, বন উজাড়সহ পরিবেশবিরোধী কাজের অভিযোগ রয়েছে। সব মিলিয়ে বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকা থেকে সুন্দরবনকে ইউনেস্কো বাদ দিতে পারে। এ অবস্থায় ঐহিত্য রক্ষায় জরুরি পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে।

Advertisement

বিশ্ব ঐতিহ্যের অংশ সুন্দরবন আমাদের জন্য প্রকৃতির এক অপরূপ দান। ঝড়-ঝাপ্টা থেকে শুরু করে প্রাকৃতিক অনেক দুর্যোগ থেকে রক্ষা করে সুন্দরবন। এখানকার জীববৈচিত্র্য এই বনকে দিয়েছে অনন্য বৈশিষ্ট্য। সুন্দরবনে রয়েছে ৫ হাজার প্রজাতির সম্পূরক উদ্ভিদ, ১৯৮ প্রজাতির উভচর প্রাণি, ১২৪ প্রজাতির সরীসৃপ, ৫৭৯ প্রজাতির পাখি, ১২৫ প্রজাতির স্তন্যপায়ী প্রাণী ও ৩০ প্রজাতির চিংড়ি মাছ।

রয়েল বেঙ্গল টাইগার সুন্দরবনের অন্যতম আকর্ষণ। এই বনকে ঘিরেই বহু মানুষের জীবন-জীবিকা চলছে। বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পেও সুন্দরবন এক অসাধারণ ভূমিকা রেখে চলেছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে সুন্দরবন আজ নানা কারণেই ঐতিহ্য হারাতে বসেছে। অথচ এই বনকে রক্ষা করতে না পারলে জলবায়ুর পরিবর্তনসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকিতে থাকা বাংলাদেশকে আরও দুর্ভোগের মধ্যে পড়তে হবে। এজন্য সুন্দরবন রক্ষায় সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার কোনো বিকল্প নেই।

এ জন্য তেল-গ্যাস আবিষ্কারের জন্য অনুসন্ধানী উদ্যোগ বন্ধ, আইনানুগ সম্পদ আহরণকারীদের যথাযথ নিরাপত্তা নিশ্চিত, বন ও বন্যপ্রাণী আইনকে আরও যুগোপযোগী এবং প্রয়োজনে পৃথক বন আইন, বনের ভেতর ও পাশ দিয়ে প্রবাহিত নদীগুলোর সংস্কার, বিশেষ করে গোরাই নদীশাসনের ব্যবস্থা ঢেলে সাজানো, সুন্দরবন এলাকায় চিংড়ি পোনা ধরার কারণে মাছসহ জলজ সম্পদের যে ক্ষতি হচ্ছে তা রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার যে দাবি জানানো হচ্ছে পরিবশেবাদী সংগঠন গুলোর পক্ষ থেকে সেগুলোও আমলে নিতে হবে। সুন্দরবন আমাদের ভালোবাসার ধন। আমরা কোনোভাবেই এই ঐতিহ্য হারাতে চাই না। সুন্দরবনের ব্যাপারে পরিবেশবাদী সংগঠনগুলো যে দাবি করছে সে ব্যাপারে সরকারকে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে।

Advertisement

এইচআর/জেআইএম