নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান ও সচিবের বিরুদ্ধে বিকাশে প্রতারণার অভিযোগে মামলা করেছেন সংরক্ষিত নারী মেম্বার নিলুফা ইয়াসমিন। গত ২১ জুন ইউপি চেয়ারম্যান কামাল হোসেন এবং ইউপি সচিব সাজ্জাদ হোসেনকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা করেছেন। গত ১৮ জুন এ প্রতারণার ঘটনা ঘটে।
Advertisement
মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, গত ১৭ জুন সন্ধ্যা ৭টার দিকে সচিব সাজ্জাদ হোসেন ইউপি মেম্বার আলিম, মোত্তালেব, মাজহারুল ইসলাম, মোহাম্মদ আলী এবং সংরক্ষিত মেম্বার নিলুফা ইয়াসমিন ও সামসুন নাহারকে ফোন দিয়ে নজিপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) একটি মোবাইল নাম্বার দেন। এরপর মেম্বাররা ওই মোবাইল নাম্বারে ফোন দিলে তিনি নিজেকে নজিপুর পল্লী বিদ্যুতের জিএম পরিচয় দেন। তার সঙ্গে চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের কথা হয়েছে বলে জানান। তিনি এলাকার গরীব দুঃখী মানুষের উপকার করতে চাইলে কিছু টাকা খরচের জন্য বিকাশ করে পাঠাতে বলেন।
এরপর মেম্বাররা- চেয়ারম্যান কামাল হোসেনের মোবাইলে ফোনে দিলে তা বন্ধ পাওয়া যায়। পরদিন ১৮ জুন জিএম পরিচয় দেয়া নাম্বার থেকে ৬ জন মেম্বারকে ফোন দিয়ে নওগাঁর ডিজিএম’র নাম্বারে ফোন দিয়ে কথা বলতে বলা হয়। পরবর্তীতে মেম্বাররা ওই নাম্বারে কথা বললে পল্লী বিদ্যুতের পক্ষ থেকে জানানো হয় ইউনিয়নের হতদরিদ্রদের অনুদান স্বরুপ ১শ জনের অধিককে ৬ হাজার ১শ টাকা করে দেয়া হবে। যার জন্য জনপ্রতি ৬শ টাকা করে উত্তোলন করে দুই ঘণ্টার মধ্যে বিকাশ করতে বলা হয় এবং তিনটি বিকাশ নাম্বার দেয়া হয়। সেই মুহূর্তে কারও কাছ থেকে টাকা উত্তোলন করা সম্ভব নয় মনে করে মেম্বাররা নিজেদের পকেট থেকে নওগাঁর ডিজিএম পরিচয় দানকারীর দেয়া তিনটি বিকাশ নাম্বারে টাকা পাঠানো হয়।
এর মধ্যে আলিম মেম্বার ১২ হাজার ৮৪০ টাকা, সামসুন নাহার ৬ হাজার টাকা, মোত্তালেব মেম্বার ১২ হাজার ৪শ টাকা, মাজহারুল ইসলাম ৬ হাজার টাকা, মোহাম্মদ আলী ১৩ হাজার টাকা, নিলুফ ইয়াসমিন ১২ হাজার ৬শ টাকাসহ মোট ৬২ হাজার ৮৪০শ টাকা বিকাশ করেন। ১৮ জুন দুপুরে ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যানসহ সকল মেম্বারদের নিয়ে আলোচনা হওয়ার কথা থাকলেও নজিপুর পল্লী বিদ্যুৎ অফিস থেকে কেউ আসেনি। এরপর অজ্ঞাতনামা ডিজিএম পরিচয় দানকারী ব্যক্তিকে ফোন করা হলে ফোনটি বন্ধ পাওয়া যায়। এরপর থেকে জিএম পরিচয় দেয়া এবং বিকাশের তিনটি নাম্বার বন্ধ আছে।
Advertisement
ভুক্তভোগী ও মামলার বাদী মেম্বার নিলুফা ইয়াসমিন বলেন, আমার ভাগে ২১ জনকে প্রশিক্ষণ দেয়া হবে মর্মে ৬শ টাকা হিসেবে ১২ হাজার ৬শ টাকা বিকাশ করেছি। ঘটনার সঙ্গে চেয়ারম্যান সম্পৃক্ত আছে। মেম্বারদের পক্ষ থেকে আমি থানায় মামলা করেছি।
এ ব্যাপারে ইউপি সচিব সাজ্জাদ হোসেন বলেন, চেয়ারম্যান আমাকে নজিপুর পল্লী বিদ্যুতের জেনারেল ম্যানেজারের (জিএম) একটি মোবাইল নাম্বার দিয়ে বলেছিলেন ইউপি মেম্বারদের দিতে। সে অনুযায়ী নাম্বারটি ইউপি মেম্বারদের দিয়েছি।
আকবরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল হোসেন বলেন, এলাকার অসহায় ও দরিদ্রদের অনুদান দেবে বলে জিএম পরিচয় দেয়া ব্যক্তির আমার ইউনিয়নের মেম্বারদের নিয়ে ইউনিয়ন পরিষদে আলোচনা (মিটিং) করার কথা ছিল। এরপর ওই নাম্বারটা আমি মেম্বারদের দিতে বলেছি। কিন্ত জিএমের সঙ্গে মেম্বারদের কি কথা হয়েছে তা আমাকে জানানো হয়নি। মেম্বারদের কাছ থেকে বিকাশে টাকা চেয়েছে সেটাও আমাকে বলেনি। এ ইউনিয়নের ১২ জন মেম্বারের মধ্যে ৬ জন বিকাশ করেছে। বাকি যে ৬ জন মেম্বার আছে তারা তো প্রতারিত হয়নি। এ প্রতারণার সঙ্গে তিনি সম্পৃক্ত নয় বলে দাবি করেন।
পত্নীতলা থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিমল কুমার চক্রবর্তী বলেন, এ ঘটনায় থানায় মামলা হয়েছে। যেহেতু এটি প্রযুক্তিগত বিষয় তাই তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Advertisement
আব্বাস আলী/আরএআর/এমএস