জাতীয়

দুই ভাইকে নিয়ে বাঁচতে একটা চাকরি বড় প্রয়োজন : চাঁদের কণা

অনশনে বসার পর রোদে পুড়েছেন, বৃষ্টিতেও ভিজেছেন; তবুও দাবি আদায়ে অনশন ভাঙেননি জীবন সংগ্রামী চাঁদের কণা। চতুর্থ দিনেও জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে হুইল চেয়ারে বসে থাকতে দেখা যায় চাঁদের কণাকে। বেঁচে থাকার জন্য একটি মাত্র চাকরিই তার চাওয়া।

Advertisement

শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী চাঁদের কণার চাকরির বয়সও শেষ হওয়ার পথে। অনেক চেষ্টা সত্ত্বেও চাকরি না পাওয়ায় অনেকটা বাধ্য হয়েই চারদিন ধরে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে চাকরি চেয়ে অনশন করছেন তিনি। তবে সরকারি কি বেসরকারি কোনো পক্ষ থেকেই চাকরির ব্যাপারে আশ্বাস পাননি তিনি। চাঁদের কণার সঙ্গে কেউ সাক্ষাৎ করেননি।

আজ শনিবার দুপুরে অনশনস্থলে গিয়ে দেখা যায়, ছোট ভাইকে নিয়ে জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে রাস্তার ওপর ফুটপাতে হুইল চেয়ারে বসে আছেন ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স করা সংগ্রামী ছাত্রী চাঁদের কণা।

চাঁদের কণা বলছিলেন, ‘খুব কষ্ট হচ্ছে। গতকাল বৃষ্টিতে ভিজেছি, আজ রোদে পুড়ছি। চলাফেরায় কষ্ট হয়। তবুও আশায় আছি যদি প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমার আবদারের খবরটা যায়। অনেককেই তো তিনি সুযোগ দিয়েছেন, সহযোগিতার হাত বাড়িয়েছেন মমতায়-ভালোবাসায়। আমার মা নেই। প্রধানমন্ত্রীই আমার মা। আমরা তার সাক্ষাৎ চাই। চাকরির জন্য এখানেই মরতে রাজি আছি তবুও অনশন ভাঙব না। তবে প্রধানমন্ত্রী চাকরি দেয়ার ব্যাপারে কিংবা না বললেই আমি চলে যাব। তবে আমি বিশ্বাস করি প্রধানমন্ত্রী সুদৃষ্টি দিলে আমরা গর্বিত হবো। ছোট দুই ভাইকে নিয়ে বাঁচতে যোগ্যতা অনুযায়ী একটা চাকরি যে আমার বড় প্রয়োজন।’

Advertisement

চাঁদের কণার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মাত্র ৯ মাস বয়সে পোলিও রোগে আক্রান্ত হয়ে পায়ের কর্মক্ষমতা হারান তিনি। তবে ভেঙে পড়েননি। সামলে নিয়েছেন। লড়াই করে দুই হাতের ওপর ভাগ্যের চাকা সচল রেখেছেন। দুই হাতে ভর দিয়েই চলাচল করেছেন। ওই দুই হাতের লেখনিতেই ঢাকা ইডেন কলেজ থেকে ২০১৩ সালে প্রথম শ্রেণিতে মাস্টার্স শেষ করেছেন।

টিভি/রেডিওতে সংবাদ পাঠ, টিভি প্রোগ্রাম গ্রন্থনা, উপস্থাপনা ও পরিচালনা, নাটক লেখা, নাটকে অভিনয়, কম্পিউটারের কাজ, স্ক্রিপ্ট তৈরি, ছবি আঁকা, ভিডিও এডিটিংসহ হাতের কাজে নানা ধরনের পারদর্শিতা অর্জন করেছেন তিনি।

জানা গেছে, মা হাসনা হেনা প্রাইমারি স্কুলের শিক্ষিকা ছিলেন। মায়ের মৃত্যুর পর থেকে পেনশনের সামান্য টাকায় কোনো রকমে টিকে আছে চাঁদের পরিবার। মা যখন মারা যান তখন তিনি অনার্স প্রথম বর্ষের ছাত্রী। মায়ের অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুর কারণে আর্থিক চাপে তার পড়াশোনা বন্ধ হয়ে যায়।

তবে হাল ছাড়েননি, একটি বেসরকারি চ্যানেলে সামান্য বেতনে চাকরি করে চালিয়ে গেছেন পড়াশোনা। পড়াশোনা শেষে সরকারি একটি চাকরির জন্য চেষ্টা করতে থাকেন। কিন্তু কিছুতেই মিলছে না সে চাকরি।

Advertisement

জেইউ/বিএ/এমকেএইচ