প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আসন্ন চীন সফরে রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়া দরকার বলে মন্তব্য করেছেন দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক ইতিহাস বিষয়ক গবেষক ও কূটনৈতিক বিশ্লেষক আলতাফ পারভেজ।
Advertisement
তিনি মনে করেন, রোহিঙ্গা ইস্যুতে চীনের ভূমিকা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ এবং চীনকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে এটা বোঝানোর সময় এসেছে। প্রধানমন্ত্রীর সফরে রোহিঙ্গা ইস্যুতে আলোচনা হবে জেনে এ বিশ্লেষক সংকট সমাধানে আশাবাদ ব্যক্তও করেন।
আরও পড়ুন>> প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে সই হবে ৮ চুক্তি
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চীন সরকারের আমন্ত্রণে আগামী ১ থেকে ৫ জুলাই দেশটি সফর করবেন। প্রধানমন্ত্রীর এ সফরে দেশটির সঙ্গে আটটি বিষয়ে দ্বিপক্ষীয় চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারক স্বাক্ষর হবে। এসব চুক্তি ও সমাঝোতা স্মারকের মধ্যে ঋণ চুক্তিও রয়েছে। এর বাইরে রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা করার কথা রয়েছে বলে শুক্রবার এক সংবাদ সম্মেলনে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আবদুল মোমেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> চীনের ঋণের ফাঁদ নিয়ে সতর্ক বাংলাদেশ
শেখ হাসিনার চীন সফরের গুরুত্ব ও রোহিঙ্গা প্রসঙ্গ নিয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয় আলতাফ পারভেজের কাছে। এ বিশ্লেষক বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরে যদি রোহিঙ্গা ইস্যু নিয়ে আলোচনা হয়, তাহলে সেটা হবে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কারণ, মিয়ানমারের প্রধান এবং সবচেয়ে শক্তিশালী বন্ধুদেশ চীন। দেশটিকে সবচেয়ে বেশি প্রভাবিত করতে পারে চীন এবং সে দেশের সেনাবাহিনীও চীনের ওপর বিশেষভাবে নির্ভরশীল।’
‘মিয়ানমারে অং সান সুচি ক্ষমতায় থাকলেও সেনাবাহিনীই সব নিয়ন্ত্রণ করে, এর পেছনে ভূমিকা রেখে আসছে চীন। আবার মিয়ানমারের রাখাইনেই চীনের সবচেয়ে বড় বিনিয়োগ। এ কারণে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে চীনকে প্রভাবিত করা দরকার।’
আরও পড়ুন>> রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চীন বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখবে : প্রধানমন্ত্রী
Advertisement
রোহিঙ্গা সংকটের পেছনে চীনের উদাসীনতা ও নীরবতাকেও দায়ী করা হয়। বাংলাদেশের পক্ষে চীনকে আসলে প্রভাবিত করা সম্ভব- এমন প্রশ্নের জবাবে আলতাফ পারভেজ বলেন, ‘রোহিঙ্গা নিয়ে চীনের ভূমিকা কী, এটি আমরা সবাই জানি। কিন্তু মাথায় রাখতে হবে, চীনের স্বার্থের কারণেই রোহিঙ্গা সংকট সমাধান করা এবং আলোচনায় সেটাই গুরুত্ব দেয়া দরকার। মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে চীনের ব্যাপক বিনিয়োগ রয়েছে। বাংলাদেশেও চীনের বড় বিনিয়োগ। অর্থাৎ একটি জায়গায় অস্থিতিশীল রেখে আপনি বিনিয়োগে কোথাও স্বস্তি পাবেন না। রোহিঙ্গাদের বিতাড়িত করার পর রাখাইনে দেশটির সেনাবাহিনীর সঙ্গে আরকান আর্মির সংঘাত চলছে। তার মানে সংকট স্থায়ী হচ্ছে। এ কারণে সেখানে চীনের বিনিয়োগ আরও ঝুঁকিতে পড়ছে। ফলে আমি মনে করি, চীন অন্ধভাবে বার্মা সরকারকে সমর্থন দিয়ে নিজেদের স্বার্থে আঘাত করছে।’
আরও পড়ুন>> ১ জুলাই চীন সফরে যাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী
প্রধানমন্ত্রীর চীন সফরের সার্বিক বিষয় মূল্যায়ন করতে গিয়ে কূটনৈতিক এ বিশ্লেষক বলেন, ‘চীন বাংলাদেশের অন্যতম বন্ধু রাষ্ট্র এবং চীনের সঙ্গে বাংলাদেশের বহু ধরনের সমঝোতা রয়েছে। বাংলাদেশে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ এখন চীনের। অবকাঠামো নির্মাণে চীনের ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই। এ বন্ধুত্ব আরও যত মজবুত করা যাবে, ততই দুদেশের লাভ। কারণ, এ অঞ্চলে চীনের প্রভাব স্বীকার করতেই হবে।’
চীন-বাংলাদেশ সম্পর্কে ভারত-যুক্তরাষ্ট্রের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ-চীনের মধ্যকার সম্পর্কের কোনো বিকল্প নেই। এ কারণে চীনের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখতেই হবে। সময় ও সম্পর্কের ধরন বদলেছে। ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ভালো রেখেও চীনকে বিশেষ গুরুত্ব দেয়া যায়।’
এএসএস/জেডএ/এমএআর