স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন দুই বছর আগে। ভর্তি হন আশা বিশ্ববিদ্যালয়ে। সেখান থেকে বি ফার্মা সম্পন্ন করে গার্মেন্টস ব্যবসা শুরু করেন নাইজেরিয়ান নাগরিক আজাহ অ্যানাওচুকওয়া ওনিয়ানুসি। তবে এর আড়ালে তার রয়েছে নতুন মাদক আইস (ক্রিস্টাল মিথাইল এমফিটামিন) মূল ব্যবসা। নিষিদ্ধ ডার্ক নেটের সদস্য হয়ে তিনি বাংলাদেশে মাদকের ব্যবসায় জড়ান।
Advertisement
শুধু বাংলাদেশেই নয়, আরও ৭-৮টি দেশে আইসের ডিলার হিসেবে ব্যবসা করে আসছিলেন আজাহ। সর্বশেষ তিনি মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকার গোয়েন্দা টিমের ফাঁদে পড়েন।
শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর সেগুনবাগিচায় মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের প্রধান কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক(গোয়েন্দা শাখা) মো. মোসাদ্দেক হোসেন রেজা।
আরও পড়ুন>> চট্টগ্রাম কারাগারে ইয়াবার রমরমা কারবার!
Advertisement
তিনি বলেন, অধিদফতরের ঢাকা মেট্রোর গোয়েন্দা টিম জানতে পারে, নতুন মাদক আইস বাংলাদেশের বাজার ধরার জন্য বিভিন্ন আফ্রিকান দেশের ব্যবসায়ীরা চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। এই তথ্যের ভিত্তিতে নজরদারি বাড়িয়ে দেয়া হয়। গোপন তথ্যের ভিত্তিতে গোয়েন্দা দল ফাঁদ পাতে। সূত্রের মাধ্যমে যোগাযোগ চালানো হয়।
জানা যায়, এ দেশে আইসের প্রসারের চেষ্টার নায়ক নাইজেরিয়ান ড্রাগ ডিলার আজাহ অ্যানাওচুকওয়া ওনিয়ানুসি। সূত্রের কথায় তিনি আইস বিক্রির জন্য রাজি হন। কথা মতো বৃহস্পতিবার রাতে খিলক্ষেত থানাধীন হোটেল লা মেরিডিয়ানের বিপরীত পাশের সড়কে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা অবস্থান নেন। বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে ওই নাইজেরিয়ান আসা মাত্র আটক করা হয়। আটকের সময় তার প্যান্টের পকেট থেকে ৫০ গ্রাম ক্রিস্টাল ম্যাথ জব্দ করা হয়।
আরও পড়ুন>> বেগুনের মধ্যে এক মণ গাঁজা!
জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, রাজধানীর ভাটারা থানাধীন বসুন্ধরা আবাসিক এলাকায় আই ব্লকের ১ নং সড়কের ওয়াসিস সুপ্রিম নামক ৫৪০নং বাড়ির ৭তম তলার ফ্লাট থেকে বসবাস করে আসছিলেন আজাহ। রাতে অভিযান চালিয়ে সেখান থেকে আরও ৪৭২ গ্রাম আইস জব্দ করা হয়।
Advertisement
জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানা যায়, ৫-৬ দিন আগে উগান্ডা থেকে ক্রিস্টাল ম্যাথের চালানটি ডিএইচএল কুরিয়ার সার্ভিসের মাধ্যমে বাংলাদেশে আসে। নাইজেরিয়ায় অবস্থানকারী তার বাবা ও মা অসুস্থ ছিলেন। সম্প্রতি তার মা মারা যাবার পর তিনি দেশে ফেরার চেষ্টা করছিলেন। সেজন্য তার কাছে থাকা আইস বিক্রির চেষ্টা করে চালিয়ে যাচ্ছিলেন।
জানা গেছে, তিনি স্টুডেন্ট ভিসায় বাংলাদেশে আসেন। গত ২ বছর যাবৎ ঢাকায় অবস্থান করছেন। এর আগেও তিনি ঢাকায় এসেছেন। আশা ইউনিভার্সিটি থেকে বি ফার্মা সম্পন্ন করে গার্মেন্টস ব্যবসায় জড়িয়ে পড়েন। এই ব্যবসার জন্য তিনি ব্যাংকক, মালয়েশিয়া, ভারত, উগান্ডা, কেনিয়া, মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর যাতায়াত করেছেন। গার্মেন্টস ব্যবসাকে সামনে দেখিয়ে আড়ালে তিনি মূলত এই আইসের ডিলার। বাংলাদেশে আইসের প্রসারের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন আজাহ।
আরও পড়ুন>> শিশুর পায়ে বাঁধা ৭ কেজি গাঁজা
আইসের ভয়াবহতা সম্পর্কে অধিদফতরের অতিরিক্ত পরিচালক রেজা বলেন, আইস ইয়াবার চেয়ে কমপক্ষে ৫০ গুণ বেশি শক্তিশালী। একবার আইস সেবন শুরু করলে এর প্রতি নির্ভরতা চলে আসে। বেশি সেবন করতে ইচ্ছে করে সেবনকারীদের। ইয়াবার চেয়ে দামও বেশি আইসের। মালয়েশিয়ায় আইস এক গ্রামের দাম ৭ হাজার রিঙ্গিত। বাংলাদেশে এ মাদকের বাজার ধরার জন্য তা কম দামে অর্থাৎ প্রতি গ্রাম ৭ থেকে ১০ হাজার টাকায় বিক্রি করে আসছিলেন আজাহ। ইতোমধ্যে একটা সীমিত ক্রেতাশ্রেণিও তৈরি হয়েছে।
জিজ্ঞাসাবাদে নতুন এই মাদক কেনাবেচায় দেশীয় কয়েকজনের ব্যাপারে তথ্য পাওয়া গেছে। তথ্য প্রমাণের ভিত্তিতে তাদের ব্যাপারে আইনানুগ পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে। গ্রেফতার নাইজেরিয়ানকে আদালতে সোপর্দ করে রিমাণ্ড চাওয়া হবে বলে জানান তিনি।
জেইউ/এমএসএইচ/এমএস