ঊনবিংশ শতকের প্রখ্যাত ভারতীয় বাঙালি যোগসাধক শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংস। ১৮৮৬ সালের ১৫ আগস্ট রাতে ৫২ বছর বয়সে পশ্চিবঙ্গের দক্ষিণেশ্বরের কাশীপুর উদ্যানবাড়িতে তার মৃত্যু হয়।
Advertisement
এতদিন ধরে তার ভক্ত ও অনুগামীদের ধারণা ছিল, সাধক শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যু গলায় ক্যানসারের কারণে হয়েছে। কিন্তু সে সময় তার মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘গলায় আলসার’ লেখা হয়। তার মৃত্যুর পর শ্মশানে নেয়ার আগে কাশীপুর থানায় অনুগামীদের তরফে যে রেজিস্টেশন হয়, সেখানে মৃত্যুর কারণ হিসেবে ‘গলায় আলসার’ লেখা আছে।
কলকাতা পৌরসভার ডেথ রেজিস্টারে কাশীপুর থানায় নথিভুক্ত মৃত্যুর কারণ প্রকাশ্যে আসতেই বৃহস্পতিবার (২৭ জুন) থেকে এ নিয়ে নতুন বিতর্ক শুরু হয়েছে।
ভারতীয় সংবাদমাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামীকাল শনিবার (২৯ জুন) বেলা ১১টায় বেলুড় মঠে কলকাতার ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ এই নথি রামকৃষ্ণ মঠ ও মিশন কতৃর্পক্ষের হাতে তুলে দেবেন।
Advertisement
আরও পড়ুন>> প্রেসিডেন্টের বিমানে মিলল ৩৯ কেজি কোকেইন!
আগে এখনকার মতো মৃতদেহ সৎকারের জন্য শ্মশানে আনলে পৌরসভার তরফে নথিভুক্ত করা হতো না। কিন্তু ব্রিটিশরা আইন করে সব সৎকারের তথ্য থানায় রেজিস্ট্রেশন করিয়ে রাখতো। সেভাবে শ্রীরামকৃষ্ণের শবদাহের আগে কাশীপুর থানায় মৃত্যুর খবর নথিভুক্ত করেন তার অনুগামীরা। সেখানে লেখা হয়, ঠাকুরের আসল নাম, গদাধর চট্টোপাধ্যায়। পেশায় পুরোহিত।
ডেপুটি মেয়র অতীন ঘোষ জানান, শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যু যেহেতু মধ্যরাতে হয়েছিল, তাই ইংরেজি নিয়মে কাশীপুর থানায় নথিভুক্ত করা হয়। পরে থানার কাছ থেকে সেই রেজিস্টার এনে কলকাতা পুরসভায় সংরক্ষণ করা হয়।
পৌরসভার কর্মকর্তারা বলছেন, ১৯০০ সালের আগে ভারতে ক্যানসার নিয়ে তেমন আলোচনা হতো না। তাই ১৮৮৬ সালে রামকৃষ্ণের মৃত্যুর কারণ গলায় ক্যানসার না লিখে ‘আলসার’ লেখার পরামর্শ দিয়েছিলেন চিকিৎসকরা।
Advertisement
আরু পড়ুন>> মাদরাসা শিক্ষক ‘জয় শ্রী রাম’ না বলায় ট্রেন থেকে ধাক্কা
তবে পৌরসভার কর্মকর্তাদের এই ব্যাখ্যা মানতে নারাজ অনেকেই। তাদের দাবি, আলসারের যথাযথ চিকিৎসা না থাকায় শ্রীরামকৃষ্ণের অকালমৃত্যু হয়েছে। কারণ, ১৮৬৬ সালে ভারতে চিকিৎসা করতে আসা ইংরেজ চিকিৎসক এলেমসিলি প্রথম দাবি করেছিলেন, ৩০ জনের শরীরে ক্যানসারের লক্ষণ পাওয়া গেছে। তখন ধারণা ছিল, ক্যানসার শুধুমাত্র বিদেশি ও সাদা চামড়ার মানুষেরই হয়।
শ্রীরামকৃষ্ণকে নিয়ে বেলুড় মঠ কতৃর্পক্ষ একটি আর্কাইভ তৈরি করছে। এ কারণে পৌরসভার কাছে তার ডেথ সার্টিফিকেট চেয়ে পাঠায় মঠ ও মিশন। কিন্তু সরকারি নিয়মে এই নথি দেয়ায় আইনগত নিষেধ রয়েছে।
এ নিয়ে ডেপুটি মেয়রের বলছেন, কাশীপুর থানা থেকে সংগ্রহ করা মূল রেজিস্ট্রেশন খাতা সরকারি সম্পত্তি হওয়ায় এটা দেয়া সম্ভব নয়। কিন্তু ওই খাতা কপি করে বেলুড় মঠ ও মিশনকে তুলে দেয়া হচ্ছে। বেলুড় মঠের হাতে শ্রীরামকৃষ্ণের মৃত্যুর তথ্য সম্বলিত কাগজপত্র তুলে দিতে পেরে কলকাতা পুরসভার তরফ থেকে কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি।
এমএসএইচ/এমএস