প্রতিনিয়ত প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে আমরা মিথ্যা কথা বলে থাকি। কখনও কখনও কিছু পরিস্থিতিতে আমরা মিথ্যা বলতে বাধ্য হই। সে সময় সত্যটা তুলে ধরা যায় না।
Advertisement
নিজের বা অন্য কারো অনুভূতিকে আঘাত না করতে বা সামাজিক ও পেশাগত জীবন সহজ করার জন্য দিনে হাজারো ছোটখাটো মিথ্যা বলে ফেলি আমরা।
কর্মক্ষেত্রে আমাদের কোন সহকর্মী মিথ্যা বললেও কিন্তু আমরা অনেক সময় সেটা বুঝতে পারি। সবার সবদিন হয়তো ভালো যায় না। কাজ নিয়ে কেউ প্রতিদিন খুশীও থাকে না কিংবা সহকর্মীর পদোন্নতিতেও সন্তুষ্ট হতে পারেনা অনেকেই। সেসব ক্ষেত্রে মিথ্যা বলতেই হয়।
কিন্তু যদি কারো কেবল মুডের ব্যপার না হয়ে মিথ্যা বলাটাই হয়ে ওঠে চাকরির অবশ্যম্ভাবী শর্ত? তাহলে তো তাদের মিথ্যা বলতেই হবে। তবে অনেক কর্মক্ষেত্রেই মিথ্যা বলাকে নেতিবাচক হিসেবেই দেখা হয়।
Advertisement
কাউকে যদি মিথ্যার আশ্রয় নিতে হয়, তাহলে তার কর্মদক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দেয়। সেই সঙ্গে বিশ্বাস ও দলগত কাজের ক্ষেত্রে সহকর্মীর মিথ্যা বলা সমস্যা তৈরি করে।
কিন্তু ছোটখাটো মিথ্যা বলা যাদের পেশার অংশ, তাদের ক্ষেত্রে ব্যপারটা কেমন? এ ধরণের পেশার ক্ষেত্রে দেখা যায়, যে যত সুন্দর করে গুছিয়ে বিশ্বাসযোগ্যভাবে মিথ্যা বলতে পারবে, সেই তত ভালো।
যেমন ধরুন সেলসম্যান বা বিমানবালা। এসব পেশার মানুষ হাসিমুখে নিজের পণ্যের গুণ একটু বাড়িয়েই বলবে।
কিংবা বিমানে আপনি কোন বড় বিপদের মধ্যে থাকলেও বিমানবালা কখনোই আপনাকে মুখ গোমড়া সে খবর দেবে না।
Advertisement
বিবির এক প্রতিবেদন অনুযায়ী, নতুন এক গবেষণা বলছে কোন কোন পেশায় মিথ্যা ভালো বলার কারণেই টিকে থাকা যায়। কেননা সেসব পেশায় কর্মীদের ছোটখাটো মিথ্যা বলাটা জরুরি।
বিপণন বিষয়ক এক জরিপে দেখা গেছে, ক্রেতাদের নিয়ে যারা কাজ করেন, তাদের মতে ক্রেতারা চান পণ্য কিনে না ঠকতে। সেলস বা বিনিয়োগ বিষয়ে পড়ছেন বা কাজ করেন এমন ৫শ জনকে বলা হয়েছিল, তাদের দৃষ্টিতে কারা মিথ্যা বলেন বেশি।
বেশিরভাগ উত্তরদাতার বিশ্বাস যারা বেশি কপটতা দেখাতে পারে বা মিথ্যা বলতে পারে তারা সফল হয়। বড় কোন বিপণন কাজের জন্য মিথ্যা বলতে পারেন এমন মানুষকে বেছে নিতে চেয়েছেন ৮০ শতাংশ উত্তরদাতা।
আবার কম বা ছোট জিনিস বিক্রির জন্য তুলনামূলক সৎ ব্যক্তিকে বেছে নিতে মত দিয়েছেন ৭৫ শতাংশ মানুষ।
মিথ্যা বলাকে কিছুক্ষেত্রে স্বাভাবিক বলে মনে করেন মনোবিজ্ঞানীরা। অনেক দার্শনিক হয়তো বলবেন, প্রকৃতিতে কতকিছুই তো লুকনো থাকে।
চাকরির দরখাস্ত লিখতে গিয়েও দু'একটা যোগ্যতা সবাই বাড়িয়ে লেখেন। এটাও কিন্তু এক ধরনের মিথ্যাচার। আর নিয়োগকারীরাও সেটা ঠিকই জানেন।
তবে ধরুন ফ্লাইট অ্যাটেনডেন্ট, বারটেন্টার বা মনোবিজ্ঞানী, তারা কোন খারাপ খবর সরাসরি কাউকে দেন না। গুছিয়ে যা বলেন, তার প্রধান উদ্দেশ্য প্রশ্নকারী যেন আহত না হন তা নিশ্চিত করা। এগুলো এমন মিথ্যা যেগুলো আমাদের ক্ষতি করে না, কিন্তু ব্যপারটা সত্যও নয়।
এক জরিপে দেখা গেছে, কর্মীদের মধ্যে একটা বিশ্বাস থাকে যে, যেসব প্রস্তাব তারা বাস্তবায়ন করতে পারবেন না, সহকর্মীরা তা তাদের ওপর চাপানো যাতে না হয়, তা দেখবেন।
অনেক ক্ষেত্রেই চিকিৎসকরাও আমাদের মিথ্যা বলেন। কোন ধরনের খারাপ রিপোর্ট আসলেও আপনাকে হয়তো সেটা না জানিয়ে চিকিৎসক জানাবেন যে, রিপোর্ট ভালো এসেছে।
এ ধরণের মিথ্যা বা ছলনার আশ্রয় নেয়ার মূল উদ্দেশ্য থাকে অন্যকে সাহায্য করা। এর পেছনে একটা বড় কারণ হচ্ছে সমাজের এক ধরণের সাংস্কৃতিক প্রভাব। সমাজের বিভিন্ন স্তর ও জায়গা থেকে আসা মানুষ শান্তি রক্ষায় একটি স্বস্তির পরিবেশ রাখার জন্য অনেক সময় মিথ্যা বলে থাকেন।
এক গবেষণায় দেখা গেছে, অংশগ্রহণকারীদের বড় অংশ যারা দক্ষিণ কোরিয়া ও গ্রীস থেকে এসেছেন তারা বেশি মিথ্যা বলেন। এর কারণ তারা সমষ্টিগত সমাজের মধ্য থেকে এসেছেন। ফলে অনেক মানুষের সাথে মিলে চলতে হয় তাদের।
আবার একক পরিবার বেশি এমন সমাজ যেমন জার্মানি ও অস্ট্রেলিয়া থেকে আসা মানুষের মধ্যে লুকোচুরি কম। আবার অনেক মনোবিজ্ঞানী বলে থাকেন যে, ভিন্নভাবে দেখার দৃষ্টি যাদের আছে কিংবা যাদের কল্পনাশক্তি অত্যন্ত প্রবল তাদের মধ্যেও মিথ্যা বলার অভ্যাস থাকে। কিন্তু সে মিথ্যাও কোন গুরুতর অপরাধ নয়।
টিটিএন/এমএস