বিশেষ প্রতিবেদন

জোট-মহাজোটে দূরত্ব বাড়ছে!

ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন জোট-মহাজোটের মধ্যে দূরত্ব বাড়ছে নাকি শরিকদের মন্ত্রিত্ব না দেয়ায় তারা অভিমান করেছেন? সম্প্রতি জোট-মহাজোটের শরিকরা সরকারের কড়া সমালোচনা করতে দ্বিধা করছেন না। জোট-মহাজোটে থেকেও তারা এমনভাবে কথা বলছেন, মনে হচ্ছে যেন তারা সরকারের বিরোধী পক্ষ। বিএনপি যেভাবে কথা বলছে, শরিকরাও সেভাবে সরকারের কড়া সমালোচনা করছে।

Advertisement

জোট-মহাজোটের শরিকদের এমন আচরণে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরাও খুব বিব্রত। এর আগে মহাজোট সরকারে থাকাকালীন ১৪ দলের শরিক রাশেদ খান মেনন ও হাসানুল হক ইনু মন্ত্রী ছিলেন। মহাজোটের শরিক জাতীয় পার্টির নেতা জি এম কাদের, আনোয়ার হোসেন মঞ্জু, মসিউর রহমান রাঙ্গা ও মুজিবুল হক চুন্নু মন্ত্রী-প্রতিমন্ত্রীর দায়িত্বে ছিলেন। কিন্তু ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে জয়ী হয়ে সরকার গঠনের সময় জোট-মহাজোটের দিকে ফিরে তাকাননি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। নিজ দলের নেতাদের নিয়েই তিনি সরকার গঠন করেন। মন্ত্রিত্ব থেকে বাদ পড়ায় সরকারের ওপর মনোক্ষুণ্ন হন শরিকরা।

আওয়ামী লীগ নেতাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, এবার মন্ত্রিত্ব না দেয়ায় শরিকদের অনেকেই সরকারের ওপর অখুশি। গত পাঁচ বছরে তারা মন্ত্রী থাকা অবস্থায় দেশে অনেক ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু একটি কথা বলার মতো, একটি বিবৃতি দেয়ার মতো সাহস কেউ দেখাননি। এখন একটু কিছু হলেই তারা এমনভাবে বক্তৃতা-বিবৃতি দিচ্ছেন, যেন সরকারের ওপর ক্ষোভ ঝাড়ছেন।

সম্প্রতি আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন ১৪ দলীয় জোটের শরিক বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির সভাপতি রাশেদ খান মেনন জাতীয় সংসদে দাঁড়িয়ে বলেন, নির্বাচন নিয়ে জনগণ আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। উপজেলা নির্বাচনেই তার প্রমাণ পাওয়া যায়। মসজিদে মসজিদে ঘোষণা দিয়েও ভোটারদের আনা যায় না। এটা নির্বাচনের জন্য শুধু নয়, গণতন্ত্রের জন্যও বিপজ্জনক। জাতীয় সংসদে ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটের ওপর আলোচনায় অংশ নিয়ে তিনি আর্থিক খাতের দুরবস্থা, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ রাখা এবং উন্নয়ন বৈষম্যের কঠোর সমালোচনা করেন।

Advertisement

এর আগে ধানের দাম কম থাকায় এবং ধানখেতে আগুন দেয়ার ঘটনা নিয়ে গত ১ জুন রাশেদ খান মেনন ক্ষেতমজুর সমিতির এক কর্মসূচিতে বলেন, কৃষকদের রক্ষায় সরকার যদি কার্যকর ব্যবস্থা না নেয় তাহলে কৃষক কেবল ধানেই আগুন দেবে না, ভারতের কৃষকের মতো মৃত্যুর পথও বেছে নেবে।

২০০৮ সালের ২৯ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত নবম সংসদের নির্বাচনে ১৪ দলীয় জোটের শরিক হিসেবে মেননের নেতৃত্বাধীন ওয়ার্কার্স পার্টি এবং হাসানুল হক ইনুর নেতৃত্বাধীন জাসদের প্রার্থীরা এমপি হয়ে সংসদে আসেন। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দশম সংসদের আগে গঠিত নির্বাচনকালীন সরকারের মন্ত্রিসভায় তারা যোগ দেন।

একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে জোটবদ্ধ হয়ে অংশ নিলেও ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের এখনকার আচরণ ‘মেনে নেয়া যাচ্ছে না’ বলে সম্প্রতি দলের এক সভায় উষ্মা প্রকাশ করেন জাতীয় পার্টির মহাসচিব মসিউর রহমান রাঙ্গা। তিনি বলেন, গত ৩০ ডিসেম্বরের নির্বাচনে বিএনপি আসার পর আসন-সমঝোতা করে ভোটে অংশ নেয় আওয়ামী লীগ ও জাতীয় পার্টি। কিন্তু এবার সরকারে জাতীয় পার্টিকে নেয়নি আওয়ামী লীগ, অনেকটা ইচ্ছার বিরুদ্ধেই তাদের বসতে হয়েছে সংসদে বিরোধী দলের আসনে।

তিনি আরও বলেন, দেশের বিভিন্ন উপজেলা, ইউনিয়নে জাতীয় পার্টি ভোট করতে চাইলে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়। সম্প্রতি বগুড়া-৬ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থী দেয়ায় ক্ষুব্ধ হন জাতীয় পার্টির নেতারা। এ কারণে জাতীয় পার্টির প্রার্থী নুরুল ইসলাম ওমরকে হারতে হয়েছে বলে মনে করেন তারা। রাঙ্গা বলেন, প্রতিটি ইউনিয়ন, উপজেলা নির্বাচনে জাতীয় পার্টির বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। বগুড়ার নির্বাচনে জাতীয় পার্টির জয়ের ধারাকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে সরকারি দল।

Advertisement

আগামীতে দলকে শক্তিশালী করে এককভাবে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার কথা বলেন জাতীয় পার্টির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জি এম কাদের। তিনি বলেন, বড় দলগুলোর সঙ্গে জোটবদ্ধ হয়ে নির্বাচন করলে ছোট দলগুলো অস্তিত্ব সংকটে পড়ে। জাতীয় পার্টিকে আরও শক্তিশালী করতে পারলে, আমরা আমাদের স্বকীয়তা নিয়ে রাজনীতিতে একটি জোটের নেতৃত্ব দিতে পারব।

এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পদক, সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরকে প্রশ্ন করা হলে তিনি জাগো নিউজকে বলেন, এসব বক্তব্য রাশেদ খান মেনন ও মসিউর রহমান রাঙ্গার নিজস্ব। রাষ্ট্রের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে ব্যক্তি হিসেবে তাদের ভিন্ন মত থাকতেই পারে। এটাই তো গণতন্ত্র। তবে তাদের এসব বক্তব্য জোটের নয় বলে অভিমত ব্যক্ত করেন ওবায়দুল কাদের।

এফএইচএস/এমএআর/জেআইএম