ধর্ম

পরকালে সর্বাধিক শাস্তি ভোগ করবে যারা

ইসলাম মানুষের জন্য গ্রহণযোগ্য জীবন ব্যবস্থা জানার পর যারা ইসলাম সম্পর্কে মতবিরোধ করে তাদের উদ্দেশ্যে মহান আল্লাহ ঘোষণা ছিল এরকম যে, ‘(হে রাসুল!) যদি তারা আপনার সঙ্গে দ্বন্দ্ব-কলহ করে তবে আপনি তাদের বলে দিন, আমি ও আমার অনুসারিরা আল্লাহর কাছে আত্ম-সমর্পণ করেছি।’

Advertisement

আল্লাহর নির্দেশে বিশ্বনবির দেয়া কুরআনের ঘোষণা অবিশ্বাসী ইয়াহুদি সম্প্রদায় মেনে নেয়নি বরং তা অস্বীকার করে। ইয়াহুদিরা তাদের নবিদের কথা অমান্য করে এবং নবি ও তাদের অনুসারিদের হত্যা করে। ফলে তারা দুনিয়াতে হবে লাঞ্ছিত এবং পরকালে ভোগ করবে কঠোর শাস্তি।

আল্লাহ তাআলা বনি ইসরাইলের সেসব অনুসারীদের বর্ণনা এখানে তুলে ধরেছেন, যারা তাদের নবিদের অস্বীকার করেছিল এবং তাদের হত্যা করেছিল। যাদের ব্যাপারে সর্বোচ্চ শাস্তির কথা ঘোষণা করেছে। আল্লাহ তাআলা বলেন-

আয়াতের অনুবাদ

Advertisement

আয়াতের পরিচয় ও নাজিলের কারণসুরা আল ইমরানের ১৯ ও ২০ নং আয়াতে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে ঘোষণা করার পর ২১ ও ২২নং আয়াতে বনি ইসরাইলের নবিদের ও তাওহিদের অনুসারিদের অবিশ্বাস ও হত্যার কথা তুলে ধরেছেন। তাদের কঠোর শাস্তির কথাও তুলে ধরেছেন এ আয়াতে।

‘নিশ্চয় যারা আল্লাহর নিদর্শনসমূহকে অস্বীকার করে’ বলে কুরআনে ইয়াহুদিদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে। এমনিভাবে এ ইয়াহুদি সম্প্রদায় আগের আসমানি গ্রন্থ ইঞ্জিল অস্বীকার করে এবং তাওরাতের সেসব অংশকেও অস্বীকার করে, যেসব অংশে বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের আলোচনা বর্ণিত ছিল।

এ আয়াতে আরো বলা হয়, ‘যারা অন্যায়ভাবে আম্বিয়ায়ে কেরামকে হত্যা করে এবং ন্যায় ইনসাফের উপদেশদানকারী মানুষকে হত্যা করে।’

ইসলামের প্রাথমিক যুগে আরবের ইয়াহুদি সম্প্রদায় তাদের নবি ও নবি অনুসারীদের হত্যার মতো বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকেও হত্যা করার ষড়যন্ত্র করো। তারা বিশ্বনবিকে খাদ্যের সঙ্গে বিষ মিশিয়ে হত্যার ষড়যন্ত্রও করেছিল। বিশ্বনবির প্রতি জাদু করেছিল। এমনকি তার বিপরীতে যুদ্ধও করেছিল।

Advertisement

তাদের এ অমার্জনীয় অপরাধকেও তারা অপরাধ মনে করতো কিন্তু ক্ষমতার লোভ ও অর্থ-সম্পদের লালসায় তাদেরকে এ অন্যায় কাজের দিকে ধাবিত করতো।

নবি ও নবি অনুসারীদের হত্যা প্রসঙ্গে তাফসিরে এসেছে-হজরত আবু ওবায়দা ইবনুল জাররাহ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, আমি একবার বিশ্বনবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের খেদমতে আরজ করলাম, ইয়া রাসুলাল্লাহ! কেয়ামতের দিন সর্বাধিক কঠিন শাস্তি কার হবে? তিনি ইরশাদ করলেন, যে কোনো নবীকে হত্যা করেছে অথবা যে সৎ কাজের নির্দেশ প্রদানকারী ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধকারীকে হত্যা করেছে। এরপর বিশ্বনবি এ আয়াত তেলাওয়াত করেন।

রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ইয়াহুদিদের শাস্তির বর্ণনা প্রসঙ্গে বলেন-‘বনি ইসরাইল ৪৩ জন নবীকে দিনের প্রথম ভাগে এক ঘণ্টার মধ্যে হত্যা করে। আম্বিয়ায়ে কেরামের শাহাদাতের পর বনি ইসরাইলের ১২০ জন পরহেজগার ব্যক্তি সৎ কাজের নির্দেশ ও মন্দ কাজ থেকে নিষেধ করতে সচেষ্ট হয়।ইয়াহুদিরা ওই একই দিনের শেষ ভাগে তাদেরকেও হত্যা করে। তাদের সম্পর্কেই আল্লাহ তাআলা কঠিন শাস্তির কথা ঘোষণা করেছেন-

‘(হে রাসুল!) আপনি তাদেরকে কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির খবর দিন।’

আরও পড়ুন > দ্বীনের দাওয়াত প্রসঙ্গে বিশ্বনবির প্রতি আল্লাহর নির্দেশ

এ ইয়াহুদিদের দুনিয়ার সব কাজই ব্যর্থ হয়েছে। দুনিয়া ও পরকালে তারা ব্যর্থ। দুনিয়ার জীবনে তারা অভিশপ্ত আর পরকালে কঠোর শাস্তিও তাদের জন্য নির্ধারিত। পরকালে তাদের কঠিন শাস্তির সময় কোনো সাহায্যকারীও থাকবে না।

আলোচ্য আয়াতের আলোকে এ কথা সুস্পষ্ট যে, ইয়াহুদিরা পরকালে সর্বাধিক শাস্তি ভোগ করবে। শুধু ইয়াহুদিরা নয়, বরং দুনিয়াতে যারা ইসলামকে জীবন ব্যবস্থা হিসেবে মেনে নেবে না এবং ইয়াহুদিদের অনুসরণ ও অনুকরণ করবে, তারাও পরকালে সর্বোচ্চ শাস্তি ভোগ করবে। তাদের ব্যাপারেই প্রিয় নবি সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কুরআনের কঠোর যন্ত্রণাদায়ক শাস্তির সতর্কবার্তা ঘোষণা করেছেন।

আল্লাহ তাআলা মুসলিম উম্মাহকে পরিপূর্ণ জীবন ব্যবস্থা হিসেবে ইসলামকে মেনে নেয়ার মাধ্যমে জীবনের সব কাজ ইসলামের আলোকে বাস্তবায়ন করার তাওফিক দান করুন। ইয়াহুদিদের অনুসরণ ও অনুকরণ থেকে হেফাজত করুন। পরকালের কঠোর শাস্তি থেকে হেফাজত করুন। আমিন।

এমএমএস/এমকেএইচ