স্বাস্থ্য

অকার্যকর হয়ে পড়ছে বাংলাদেশসহ ১১টি দেশের ওষুধ!

বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়ার ১১ দেশের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধ অকার্যকর হয়ে পড়ছে বলে জানা গেছে। ফলে দুরূহ হয়ে পড়ছে অস্ত্রোপচার ও ক্যান্সারসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের চিকিৎসা। ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে এ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের (আঞ্চলিক পরিচালক) ড. পুণম ক্ষেত্রপাল সিং বুধবার তিমুর লেস্তের (পূর্ব তিমুর) রাজধানী দিলিতে ৬৮তম বার্ষিক সম্মেলনে বক্তৃতাকালে এ কথা বলেন। বাংলাদেশসহ ১১ দেশের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ কর্মকর্তারা সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন।বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এ অবস্থাকে ‘অ্যান্টিবায়োটিক পূর্ব যুগ’এর সঙ্গে তুলনা করেছে। একই সঙ্গে এ অবস্থাকে জনস্বাস্থ্যের জন্য চরম হুমকি হিসেবে চিহ্নিত করে ভুক্তভোগী দেশগুলোকে ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছে। ভুক্তভোগী দেশগুলোর মধ্যে ভুটান, কোরিয়া, ভারত, ইন্দোনেশিয়া, মালদ্বীপ, মিয়ানমার, নেপাল, শ্রীলংকা, থাইল্যান্ড ও তিমুর লেস্তে রয়েছে। ড. পুণম ক্ষেত্রপাল সিং বলেন, অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ধরনের ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে এখনই প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা না নেয়া হলে সংক্রামক রোগ-ব্যাধিতে বিশ্বে আগে যেমন লাখ লাখ মানুষের মৃত্যু হতো সেই অবস্থা সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে।   অ্যান্টিবায়োটিক অকার্যকর হওয়ার ফলে বর্তমানে আইসিইউতে সংক্রমণজনিত নিউমোনিয়া, মূত্রনালীর সংক্রমণ, ডায়রিয়া, গনোরিয়া, যক্ষা ও ম্যালেরিয়াসহ বিভিন্ন রোগের সুচিকিৎসা দুরূহ হয়ে পড়ছে। দিনকে দিন অ্যান্টিবায়োটিক রোগ প্রতিষেধকের বদলে রোগ প্রতিরোধী হয়ে উঠছে। অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধ করা সম্ভব না হলে প্রতি বছর বিশ্বে  এক কোটি মানুষের মৃত্যু হবে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, বাংলাদেশে অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহারের ফলে জীবনরক্ষাকারী অনেক ওষুধ প্রতিষেধকের বদলে প্রতিরোধক হয়ে উঠছে। উন্নত বিশ্বে প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ বিক্রি সম্পূর্ণরূপে নিষিদ্ধ হলেও দেশের পাড়া-মহল্লার ছোটখাট ফার্মেসি এমনকি মুদি দোকানেও প্রেসক্রিপশন ছাড়া অ্যান্টিবায়োটিক মুড়ি-মুড়কির মতো বিক্রি হয়।  এক শ্রেণির অসৎ চিকিৎসক সাধারণ জ্বর কাশিসহ ছোটখাট অসুখ-বিসুখেও উচ্চমাত্রার অ্যান্টিবায়োটিক লিখে দিচ্ছেন। এমবিবিএস ডিগ্রিধারী ছাড়াও গ্রামেগঞ্জে হাট বাজারে হাতুড়ে চিকিৎসকরা সবচেয়ে বেশি অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ লিখছেন। বিভিন্ন ওষুধ কোম্পানির রিপ্রেজেনটিটিভরা হাতুড়ে চিকিৎসকদের উচ্চমাত্রার দামী অ্যান্টিবায়েটিক লিখতে নগদ টাকা ও বিভিন্ন ধরনের গিফট ভাউচার প্রদানের মাধ্যমে নানাভাবে প্ররোচিত করছেন।১৯২৮ সালে স্কটল্যান্ডের জীববিজ্ঞানী স্যার আলেকজেন্ডার ফ্লেমিং প্রথম পেনিসিলিন অ্যান্টিবায়োটিক আবিষ্কার করেন। যার মাধ্যমে সিফিলিসসহ বিভিন্ন ধরনের জটিল রোগের সফল চিকিৎসা করা হতো। বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে একশ’ বছরেরও কম সময়ে এমপিসিলিন, এমোক্সিসিলিন, সিপ্রোফ্লোসাসিন ও এজোথ্রোমাইসিনের গ্রুপের ওষুধগুলো আগের মতো কাজ করছেনা। ২০০৯ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মেসি বিভাগ ও ইংল্যান্ডের নটিংহাম ইউনিভার্সিটির যৌথ উদ্যোগে পরিচালিত এক জরিপে দেখা যায়, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস উৎপাদিত জিম্যাক্স (এজিথ্রোমাইসিন) ও এসকেএফের জিথ্রক্স (এজিথ্রোমাইসিন) এর শতকরা ৪০ ভাগ ওষুধ ব্যাকটেরিয়া প্রতিরোধক হয়ে উঠেছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ফার্মাকোলজি বিভাগের অধ্যাপক ডা. সায়েদুর রহমানসহ একাধিক ওষুধ বিশেষজ্ঞ বিভিন্ন সময় গণমাধ্যম কর্মীদের অ্যান্টিবায়োটিকসহ বিভিন্ন ওষুধের অকার্যকর হওয়ার আশঙ্কা ব্যক্ত করে বলেন, সব ধরনের ওষুধের যথেচ্ছ ও ভুল ব্যবহার জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকি স্বরূপ।স্বাস্থ্য অধিদফতরের সাবেক পরিচালক (সংক্রামক ব্যাধি নিয়ন্ত্রণ) অধ্যাপক ডা. বে-নজির আহমেদ দুই বছর আগেই  জানিয়েছিলেন, অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধের যথেচ্ছ ব্যবহার বন্ধে গাইড লাইন তৈরি হচ্ছে। কিন্তু অদ্যাবধি তা আলোর মুখ দেখেনি। এমইউ/এএইচ/এসএইচএস/আরআইপি

Advertisement