দেশজুড়ে

রমেক হাসপাতালে ডায়ালাইসিস বন্ধ

রংপুর মেডিকেল কলেজ (রমেক) হাসপাতালের কিডনি বিভাগের ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট নষ্ট হওয়ায় গত সোমবার বিকেল থেকে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। ফলে ভোগান্তিতে পড়েছেন রোগীরা। দ্রুত ডায়ালাইসিস শুরু না হলে মুমূর্ষু রোগীরা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনার শিকার হতে পারেন।

Advertisement

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, সার্বক্ষণিক ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু রাখতে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকলেও প্রথমটি চার মাস আগে নষ্ট হয়ে যায়। যা আজও সচল করেনি হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

ইতিমধ্যে গত ১১ জুন কেমিক্যাল সরবরাহ না থাকার অজুহাতে প্রায় দুই ঘণ্টা ডায়ালাইসিস কার্যক্রম বন্ধ ছিল।

হাসপাতালের বিশ্বস্ত একটি সূত্রে জানা গেছে, উপকরণ সরবরাহকারী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি দীর্ঘদিনের বকেয়া না পাওয়ায় পরিস্থিতি আরও ঘোলাটে হচ্ছে।

Advertisement

কিডনি বিভাগে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মোট ২৪টি ডায়ালাইসিস মেশিনের মধ্যে সচল আছে ১৮টি। বর্তমানে প্যাকেজসহ নতুন মিলে প্রতিদিন ২ শিফটে ৫০ থেকে ৮০জন রোগীর ডায়ালাইসিস করা হয়। কিন্তু ডায়ালাইসিস কার্যক্রম চালু রাখতে দুটি ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট থাকলেও বর্তমানে দুটিই নষ্ট হওয়ায় কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়।

এদিকে ডায়ালাইসিস কার্যক্রম পুনরায় চালু করতে কিডনি রোগীরা গতকাল মঙ্গলবার বেলা সাড়ে ১১টার দিকে পরিচালকের রুমে ঢুকতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেয়। বাগবিতণ্ডার একপর্যায়ে রোগীদের সঙ্গে হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে নয়ন (৩৭) নামে এক কিডনি রোগী মারাত্মক জখম হন। তাকে বাঁচাতে এসে তার স্ত্রীও আহত হন।

জানা গেছে, কেমিক্যাল গ্রুপে বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ দেয় লেকজিকোন নামে একটি প্রতিষ্ঠান। কিন্তু প্রতিষ্ঠানটির প্রায় দুই বছর এই গ্রুপে সরবরাহকৃত কেমিক্যালের জন্য বরাদ্দকৃত প্রায় কয়েক কোটি টাকা আজও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পরিশোধ না করায় নানা অচলাবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে।

লেকজিকোন লিমিটেড সূত্রে জানা গেছে, ২০১৭ সালের ১ জুলাই থেকে ২০১৯ সালের আজ অবধি কেমিক্যাল গ্রুপ বিভিন্ন উপকরণ সরবরাহ করলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ কোনো টাকা পরিশোধ করেননি। বিষয়টি একাধিকবার বর্তমান পরিচালককে বলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না।

Advertisement

প্রতিষ্ঠানের একজন প্রতিনিধি বলেন, আগামী ৩০ জুনের মধ্যে টাকা পরিশোধ না করলে সরকারি টাকা ফেরৎ যাবে পাশাপাশি মারাত্মক সমস্যায় পড়বে তাদের প্রতিষ্ঠান।

এ বিষয়ে লেকজিকোন’র ম্যানেজার শাকিল চৌধুরী বলেন, আমাদের প্রতিষ্ঠান ওয়াটার প্ল্যান্টটি সরবরাহ করলেও ভালো করার দায়িত্ব আমাদের নয়। তবে আমরা মানবিক কারণে এর আগে নষ্ট মেশিন সাভির্সিং করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, যে কোনো নষ্ট মেশিন সার্ভিসিং করতে আমরা প্রস্তুত আছি। কিন্তু হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের কাছে ওয়ার্ক অর্ডার চাইলে তারা দেয় না।

রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ডা. মো. আব্দুল গণি বলেন, প্ল্যান্টগুলো সরবরাহ করেছে লেকজিকোন নামে একটি কোম্পানি। তাই নষ্ট মেশিন ভালো করার জন্য ওই প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষকে বলা হয়েছে।

প্রতিষ্ঠানটির দুই বছরের বকেয়া পাওনা সম্পর্কে জানতে চাইলে পরিচালক বলেন, গত দুই বছর বকেয়া থাকার পরও তারা কাজ করছে। আমি যোগদানের পর প্রতিষ্ঠানটিকে কয়েক মাস চালিয়ে নেয়ার কথা বললেও তারা শুনছে না।

কিডনি রোগী আহত হাওয়ার বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, বেশকিছু লোক একযোগে আমার রুমে ঢুকতে চাইলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা তাদের বাধা দেন। এতে কেউ আহত হতে পারেন।

জিতু কবীর/আরএআর/জেআইএম