পারিবারিক সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগ করেছে রাজধানীর ওয়ারীর বাসিন্দা সামসুন নাহার। তিন মাস অন্তর তিনি মুনাফার টাকা তোলেন। কিন্তু গত মাসে ঈদের ব্যস্ততার কারণে মুনাফা তুলতে আসেননি। হঠাৎ শুনেছেন সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। আগামী ৩০ জুনের আগে মুনাফার অর্থ না তুললে নাকি ৫ শতাংশের পরিবর্তে ১০ শতাংশ হারে কর কাটা হবে। তাই টাকা তুলতে এসেছেন তিনি।
Advertisement
সামসুন নাহারের মতো শত শত সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারী বুধবার সকাল থেকেই মুনাফার টাকা তুলতে বাংলাদেশ ব্যাংকে এসে ভিড় করেছেন। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সঞ্চয়পত্রের গ্রাহকদের দীর্ঘ লাইন। তাদের বেশিরভাগই এসেছেন সুদের টাকা তুলতে।
২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর দ্বিগুণ করা হয়েছে। এ প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে বর্ধিত হারে কর কাটা হবে। এই ভয়ে সঞ্চয়পত্রের সুদ তুলতে গ্রাহকরা ভিড় করছেন।
প্রস্তাবিত বাজেটে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর উৎসে কর ৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। এর আগে ২০১৬ সাল পর্যন্ত সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ হারে উৎসে কর কেটে রাখা হতো। নতুন প্রস্তাব পাস হলে আগামী ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে সুদের ওপর নতুন করের হার। এ নিয়ে বিভ্রান্তিতে পড়েছেন গ্রাহকরা।
Advertisement
আরও পড়ুন>> বর্ধিত কর প্রত্যাহার হতে পারে সঞ্চয়পত্রে
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তারা জানান, দুই সপ্তাহ ধরে গ্রাহক ভিড় করছেন। সবার মনে একটাই প্রশ্ন- ৩০ তারিখের পর থেকে কি বেশি কর কেটে নেবে? যারা মুনাফা তোলেনি তাদের ক্ষেত্রে কী হবে? আমরা সবাইকে বলছি এ ধরনের কোনো নির্দেশনা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) থেকে আসেনি। তারপরও ভয়ে ব্যাংকে ভিড় করছে মানুষ। এতো গ্রাহক সেবা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে। সকাল থেকে কোনো অবসর নেই।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক (ইডি) মো. মাছুম পাটোয়ারী জাগো নিউজকে বলেন, এখন পর্যন্ত কোনো নির্দেশনা পাইনি। মানুষ ভয়ে ভিড় করছে। সাধারণ দিনের তুলনায় ৬-৭ গুণ গ্রাহক বেড়ে গেছে। অন্যান্য সময় যেখানে ১০০ টোকেন দেই, এখন সেখানে ৩ হাজার থেকে ৪ হাজার টোকেন দিতে হচ্ছে।
বাড়তি গ্রাহকের ভিড়ে কর্মী বাড়িয়েও সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছে উল্লেখ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এই ইডি বলেন, অতিরিক্ত দুটি লাইন করেছি। এছাড়া লোকবল বাড়ানো হয়েছে।
Advertisement
তিনি জানান, নিয়মে যে কোনো চুক্তি সম্পাদনের সময় যে ক্ষেত্রে যে হার থাকবে, মেয়াদপূর্তি না হওয়া পর্যন্ত সেই হার কার্যকর থাকবে। কিন্ত এসআরও না পাওয়া পর্যন্ত এ বিষয় বলা ঠিক হবে না।
আরও পড়ুন>> সঞ্চয়পত্রের সব কার্যক্রম অনলাইনে
অর্থ মন্ত্রণালয় ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে জানা গেছে, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহারের বিষয়ে সরকারের দুটি চিন্তা রয়েছে। এর একটি হচ্ছে- বাজারে প্রচলিত সব ধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর থেকে বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে। অথবা শুধু পরিবারভিত্তিক সঞ্চয়পত্র ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর তা প্রত্যাহার করা হবে।
সূত্র জানায়, সঞ্চয়পত্রের মুনাফার ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হচ্ছে। তবে সবধরনের সঞ্চয়পত্রের ওপর না কি শুধু পারিবারিক ও পেনশনার সঞ্চয়পত্রের ওপর বর্ধিত কর প্রত্যাহার করা হবে সে বিষয়ে এখন পর্যন্ত কোনো সিদ্ধান্ত নেয়া হয়নি। এ বিষয়ে নতুন অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পাসের দিন তথা ৩০ জুন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বর্ধিত কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব করতে পারেন।
এদিকে এনবিআর কর্মকর্তারা বলছেন, ১ জুলাই থেকে সঞ্চয়পত্রের সুদের ওপর ১০ শতাংশ উৎসে কর কার্যকর হবে। যারা চলতি নিয়মে ৫ শতাংশ উৎসে কর দিয়ে সুদের টাকা তুলতে চান, তাদের উচিত হবে ৩০ জুনের আগেই সুদের টাকা তোলা। এতে তাদের বাড়তি কর দিতে হবে না।
এসআই/এমএসএইচ/এমকেএইচ