বরিশালের বাবুগঞ্জ উপজেলায় মেয়েকে উত্ত্যক্তের প্রতিবাদে বাবাকে মারধরের ঘটনায় দায়েরকৃত মামলায় বখাটের বিরুদ্ধে আদালতে জবানবন্দি না দিতে হুমকি দেয়ার অভিযোগ উঠেছে। এছাড়া বাবুগঞ্জ উপজেলার রহমতপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শহিদ মল্লিক ও তার সহযোগিদের বিরুদ্ধে অনবরত হুমকির মুখে ওই স্কুলছাত্রী এবং তার পরিবারের লোকজন বাড়ির মধ্যে অবরুদ্ধ হয়ে রয়েছেন বলেও অভিযোগ পাওয়া গেছে। এলাকার নির্ভরযোগ্য একাধিক সূত্র জানায়, বখাটে শাহিন হাওলাদারকে (১৯) গ্রেফতারের পর স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের একটি পক্ষ তাকে ছাড়িয়ে নিতে পুলিশের ওপর প্রভাব বিস্তার করে। বিষয়টি জানাজানি হলে মামলা দয়ের করা হয়। নারী ও শিশু নির্যতন আইনে মামলা দায়েরের পর তা তুলে নিতে বাদী পক্ষের ওপর চাপ সৃষ্টি করে তারা। এক পর্যায়ে তাদের চাপের মুখে ভীত হয়ে থানায় যেতে বাধ্য হয় মেয়ের পরিবার (বাদী পক্ষ)। সেখানে তাদের কাছ থেকে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর নেয়া হয়। বুধবার মেয়েকে নিয়ে বাদীপক্ষের ২২ ধারায় (নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে জবানবন্দি) আদালতে জবানবন্দি দিতে যাওয়ার কথা ছিল। তবে তাদের বাঁধা দিতে স্থানীয় ক্ষমতাসীনদের একটি পক্ষ আগে থেকেই আদালতে অবস্থান করায় তারা (বাদীপক্ষ) যেতে আর সাহস করেনি বলে জানায় ওই সূত্রটি।এ বিষয় জানতে মেয়ের মা ও মামলার বাদী মরিয়ম বেগমের মোবাইলে ফোন দেয়া হলে নিজেদের কোনো স্বজন কথা বলছে ভেবে জানান, জবানবন্দি দিতে আদালতে যাবো কিভাবে, ওখানে ওরা অবস্থান করছে। জবানবন্দি দিলে তার (বাদী মরিয়ম বেগম) বিরুদ্ধে উল্টো মামলা করবে বলে হুমকি দিয়েছে। আর কিছু জানার আগেই ফোনে তার কোনো স্বজন কথা বলছে না বুঝতে পেরে প্রসঙ্গ এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। পরে লাইনটি কেটে দেন।তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করে আওয়ামী লীগ নেতা শহিদ মল্লিক জানান, গ্রেফতার হওয়া বখাটে শাহিন হাওলাদার সম্পর্কে তার ভাতিজা হয়। মামলার খবর নিতে আসামিপক্ষের কেউ হয়তো আদালতে যেতে পারেন । তিনি এ বিষয়ে কিছু জানেন না। এছাড়া তার ভাতিজা শাহিন ও মামলার বাদীর বাড়ী পাশাপাশি। তাই দুই প্রতিবেশির মধ্যে বিবাদ মিটিয়ে মিমাংসার চেষ্টা করছেন। এ ক্ষেত্রে কোনো চাপ প্রয়োগ করা হয়নি বলে তিনি জানান।বিমান বন্দর থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল ইসলাম জানান, বাদীপক্ষকে কেউ হুমকি দিচ্ছে এ রকম কোনো বিষয় পুলিশের জানা নেয়। বাদীপক্ষও তাদের জানায়নি। এ ধরনের কোনো ঘটনা ঘটে থাকলে তা গুরুত্ব সহকারে দেখা হবে।মামলার এজাহার সূত্রে জানা যায়, বাবুগঞ্জ উপজেলার খানপুরার বাসিন্দা সুলতান আহমেদের মেয়ে খানপুরা হাইস্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী আনিহা সুলতানা মীমকে স্কুলে যাওয়া আসার পথে প্রায়ই উত্ত্যক্ত করতো একই এলাকার বখাটে শাহিন হাওলাদার। মেয়েকে কোনোভাবেই বখাটের হাত থেকে রক্ষা করতে না পেরে গত মার্চ মাসে মীমকে খানপুরা স্কুল থেকে ছাড়িয়ে বরিশাল নগরীর জগদিশ সারস্বত স্কুল অ্যান্ড কলেজের নবম শ্রেণিতে ভর্তি করে তার পরিবার। নগরীর কাউনিয়া মরকখোলা পোল সংলগ্ন ভগ্নিপতির বাসায় থেকে পড়াশোনা করছিল মীম। গত ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে সে ভগ্নিপতির বাসা থেকে বেড়াতে নিজ বাড়ি খানপুরা যাচ্ছিল। বাড়ির অদূরে পৌঁছামাত্র বখাটে শাহিন হাওলাদার প্রকাশ্য রাস্তায় মীমের হাত ধরে টানাটানি করে। এ সময় মীমের ডাক চিৎকারে তার বাবা সুলতান আহমেদ এগিয়ে এলে তাকে মারধর করে বখাটে শাহিন এবং তার সহযোগিরা। এ ঘটনায় গত সোমবার দুপুরে মীমের মা বাদী হয়ে বিমান বন্দর থানায় মামলা দায়ের করলে বখাটে শাহিনকে আটক করে পুলিশ। আটক শাহিন হাওলাদার উত্তর রহমতপুর এলাকার মো. জাফরের ছেলে।সাইফ আমীন/এআরএ/পিআর
Advertisement