প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে বক্তব্য দিতে দুই সাংবাদিককে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কার্যালয়ে তলফ ও উপস্থিত হয়ে বক্তব্য না দিলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নোটিশ দেওয়ায় বিক্ষোভ করছেন সাংবাদিকরা। বুধবার (২৬ জুন) সকালে দুদক কার্যালয়ের সামনে তারা এ বিক্ষোভ শুরু করেন।
Advertisement
রাজধানীর সেগুন বাগিচায় দুদক কার্যালয়ের প্রধান গেটের সামনে অবস্থা নিয়ে ঢাকায় কর্মরত বিভিন্ন সংবাদ মাধ্যমের প্রায় শতাধিক সংবাদকর্মী বিক্ষোভ করছেন। অঘোষিত এ বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে দুদককে ক্ষমা চাওয়ার আহ্বান করা হয়।
বাংলাদেশ ক্রাইম রিপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (ক্র্যাব) সাংগঠনিক সম্পাদক রাশেদ নিজাম জাগো নিউজকে বলেন, এটা কোনো চিঠির ভাষা হতে পারে না। তারা (দুদক) সাংবাদিকদের কাছ থেকে অনুসন্ধানের বিষয়ে সহযোগিতা চাইতে পারতো। কিন্তু তারা যে ভাষায় চিঠি দিয়েছে তা গ্রহণযোগ্য নয়। এ চিঠির জন্য তাদেরকে (দুদক) ক্ষমা চাইতে হবে।
ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতি আবু জাফর সূর্য বলেন, চিঠি আজকের (বুধবার) মধ্যেই প্রত্যাহার করতে হবে, তা না হলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) থেকে দুদক কার্যালয়ের সামনে লাগাতার কর্মসূচি চলবে। ফানাফিল্যার এই চিঠির দায় দুদক এড়াতে পারে না। চিঠি প্রত্যাহার না করলে আমরা ভেবে নেব দুদক নামের সংস্থাটি দুর্নীতির বিরুদ্ধে নামকাওয়াস্তে তদন্তের নামে গরিবের টাকা দিয়ে ভোগ বিলাস করছে।
Advertisement
ক্র্যাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মাহবুব আলম লাভলু বলেন, একজনের (ডিআইজি মিজান) বিরুদ্ধে দুই বছর ধরে তদন্ত চলছে, এমনকি সেই কর্মকর্তাকে সাময়িক বরখাস্তের সুপারিশে রাষ্ট্রপতি স্বাক্ষরও করেছেন। এতদিন নিউজ হলেও কিছু হয়নি। যখনই দুদক কর্মকর্তার ঘুষ খাওয়ার বিষয়টি নিয়ে নিউজ হলো তখনই আপনারা (দুদক) সাংবাদিকদের চিঠি দিলেন।
তিনি আরও বলেন, আপনারা যেকোনো সময় সাংবাদিকদের কাছে সহযোগিতা চাইলে আমরা সহযোগিতা করে থাকি। কিন্তু এ ধরনের চিঠি কোনোভাবেই কাম্য নয়। এই চিঠি প্রত্যাহার করে দুদককে ক্ষমা চাইতে হবে।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক রাজু আহমেদ বলেন, প্রতিদিনই আমরা দুর্নীতির বিরুদ্ধে রিপোর্ট করছি। আমরা সাংবাদিকরা যারা সমাজের অসংগতি চোখে আঙুল দিয়ে দেখিয়ে দিচ্ছি, তাদেরকে এ ধরনের চিঠি দেওয়া সাংবাদিকতা পেশার জন্য অপমানজনক। সাংবাদিকদের কাছে আপনারা (দুদক) তদন্তে সহযোগিতা করতে চাইলে আমরা করব, কিন্তু আমরা আপনার বাবার চাকর নই যে, না আসলে আপনারা ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের দাবি, দুদককে নতুন চিঠি ইস্যু করে এ ভুলের জন্য ভুল স্বীকার করে সহযোগিতা চেয়ে আবার চিঠি পাঠাতে হবে।
ডিপ্লোমেটিক করেসপনডেন্টস অ্যাসোসিয়েশন, বাংলাদেশের (ডিকাব) সাধারণ সম্পাদক নূরুল ইসলাম হাসিব বলেন, এ ধরনের চিঠি দিয়ে দুদক প্রমাণ করেছে যে, তারা তাদের কর্মকাণ্ড ঢাকার চেষ্টা করছে। অবিলম্বে এই চিঠি প্রত্যাহার করতে হবে।
Advertisement
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির কার্যনির্বাহী পরিষদের সদস্য মহিউদ্দিন বলেন, দুদকে হাজার হাজার দুর্নীতির ফাইল পড়ে আছে তার খবর না রেখে একটি নিউজ করার দুইদিনের মধ্যে সাংবাদিককে চিঠি দেওয়া হলো। এত বড় দায়িত্বশীল সংস্থা কিভাবে এমন ভুল করে? আমরা এই অসংগতিপূর্ণ চিঠি প্রত্যাহারের দাবি জানাচ্ছি।
সিনিয়র সাংবাদিক পারভেজ খান বলেন, চিঠিতে যে কথা বলা হয়েছে সেটা দুঃখজনক, লজ্জাজনক। এ ধরনের কথা কখনোই মেনে নেওয়া যায় না। এই চিঠির দায় দুদক চেয়ারম্যান এড়াতে পারেন না। আমরা এবার শুধু চিঠি প্রত্যাহার করে ক্ষমা চাওয়ার জন্য বলেছি। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা আপনাদের মুচলেকা দিয়ে মুক্তি পেতে হবে।
দুদক বিটে সাংবাদিকদের সংগঠন রিপোর্টার্স অ্যাগেইনস্ট করাপশনের (র্যাক) প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক গোলাম সামদানী বলেন, দুদক ৭০ শতাংশ তদন্তের তথ্য পত্রিকার সংবাদ থেকে পেয়ে থাকে। এই চিঠি ইস্যু করা কর্মকর্তা দুদক পরিচালক শেখ মো. ফানাফিল্যাহর বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হোক।
ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির সাবেক সাধারণ সম্পাদক মুরসালিন নোমানী বলেন, চিঠি ইস্যুকারী কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করতে হবে।
বিক্ষোভ থেকে এ সময় ঢাকা সাংবাদিক ইউনিয়নের পক্ষে ৪ দফা দাবি তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো- চিঠির জন্য দুঃখ প্রকাশ, চিঠি প্রত্যাহার, চিঠি ইস্যুকারী কর্মকর্তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা ও দুদকে সাংবাদিকদের অবাধ যাতায়াত নিশ্চিত করা।
২৪ ঘণ্টার মধ্যে এসব দাবি মেনে না নিলে আগামীকাল (বৃহস্পতিবার) সকালে আবারও দুদক কার্যালয়ের সামনে অবস্থান নেওয়ার ঘোষণা দেন সাংবাদিকরা।
অনলাইন নিউজ পোর্টাল বাংলা ট্রিবিউনের বিশেষ প্রতিনিধি দীপু সারোয়ার ও বেসরকারি টেলিভিশন এটিএন নিউজের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক ইমরান হোসেন সুমনকে প্রকাশিত সংবাদের বিষয়ে বক্তব্য দিতে তলব করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মঙ্গলবার (২৫ জুন) সংস্থাটির পরিচালক ও অনুসন্ধান দলের প্রধান শেখ মো. ফানাফিল্যা স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে তাদের আজ (২৬ জুন, বুধবার) সকাল সাড়ে ১০টায় দুদকের প্রধান কার্যালয়ে হাজির হতে বলা হয়।
দুদকের দুটি চিঠিতেই অভিযোগের সংক্ষিপ্ত বিবরণী হিসেবে উল্লেখ করা হয়, দুদকের পরিচালক খন্দকার এনামুল বাছিরের বিরুদ্ধে ডিআইজি মিজানুর রহমানের কাছ থেকে ৪০ লাখ টাকা ঘুষ নেওয়ার অভিযোগ প্রসঙ্গে আপনার সাক্ষ্যগ্রহণ ও শ্রবণ একান্ত প্রয়োজন।
আরও বলা হয়, ‘উল্লিখিত অভিযোগের বিষয়ে আগামী ২৬/০৬/২০১৯ খ্রি. তারিখ ১০.৩০ ঘটিকায় নিম্নস্বাক্ষরকারীর কার্যালয়ে উপস্থিত হয়ে বক্তব্য প্রদানের জন্য আপনাকে অনুরোধ করা হলো। অন্যথায় আইনানুগ কার্যধারা গৃহীত হবে।’
এদিকে দুদকের দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করার কারণেই দুই সাংবাদিককে নোটিশ দিয়ে পক্ষান্তরে রাষ্ট্রীয় সংস্থাটি ‘হুমকি’ দিচ্ছে বলে অভিযোগ করছেন গণমাধ্যকর্মীরা। নোটিশের বিষয়টি প্রকাশ পাওয়ার পরপরই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বিষয়টি নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।
এআর/আরএস/জেআইএম