বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বিএসএমএমইউ) প্রথমবারের মতো ২০ বছর বয়সী এক তরুণের দেহে সফল অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে লিভার প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। এ অস্ত্রোপচারে অংশগ্রহণ করেন বিএসএমএমইউয়ের ৬০ সদস্যের একটি চিকিৎসক দল।
Advertisement
গত সোমবার (২৪ জুন) ভোর ৬টা থেকে রাত ১২টা পর্যন্ত টানা ১৮ ঘণ্টা রোগীর দেহে অস্ত্রোপচার এবং অস্ত্রোপচার পরবর্তী দেখভালের জন্য সার্বক্ষণিক উপস্থিত ছিলেন চিকিৎসক দলের সবাই। এ দলে নেতৃত্ব দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের হেপাটোবিলিয়ারি, প্যানক্রিয়েটিক ও লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জারি বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ড. জুলফিকার রহমান খান। দলের সদস্যরা শুধু অস্ত্রোপচার কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেন তা নয়, তারা ২০ ব্যাগ রক্তও দিয়েছেন রোগীকে।
আরও পড়ুন>> বিএসএমএমইউতে প্রথমবারের মতো সফলভাবে লিভার প্রতিস্থাপন
এই সফল অস্ত্রোপচার উপলক্ষে মঙ্গলবার (২৫ জুন) দুপুরে বিএসএমএমইউয়ের মিল্টন হলে এক সংবাদ সম্মেলনে অধ্যাপক ডাক্তার জুলফিকার রহমান খান বলছিলেন, গতকাল সোমবার ভোর ৬টায় বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে মঙ্গলবার ভোর ৫টায় বাসায় ফিরেন দলের সদস্যরা, আবার সকালবেলা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছুটে আসেন।
Advertisement
স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক, স্বাস্থ্য সচিব মো. আসাদুল ইসলাম এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার উপস্থিতিতে তিনি যখন একে একে চিকিৎসক দলের ৬০ সদস্যকে পরিচয় করিয়ে দিচ্ছিলেন তখন উপস্থিত সবার চোখে-মুখে আনন্দের ঝিলিক। গতকাল থেকে প্রায় বিনিদ্র রাত কাটালেও একটি সফল অস্ত্রোপচার তাদের ক্লান্তি দূর করে দিয়েছে, তা স্পষ্ট দেখা যাচ্ছিল।
চিকিৎসক দলে ছিলেন যারা
বিএসএমএমইউ কর্তৃপক্ষ জানায়, অধ্যাপক মো. জুলফিকার রহমান খানের নেতৃত্বে সার্জারি টিমে ছিলেন অধ্যাপক মোহাম্মদ মোহসেন চৌধুরী, সহযোগী অধ্যাপক বিধান চন্দ্র দাস, সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন, ডাক্তার মো. নুর ই এলাহি।
রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন ওমর সিদ্দিকী, মো. ইমরুল হাসান খান, মো. মশিউর রহমান, রাসেল মাহমুদ, আব্দুল্লাহ মোহাম্মদ আবু আইয়ুব আনসারী, সারোয়ার আহমেদ সোবহান, মোহাম্মদ নাজমুল হক, এস এম মর্তুজা হাসান, জাবিউল ইসলাম, মো. আব্দুল কাইয়ুম, আরিফুজ্জামান, আসাদুজ্জামান নূর, মোস্তফা মনোয়ার, এ কে আজাদ, সবিতা রানী, আজফার বিন আনিস ও ডাক্তার মো. ইমরান আলী।
Advertisement
আরও পড়ুন>> মায়ের দেয়া লিভারে নতুন জীবনের স্বপ্ন ছেলের
জটিল অপারেশন সম্পন্নের সময় রোগীকে অজ্ঞান করার জন্য এনেসথেসিয়া, এনালসেজিয়া ও ইনটেনসিভ কেয়ার মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক এ কে এম আখতারুজ্জামানের নেতৃত্বে এনেসথেসিয়া টিমে ছিলেন অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল হাই, ডাক্তার ইকবাল হোসেন চৌধুরী, সাবিনা ইয়াসমিন, মন্তোস কুমার মন্ডল, আব্দুল আলিম, সঞ্জয় কুমার সাহা, মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল।
রেসিডেন্ট চিকিৎসকদের মধ্যে ছিলেন মোহাম্মদ আসিফ মাহমুদ, কল্যাণ দেবনাথ, সানাউল হক মাসুদ, শাহরিনা শারমিন , রকি দাশগুপ্ত, সুদীপ কুমার দাস ও কামরুল হাসান।
অপারেশন চলাকালীন ইমেজ ইন সংক্রান্ত কাজ সম্পন্ন করার জন্য রেডিওলজি ও ইমেজিং বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডাক্তার এম এইচ মোস্তফা কামাল ও রেসিডেন্ট দীপক ভার্মা উপস্থিত ছিলেন।
আরও পড়ুন>> বিএসএমএমইউয়ে লিভার প্রতিস্থাপন স্বাস্থ্যসেবার নতুন মাইলফলক
এই চিকিৎসক টিমকে সহায়তা করেন ভারতের প্রথিতযশা লিভার ট্রান্সপ্লান্ট সার্জন ডাক্তার পি বালাচান্দ্র মেননের নেতৃত্বে ৪ সদস্যের একটি টিম।
এ অস্ত্রোপচার কার্যক্রমের নার্স, টেকনিশিয়ান ও ওয়ার্ড বয়ও সহায়ক ভূমিকা রাখেন। ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ, নিউরো সার্জারি নির্বাহী বিভাগ কার্ডিয়াক সার্জারি বিভাগ, রেডিওলজি অ্যান্ড ইমেজিং বিভাগ, ল্যাবরেটরি মেডিসিন বিভাগ, প্যাথলজি বিভাগ ও বায়োকেমিস্ট্রি বিভাগসহ অন্যান্য বিভাগের চিকিৎসকরা সহায়তা করেন।
এমইউ/জেডএ/পিআর