>> কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ>> এ প্রস্তাব প্রত্যাহার চেয়ে অর্থমন্ত্রীর কাছে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রীর চিঠি>> বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা ৩ কোটি ৩৪ লাখ>> ১ কোটি ২০ লাখ গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন
Advertisement
করের আওতা বাড়াতে এবার বাজেটে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) সার্টিফিকেট বাধ্যতামূলক করার প্রস্তাব করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। তবে এ বিষয়টিতে ঘোর আপত্তি জানিয়েছেন বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজসম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ। তিনি বলেছেন, এটি বাস্তবায়িত হলে দেশের দরিদ্র মানুষের হয়রানি বাড়বে। একই সঙ্গে কর্মঘণ্টা অপচয়ের পাশাপাশি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে জনগণ।
এ বিষয়ে সোমবার (২৪ জুন) অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালকে লেখা চিঠিতে প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ বলেন, ‘আপনি নিশ্চয় অবগত আছেন, ঘরে ঘরে বিদ্যুৎ পৌঁছে দেয়া সরকারের অন্যতম নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি। ইতোমধ্যে ৯৩ ভাগ জনগোষ্ঠী বিদ্যুৎ সুবিধার আওতায় এসেছে। বর্তমানে বিদ্যুৎ গ্রাহক সংখ্যা সারাদেশে ৩ কোটি ৩৪ লাখ। এর মধ্যে বাংলাদেশ পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের গ্রাহক সংখ্যা ২ কোটি ৬৪ লাখ। পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের এই গ্রাহকের মধ্যে ১ কোটি ২০ লাখ লাইফ লাইন গ্রাহক। অর্থাৎ এসব গ্রাহক মাসে ৫০ ইউনিট পর্যন্ত বিদ্যুৎ ব্যবহার করেন। প্রস্তাবিত বাজেটের অর্থবিলে প্রস্তাব করা হয়েছে যে, বিদ্যুৎ সংযোগ থাকলেই কর শনাক্তকরণ নম্বর (টিআইএন) নিতে হবে। কিন্তু লাইন লাইফ গ্রাহকেরা খুবই দরিদ্র। অনেকেই দিনমজুর। তাদের পক্ষে টিআইএন করা কষ্টদায়ক ও অমানবিক। তাছাড়া টিআইএন থাকলে প্রতিবছর আয়কর রিটার্ন জমা দিতে হয়। যা ওই দরিদ্র শ্রেণি লোকদের জন্য হয়রানিমূলক, কর্মকালের অপচয় এবং তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হবে বলে মনে করি।’
চিঠিতে বিদ্যুৎ প্রতিমন্ত্রী বিদ্যুৎ সংযোগে টিআইএন থাকার প্রস্তাব প্রত্যাহার করার জন্য অর্থমন্ত্রীকে অনুরোধ জানান।
Advertisement
এদিকে বিদ্যুৎ সংযোগের জন্য টিআইএন সার্টিফিকেটের প্রয়োজন নেই বলে মনে করছে বিদ্যুৎ বিভাগ। বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তারা বলছেন, আবাসিকের ক্ষেত্রে একজন বাড়িওয়ালা বা ভাড়াটিয়ার টিআইএন নম্বর না-ও থাকতে পারে। এ ছাড়া, নতুন বিদ্যুৎ সংযোগের ক্ষেত্রে এমনিতেই অনেক কাগজপত্র জমা দিতে হয়। নতুন করে আরও একটি জটিল বিষয় যুক্ত হলে সংযোগ পেতে গ্রাহকদের আরও সমস্যা হবে। তারা বলছেন, এটি বাস্তবায়ন হলে নিম্নবিত্তরা সবচেয়ে বেশি বিপদে পড়বে।
জানা গেছে, আবাসিকে বিদ্যুতের সংযোগের জন্য আবেদনপত্রের সঙ্গে আবেদনকারীর দুই কপি সত্যায়িত রঙিন ছবি, জাতীয় পরিচয়পত্র বা পাসপোর্টের ফটোকপি, জমির দলিল বা লিজের সত্যায়িত ফটোকপি, ১০ তলার বেশি হলে অগ্নিনির্বাপণ সনদ, সিটি কর্পোরেশন, পৌরসভার মধ্যে হলে ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদনের ফটোকপি ও দুই কিলোওয়াটের বেশি গ্রাহকের বিদ্যুৎ লোড হলে সৌর প্যানেল স্থাপনের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। কারো ভবন নির্মাণের বৈধ কর্তৃপক্ষের অনুমোদন না থাকলে অনাপত্তিপত্র দিয়েও বিদ্যুৎ সংযোগ নেয়া যায়। এ ছাড়া বাণিজ্যিক ও শিল্প সংযোগের ক্ষেত্রে আবেদনপত্রের সঙ্গে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র, ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের ছাড়পত্রের কপিও জমা দিতে হয়।
গত ১৩ জুন ২০১৯-২০ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট জাতীয় সংসদে উপস্থাপন করেন অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল। ‘সমৃদ্ধ আগামীর পথযাত্রায় বাংলাদেশ : সময় এখন আমাদের, সময় এখন বাংলাদেশের’ শিরোনামে প্রস্তাবিত বাজেটের আকার ধরা হয়েছে ৫ লাখ ২৩ হাজার ১৯০ কোটি টাকা। দেশের ৪৮ বছরের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় বাজেট এটি। বর্তমানে সংসদে প্রস্তাবিত বাজেটের নানা দিক নিয়ে আলোচনা-পর্যালোচনা চলছে।
প্রস্তাবিত বাজেট পাস হবে আগামী ৩০ জুন। ১ জুলাই থেকে কার্যকর হবে নতুন অর্থবছরের নতুন বাজেট।
Advertisement
এমইউএইচ/এসআর/এমকেএইচ