মাত্র ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকার জন্য ছয় মাসের শিশু আসিফের চোখের অপারেশন করাতে পারছেন না অলিয়ার রহমান নামে দিনমজুর এক বাবা। স্থানীয় হাসপাতালে এ অপারেশনের কোনো যন্ত্রপাতি না থাকায় ডাক্তার পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর শ্যামলী শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে চিকিৎসা নেয়ার। কিন্তু এ হাসপাতালে এসে চিকিৎসা নেয়ার মতো কোনো টাকা নেই অলিয়ার রহমানের।
Advertisement
আরও পড়ুন : মেয়েকে বাঁচাতে মোটরসাইকেলে বেশি ট্রিপ দিচ্ছেন বাবা
তিনি বলেন, এ হাসপাতালে অপারেশনের জন্য কোনো টাকা লাগে না। এখানে বিভিন্ন সরকারি সুযোগ সুবিধা রয়েছে। কিন্তু অপারেশনের আগে কিছু ওষুধ ও পরীক্ষা-নিরীক্ষার জন্য টাকা খরচ হয়। সেই টাকাও নেই আমার কাছে।
অলিয়ার রহমান বলেন, আসিফকে ঢাকায় নিয়ে যাওয়ার মতো গাড়ি ভাড়াও নেই। সেখানে নিয়ে যাওয়ার পর অপারেশনসহ সব কিছু মিলে ২০-২৫ হাজার টাকা প্রয়োজন। এ টাকা জোগাড় হলেই ঢাকার উদ্দেশ্যে রওনা হবো।
Advertisement
তিনি জানান, চোখে ছানি নিয়েই জন্মগ্রহণ করে আসিফ। প্রথম তিন মাসে পরিবারের কেউই বিষয়টি বুঝতে না পারলেও কিছু লক্ষণ দেখে বুঝতে পারেন ডাক্তার। তিন মাস বয়সে জ্বর ও নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়েছিল আসিফ। ওই সময় ঝিনাইদহ শহরের এক ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেলে তিনি আসিফকে একজন চোখের ডাক্তার দেখানোর কথা বলেন।
আরও পড়ুন : উদ্যোগ নিলেই বেঁচে যাবে তাওহিদা
এরপর চলতি বছরের ২০ মে আসিফকে ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়। সেখানকার ডা. আব্দুর রউফ আসিফের চোখে জন্মগত ছানি পড়ার কথা জানান। তখন তিনি ঢাকায় রেফার্ড করেন।
ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালের চিকিৎসক ডা. আব্দুর রউফ জানান, বেসরকারি কোনো ক্লিনিকে জন্মগত ছানি অপারেশন করতে ৫০-৬০ হাজার টাকা খরচ হয়। অথচ সরকারি হাসপাতালে এ চিকিৎসা ফ্রি।
Advertisement
তিনি বলেন, ঝিনাইদহ চক্ষু হাসপাতালে শিশুদের অপারেশন করার মতো কোনো প্রযুক্তি না থাকায় আসিফকে ঝিনাইদহ থেকে রাজধানীর শ্যামলী শেরেবাংলা নগরে অবস্থিত জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে রেফার্ড করা হয়েছে। সেখানে চিকিৎসা নিলেই সুস্থ হয়ে যাবে সে।
আরও পড়ুন : অভাবে ছেলের অপারেশন করাতে পারছেন না সাংবাদিক বাবা
এর আগে গত ২৩ মে আসিফকে নিয়ে তার বাবা অলিয়ার ও মা রত্না রাজধানীর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে আসেন। সেখানে কয়েক দিন ভর্তি থেকে আসিফের বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা করেন। এতে তাদের ৮ হাজার টাকা খরচ হয়। গ্রামের লোকজনের কাছ থেকে ধার করে আনা সেই টাকা আজও পরিশোধ করতে পারেননি তিনি।
অলিয়ার জানান, ঢাকার জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের চিকিৎসকরা যে কোনো রবি ও বুধবার অপারেশনের জন্য আসিফকে নিয়ে যেতে বলেছেন। কিন্তু এক মাস পার হলেও যাওয়া হয়নি।
শিশু আসিফ ঝিনাইদহের কালীগঞ্জ উপজেলার ভাটপাড়া গ্রামের অলিয়ার রহমান ও রত্মা খাতুনের একমাত্র ছেলে। তারা এখন ঝিনাইদহ শহরের পাবহাটী মাঠপাড়ার একটি বস্তিতে থাকেন।
আসিফের বিষয়ে কথা হয় ঝিনাইদহের স্থানীয় সিনিয়র সাংবাদিক আসিফ কাজলের সঙ্গে। তিনি প্রতিনিয়ত অসহায় মানুষের জন্য কাজ করেন। তিনি জাগো নিউজকে বলেন, পরিবারটি খুবই গরিব। এলাকায় কোনো কাজ না থাকায় ৯ মাস হলো তারা গ্রাম ছেড়ে ঝিনাইদহ শহরে এসেছেন। এখানে এসে অলিয়ার দিনমজুরের কাজ করেন। প্রতিদিন কাজও পান না তিনি। খুব কষ্ট করে চলতে হয় তাদের।
তিনি বলেন, আমরা কয়েকজন শিশুটির চিকিৎসার টাকা জোগাড়ের উদ্যোগ নিয়েছিলাম। প্রবাস থেকে একজন দুই হাজার টাকা সহযোগিতাও করেছেন। আর কারও সহযোগিতা পাইনি। কিন্তু সেটা দিয়ে তার পুরো চিকিৎসা হবে না। মূলত তাদের টাকা দরকার ঢাকায় যাওয়া, শিশুটির বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা ও ওষুধ কেনার জন্য। কেউ এ টাকা দিলেই আমরা পরিবারটিকে ঢাকায় পাঠিয়ে দিতে পারবো।
শিশু আসিফের বিষয়ে আরও জানতে কথা বলতে পারবেন তার বাবার ০১৯৯৪-৯৮৬৫১৬ নম্বরে।
এমএএস/এমএস