আওয়ামী লীগ সরকারের টানা তৃতীয় মেয়াদে এসে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর ড. এ কে আবদুল মোমেন সিলেটের রেলপথ উন্নত ও নতুন ট্রেন চালু করতে রেলপথ মন্ত্রণালয়ে দুই দফা ডিও লেটার (আধা-সরকারি পত্র) দেয়ার পরও জরাজীর্ণ সিলেট-ঢাকা ও সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথ উন্নয়নে কোনো উদ্যোগ নেয়া হয়নি। রেলপথ মন্ত্রণালয়ের এ উদাসীনতার কারণে রোববার রাতে সিলেট-ঢাকা রেলপথের বরমচাল রেলসেতু ভেঙে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ট্রেনের কয়েকটি বগি খালে পড়ে চারজন নিহত ও দেড় শতাধিক যাত্রী আহত হন।
Advertisement
এর আগে গত ১৮ জুন সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া এলাকায় শাবাজপুর সেতুর একাংশ ভেঙে পড়ায় এক সপ্তাহ ধরে সিলেটের সঙ্গে সারাদেশের সড়ক যোগাযোগ বন্ধ। এবার রেলের সেতুও ভেঙে পড়ায় রেল ও পরিবহন যোগাযোগের দিকে রাজধানীসহ সারাদেশ থেকে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ল সিলেট। এ নিয়ে সিলেটের রাজনৈতিক, সচেতন নাগরিক ও জনসাধারণের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। এখন সচেতন নাগরিকদের মনে একটাই প্রশ্ন আর কত প্রাণ ঝরলে সিলেটের রেল ও সড়ক যোগাযোগ উন্নত হবে?
জানা গেছে, সিলেটের রেল ও সড়ক যোগাযোগের এই জরাজীর্ণ দশার কারণে পররাষ্ট্র মন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেন দায়িত্ব নেয়ার পর পরই গত ১৮ জানুয়ারি প্রথম সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের এবং রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন বরাবর ডিও লেটার দিয়েছিলেন। এতে তিনি সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের গুরুত্বের কথা উল্লেখ করে ছয় লেনে উন্নীত করা ও সিলেট-ঢাকা এবং সিলেট-চট্টগ্রাম রেলপথের সংস্কার, উন্নয়ন ও নতুন রেল দেয়ার জন্য অনুরোধ করেন। কিন্তু এ নিয়ে কোনো উল্লেখযোগ্য উদ্যোগ দেখা যায়নি।
সর্বশেষ গত ২৩ জুন রেল যোগাযোগের অবস্থা করুণ জানিয়ে দ্বিতীয় দফায় সংশ্লিষ্ট এ দুই মন্ত্রণালয়ে ডিও লেটার দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। এ দিন রাতেই সিলেট রেলপথে ঘটল ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা।
Advertisement
ডিও লেটারে ড. এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, রোববার সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের দৃষ্টি আকর্ষণ করে এ ডিও লেটার পাঠানো হয়।
পত্রে পররাষ্ট্রমন্ত্রী সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের গুরুত্ব উল্লেখ করে বলেন, চা-শিল্পের জন্য বিখ্যাত সিলেট শহরে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে প্রতিদিন ব্যবসায়ী, পর্যটক ও দর্শনার্থীরা আসেন। যার কারণে ঢাকা-সিলেট মহাসড়ক ও রেলপথে প্রচুর যানবাহন চলাচল করে। সম্প্রতি এ মহাসড়কের ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার শাহবাজপুর সেতু ভেঙে গেলে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। বিকল্প পথে সৃষ্টি হয় তীব্র যানজট। এ কারণে যাত্রী ও পণ্য পরিবহনে ব্যাপক ক্ষতি হচ্ছে। পররাষ্ট্রমন্ত্রী ভেঙে যাওয়া এ সেতু মেরামতে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন।
এদিকে ঢাকা-সিলেট রুটে যাত্রী সমস্যা লাঘবে আরও একটি ট্রেন চালু ও রেললাইনের উন্নয়নের জন্য রেলপথ মন্ত্রণালয়কেও একটি ডিও লেটার পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
পত্রে রেলপথ মন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজনের দৃষ্টি আকর্ষণ করে সিলেট-ঢাকা রুটে যাত্রীদের ভোগান্তি কমাতে আরও একটি ট্রেন চালুর অনুরোধ করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
Advertisement
বার বার ডিও লেটার দেয়ার পরও কোনো উদ্যোগ না নেয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি হিরণ মাহমুদ নিপু। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাসে লেখেন, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠনের পর থেকে বাংলাদেশের রেলপথ ও রেলসেবার মানের অভূতপূর্ব উন্নয়ন হয়েছে। বাংলাদেশের জনগণ রেলসেবার এই সুফল ভোগ করলেও সিলেটবাসী অনেকাংশেই এই উন্নত রেলসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
সিলেট-ঢাকা রুটে চলাচলকারী ট্রেনগুলোর নাজুক অবস্থার কথা উল্লেখ করে তিনি উল্লেখ করেন, ঢাকা-সিলেট ও সিলেট-চট্টগ্রাম রুটের ট্রেন পুরনো কোচ বা বগির অবস্থা অত্যন্ত নাজুক। ফলে সিলেটগামী রেলযাত্রীদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে অসন্তোষ বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ও সিলেট চেম্বারের সাবেক প্রশাসক ফারুক মাহমুদ চৌধুরী জাগো নিউজকে বলেন, সিলেট-ঢাকা রেলপথ ডাবল ব্রডগেজ লাইনে উন্নীতকরণ, ঝুঁকিপূর্ণ রেলসেতু নতুন করে নির্মাণ ও এ লাইনে নতুন ট্রেন চালুর দাবি দীর্ঘদিনের। কিন্তু এর উন্নয়নে কোনো কাজের কাজ হচ্ছে না। কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণে আজ অনেকগুলো তাজা প্রাণ ঝরল।
ছামির মাহমুদ/আরএআর/এমকেএইচ