সবচেয়ে নিরাপদ ভ্রমণের মাধ্যম মনে করা হয় ট্রেনকে। তবে কখনো কখনো ট্রেনেও বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে থাকে। লাইনচ্যুত হয়ে বা মুখোমুখি সংঘর্ষে এ ধনের দুর্ঘটনা বেশি ঘটে। তবে এ পর্যন্ত সবচেয়ে ভয়াবহ দুর্ঘটনা ঘটে ভারতে। দেশটিতে একটি দুর্ঘটনায় ৮ শতাধিক যাত্রী মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়। তেমন কিছু ভয়াবহ দুর্ঘটনা নিয়ে আজকের আয়োজন-
Advertisement
হিলি ট্রেন ট্র্যাজেডি: ১৯৯৫ সালের ১৩ জানুয়ারি রাত সোয়া ৯টায় বাংলাদেশের গোয়ালন্দ থেকে পার্বতীপুরগামী ৫১১ নম্বর লোকাল ট্রেনটি হিলি রেলস্টেশনের ১ নম্বর লাইনে এসে দাঁড়ায়। এর কিছুক্ষণ পর সৈয়দপুর থেকে খুলনাগামী ৭৪৮ নম্বর আন্তঃনগর সীমান্ত এক্সপ্রেস ট্রেনটি একই লাইনে ঢুকে পড়ে। এ সময় ভয়াবহ মুখোমুখি সংঘর্ষে গোয়ালন্দ লোকাল ট্রেনের ইঞ্জিনসহ দুটি বগি দুমড়েমুচড়ে আন্তঃনগর ট্রেনের উপর উঠে যায়। এ দুর্ঘটনায় দুটি ট্রেনের অর্ধশতাধিক যাত্রী নিহত হয়। আহত হয় দুই শতাধিক। নিহত অনেকের দেহ ছিন্নভিন্ন হয়ে পড়ে থাকে।
কুলাউড়ায় দুর্ঘটনা: বাংলাদেশের মৌলভীবাজার জেলার কুলাউড়ায় ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে। উপজেলার বরমচাল রেলক্রসিং এলাকায় সিলেট থেকে ঢাকাগামী উপবন এক্সপ্রেসের ৪টি বগি লাইনচ্যুত হয়ে খালে ছিটকে পড়ে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত ৬ জন নিহত হয়। নিহতের মধ্যে ৩ জন নারী ও ৩ জন পুরুষ। ২৩ জুন রাত ১২টার দিকে কুলাউড়ার বরমচাল স্টেশনের পাশে ঢাকাগামী উপবনের বগি ছিটকে পড়ে।
তাইওয়ানে দুর্ঘটনা: তাইওয়ানে ২০১৮ সালের ২১ অক্টোবর ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় কমপক্ষে ২২ জন নিহত হয়, গুরুতর আহত হয় ১৭১। দেশটির উত্তর পূর্বাঞ্চলীয় ইয়েলান অঞ্চলে ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে। ট্রেনটিতে মোট ৩৬৬ জন যাত্রী ছিল। ট্রেনটি লাইনচ্যুত হয়ে একটি পর্যটন এলাকায় ঢুকে যায়। দুর্ঘটনায় ট্রেনের ৪টি বগি উল্টে যায়।
Advertisement
মিশরে দুর্ঘটনা: মিশরের রাজধানী কায়রোর প্রধান ট্রেন স্টেশনে দুর্ঘটনার পর ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে অন্তত ২৫ জন নিহত এবং অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত হন। ট্রেনটি থামার জায়গা অতিক্রম করে ইস্পাতের প্রতিবন্ধকের সঙ্গে ধাক্কা লাগে। এতে বিকট শব্দ করে আগুন ধরে যায়। কালো ধোঁয়ায় ছেয়ে যায় চারিদিক। চলতি বছরের ২৭ ফেব্রুয়ারি ভয়াবহ এ দুর্ঘটনা ঘটে।
ভারতে দশটি দুর্ঘটনা: ১৯৮১ সালের ৬ জুন বিহারের সাহারসায় বাঘমতি নদীতে পড়ে যায় একটি যাত্রীবাহী ট্রেন। এতে মারা যান প্রায় ৮০০ যাত্রী। ১৯৯৫ সালের ২০ আগস্ট উত্তরপ্রদেশের ফিরোজাবাদের কাছে মুখোমুখি সংঘর্ষে উভয় ট্রেনের সাড়ে ৩শ’রও বেশি মানুষ মারা যান। ১৯৯৯ সালের ২ আগস্ট গাইসলে রেলের কাটিহার ডিভিশনে আওয়াদ-আসাম এক্সপ্রেসের সঙ্গে ব্রহ্মপুত্র মেলের সংঘর্ষে ২৬৮ জনের মৃত্যু হয়। ১৯৯৮ সালের ২৬ নভেম্বরে পাঞ্জাবের খান্নায় তিনটি লাইনচ্যুত বগির সঙ্গে সংঘর্ষে ২১২ জন মারা যান। এছাড়া ২০১০ সালে এক ঘটনায় ১৭০ জন, ১৯৬৪ সালে এক ঘটনায় ১৫০ জন, ২০০২ সালে এক ঘটনায় ১৪০ জন, ১৯৫৪ সালে এক ঘটনায় ১৩৯ জন, ১৯৫৭ সালে এক ঘটনায় ১২৫ জন এবং ১৯৩৭ সালে এক ঘটনায় ১২৫ জন মারা যান।
স্পেনে দুর্ঘটনা: উত্তর-পশ্চিম স্পেনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল গালিসিয়ায় ২০১৩ সালে ভয়াবহ ট্রেন দুর্ঘটনায় অন্তত ৭৮ জন নিহত হয়। আহত হন ১৪০ জনেরও বেশি।
ইতালিতে দুর্ঘটনা: ইতালির দক্ষিণাঞ্চলে দুটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী ট্রেনের মুখোমুখি সংঘর্ষে ২৫ জনের মৃত্যু হয়েছে। মর্মান্তিক ওই দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন আরও অন্তত ৫০ জন। ২০১৬ সালের ১২ জুলাই ওই দুর্ঘটনায় তিনটি বগি লাইনচ্যুত হয়ে ছিটকে পড়ে। পুগলিয়া অঞ্চলের কোরাটো এবং আন্দ্রিয়া দুই ছোট শহরকে সংযোগকারী একই লাইনে ট্রেন দুটি চলার ফলে মুখোমুখি সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
Advertisement
এসইউ/পিআর