গর্ডন গ্রিনিজ এখন কোথায়? কে জানে ইংল্যান্ডে (বছরে কিছু সময় এখানেই কাটে) নাকি ওয়েস্ট ইন্ডিজে? যেখানেই থাকুন না কেন, সাউদাম্পটনের রোজ বোলে পা রেখে আপনার ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ সময়ের এক নম্বর ওপেনার আর বাংলাদেশের সাবেক কোচ গর্ডন গ্রিনিজের কথা মনে পড়বেই।
Advertisement
২৪ জুন বিশ্বকাপে নিজেদের সাত নম্বর ম্যাচে টাইগারদের, প্রতিপক্ষ আফগানিস্তান। ভাবছেন এ ম্যাচের আগে গর্ডন গ্রিনিজের কথা মনে পড়ার কী আছে? নিশ্চয়ই তাই ভাবছেন?
আরেহ, আছে আছে। গর্ডন গ্রিনিজের কথা মনে হবার কারণ আছে যথেষ্ঠই। সোমবার বাংলাদেশ সাউদাম্পটনের যে রোজ বোল মাঠে নামবে, সেই মাঠটি যে কাউন্টি ক্লাবে সেই হ্যাম্পশায়ার যে গর্ডন গ্রিনিজেরও ক্লাব।
বলার অপেক্ষা রাখে না, এই গর্ডন গ্রিনিজের হাত ধরে আইসিসি ট্রফির গন্ডি পেরিয়ে বিশ্বকাপের ছাড়পত্র পেয়েছিল বাংলাদেশ। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশ যখন প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যুক্তরাজ্য এসেছিল, তখনো যে এ ক্যারিবীয়ান লিজেন্ডই ছিলেন বাংলাদেশের কোচ।
Advertisement
তবে শেষ করে যেতে পারেননি। পাকিস্তানের সঙ্গে শেষ ম্যাচের দিনই তাকে পদচ্যুত করা হয়। ঘুরিয়ে বললে অব্যাহতি দেয়া হয়। তারপর থেকে গর্ডন গ্রিনিজ হয়ে গেছেন বাংলাদেশের সাবেক কোচ।
সোমবার যে মাঠে বাংলাদেশ মুখোমুখি হবে আফগানিস্তানের, সেই সাউদাম্পটনের রোজ বোল স্টেডিয়াম হচ্ছে কাউন্টির অভিজাত ও ঐতিহ্যবাহি ক্লাব ‘হ্যাম্পশায়ারে’র। এ মাঠে কত দিন, কত বেলা যে কেটেছে গর্ডনের।
এই হ্যাম্পশায়ারের হয়ে দীর্ঘ দিন, বলা যায় ক্যারিয়ারের প্রায় মূল অংশই ইংলিশ কাউন্টি খেলেছেন গর্ডন। সময়কাল ছিল ১৯৭০ সাল থেকে ১৯৮৭ । দিনক্ষণের হিসেবে গর্ডনের কাউন্টি খেলোয়াড়ি জীবনের প্রায় দেড়যুগ কেটেছে এই হ্যাম্পশায়ারে।
কাজেই এই হ্যাম্পশায়ারের মাঠ যে গর্ডনেরও নিজের মাঠ। এটাই শেষ নয়। এখন যিনি বাংলাদেশের ব্যাটিং কোচ, সেই দক্ষিণ আফ্রিকান নেইল ম্যাকেঞ্জিরও স্মৃতি ঘেরা এই হ্যাম্পশায়ার। এই ক্লাবের হয়ে ম্যাকেঞ্জিও দুই বছর (২০১০-২০১২) কাউন্টি খেলেছেন।
Advertisement
বাংলাদেশের সাবেক বোলিং কোচ জিম্বাবুয়ের সাবেক অধিনায়ক হিথ স্ট্রিকের সঙ্গেও হ্যাস্পশায়ার জড়িয়ে আছে। কারণ হিথ স্ট্রিকও হ্যাম্পশায়ারের হয়ে ১৯৯৫ সালে কাউন্টি খেলেছেন। এর বাইরে হ্যাম্পশায়ারের সাথে জড়িয়ে আছে এমন কিছু নাম, যারা আসলে ক্রিকেটের আকাশে অনেক বড় তারা।
সেসব বিশ্ব তারকার তালিকা লিখে শেষ করা কঠিন। দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটের সব সময়ের অন্যতম সেরা ওপেনার ব্যারি রিচার্ডস সেই ৬০ দশকের শেষ ভাগ থেকে ৭০ দশকের মাঝামাঝি সময় পর্যন্ত ১০ বছর হ্যাম্পশায়ারের ক্রিকেটার ছিলেন। এছাড়া ওয়েস্ট ইন্ডিজের স্বর্ণ সময়ের দুই দুর্ধর্ষ ফাস্ট বোলার অ্যান্ডি রবাটর্স (১৯৭৩-১৯৭৮) আর ম্যালকম মার্শালও (১৯৭৯-১৯৯৩) গর্ডন গ্রিনিজের সঙ্গে ৭০ দশকের প্রায় পুরো সময় হ্যাম্পশায়ারের হয়ে খেলে গেছেন।
ইংল্যান্ডের ক্রিকেট ইতিহাসের সব সময়ের অন্যতম অভিজাত ও স্টাইলিশ ব্যাটসম্যান, সাবেক অধিনায়ক ডেভিড গাওয়ারও এই ক্লাবের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। ডেভিড গাওয়ার (১৯৮০-১৯৯৩) প্রায় এক যুগ হ্যাম্পশায়ারের হয়ে কাউন্টি খেলেছেন।
হ্যাম্পশায়ারের সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত আরও কিছু বিশ্বমানের ক্রিকেটার আছেন। যাদের মধ্যে দুটি নাম সবার আগে চলে আসবে। একজন ওয়াসিম আকরাম (২০০৩) আর একজন শেন ওয়ার্ন (২০০০-২০০৭)। এছাড়া সাবেক অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক, ওপেনার ম্যাথিউ হেইডেন ১৯৯৭ সালে এক বছর খেলেছেন।
এর বাইরে পাকিস্তানের আব্দুর রাজ্জাক (২০১০) শহীদ আফ্রিদি (২০১১, ২০১৬, ২০১৭) সোহেল তানভির, শ্রীলঙ্কার চামিন্দা ভাস, রঙ্গনা হেরাথ এবং ভারতের অজিঙ্কা রাহানে (২০১৯) সহ অনেকেই খেলেছেন এই হ্যাম্পশায়ারের হয়ে।
সবচেয়ে উল্লেখ করার মত ব্যাপার হলো বাংলাদেশ দলের প্রতিপক্ষ আফগানিস্তানের অফস্পিনার মুজিব উর রহমানও কিন্তু এই হ্যাম্পশায়ারের হয়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে।
ওপরে অনেক ক্রিকেটারের নাম বলা হলো। এদের অনেকেরই ছবি টাঙানো আছে পুরো রোজ বোল স্টেডিয়ামের কোথাও না কোথাও? তবে একজনের ছবি না থাকলেও নামটা এমন এক জায়গায় বাঁধানো আছে যে, আপনি দেখতে না চাইলেও দেখবেন। চোখ যাবেই।
তিনি আর কেউ নন অস্ট্রেলিয়া তথা বিশ্ব ক্রিকেটের সব সময়ের সেরা লেগস্পিনার শেন ওয়ার্ন। ঢুকতেই গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডে নাম খোদাই করা শেন ওয়ার্নের। মূল গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডটাই শেন ওয়ার্নের নামে।
রোববার সকালে বাংলাদেশের প্র্যাকটিস কভার করতে গিয়ে রোজ বোলের গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডে ঢুকতেই চোখে পড়লো, এক জায়গায় সাদা নিয়ন সাইনে নীল হরফে লিখা ‘ওয়েলকাম টু দ্যা শেন ওয়ার্ন স্ট্যান্ড’- এভাবেই একজন ভীনদেশি ক্রিকেটারকে মূল্যায়িত করে ইংলিশরা।
কারণ একটাই ইংলিশ কাউন্টি ক্রিকেট। এখানের প্রতিটি মাঠ আসলে কোন না কোন কাউন্টি দলের। সাউদাম্পটনের ‘রোজ বোল’ এ মুহুর্তে সৌন্দর্যের দিক থেকে হয়ত যুক্তরাজ্যের অন্যতম সুন্দর ভেন্যু। যার সঙ্গে বাংলাদেশের সিলেট স্টেডিয়ামের অনেক মিল।
আশপাশে কিছু টিলার মত। চারিদিকে সবুজের সমারোহ। গাছপালায় ভরা। বিশেষ করে গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডের পেছনে একদম ঘন সবুজ গাছ গাছালি। ঢোকার পথটাই অনেকটা সিলেট স্টেডিয়ামের ‘লাক্কাতুরা’ টি স্টেটের মত।
তবে পার্থক্য একটাই সিলেট স্টেডিয়ামের এক দিকে সবুজ টিলার মত করে দেয়া আছে । যেখানে বসে, শুয়ে খেলা দেখা যায়। রোজ বোলে তা নেই। তবে প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ঘেরা রোজ বোল সত্যিই সুন্দর, মোহনীয়।
নয়নাভিরাম প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ছাড়াও এই স্টেডিয়ামের আরও একটি বড় বৈশিষ্ঠ্য আছে। তা হলো, স্টেডিয়াম লাগানোই পাঁচ তারকা হোটেল। যা নেই পৃথিবীর আর কোন স্টেডিয়ামে। একদম স্টেডিয়ামের উত্তর দিকে মিডিয়া সেন্টার আর প্রেসবক্স পুরোটাই পাঁচ তারকা হোটেল ‘হিলটনের’ ভিতরে।
অন্য সব স্টেডিয়ামের মত এই মাঠেরও প্রেসবক্স গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের বিপরীতে। তবে লর্ডস, ওভাল, সোফিয়া গার্ডেন, সমার সেট কাউন্টি ক্লাব, নটিংহ্যামশায়ারের ট্রেন্টব্রীজ, ওল্ড ট্রাফের্ডের মত রোজ বোলের মিডিয়া সেন্টারও গ্র্যান্ড স্ট্যান্ডের বিপরীতে ঠিক মাঠের উত্তর দিকের সাইট স্ক্রিনের পেছনে। এটা হিলটন হোটেলের আওতাধীন। হিলটনের ভেতর দিয়েই প্রেসবক্সে যেতে হয়।
হঠাৎ করে মাঠে এসে প্রেসবক্স খুঁজে পাওয়া তাই কঠিন। মাঠের পাশে পাঁচ তারকা হোটেল। আর তার তিন তলায় প্রেস বক্স! সেখানে বসে সাংবাদিকদের কাজ করার জায়গা। এ যে ফাইভ স্টার হোটেলে বসে ম্যাচ কভার করার নামান্তর।
এআরবি/এসএএস/পিআর